সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও খাদ্য হিসেবে পোল্ট্রির কদর দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ, গরু-ছাগলের লাল মাংসে ক্যালরি ও চর্বির মাত্রা বেশি। তাছাড়া পোল্ট্রির চেয়ে গরু-ছাগলের মাংসের দামও বেশি হওয়ায় মানুষ খেতে চায় না। ফলে প্রতিদিনই মানুষ পোল্ট্রির প্রতি ঝুঁকছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ক্যালরির পরিমাণ ২৭৫ ও চর্বির পরিমাণ যথাক্রমে ২০ গ্রাম। মুরগিতে ক্যালরির পরিমাণ গড়ে ১৪০ এবং চর্বির পরিমাণ ১২ গ্রাম। সে কারণে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম দামে কম চর্বিযুক্ত সাদা মাংস হিসেবে বেছে নিচ্ছে পোল্ট্রি। চাহিদা বেশি থাকায় দেশে পোল্ট্রি শিল্পের মাধ্যমে ভাগ্য ফিরছে বেকার যুবকদের।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৬৬ সাল থেকে পোল্ট্রি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ধীরে ধীরে সমস্যা কাটিয়ে নীরবে বিপ্লব ঘটেছে পোল্ট্রি শিল্পের। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আড়াই শতাধিক পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠেছে। পোল্ট্রিতে ভাগ্য ফেরা এক যুবকের নাম পেয়ার আহমদ নয়ন। তিনি উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের হাজারিপাড়া গ্রামের মরহুম আবুল কালামের ছেলে। তাঁর রাইসা পোল্ট্রি নামে হাজারিপাড়া ও পাশ্ববর্তী খিল্লাপাড়ায় দুইটি ফার্ম রয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৩ সালে এক লাখ পয়ত্রিশ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে নিজ বাড়ির পাশেই রাইসা পোল্ট্রি নামে খামারে ব্রয়লার মুরগি পালন শুরু করেন। এর সফলতার পর তিনি গত তিন মাস আগে খিল্লাপাড়ায় এন্টিবায়েটিক মুক্ত সোনালী মুরগি পালন শুরু করেন। সোনালী মুরগিতে তিনি বেশি লাভবান হচ্ছেন।
নয়ন আরও বলেন, বয়লার মুরগির বাচ্চা ৬০ টাকায় কিনে কেজি প্রতি ১৩০-১৩৫ টাকা ও সোনালী মুরগি ৩০-৩৫ টাকা দিয়ে কিনে কেজি প্রতি ২২৫-২৩০ টাকা বিক্রি করা যায়। আর সোনালী মুরগি বাজাতকরণের জন্য সময় বেশি পাওয়া যায়। এন্টিবায়েটিক মুক্ত মুরগি পালনে সফল উদ্যোক্তার তালিকায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগে তাঁর নাম রয়েছে। এছাড়া নয়নের পরামর্শে আশ-পাশের বেশ কয়েকটি মুরগির খামার পরিচালনা করেছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। নয়নের মতো উপজেলার বিভিন্নস্থানে আরও অনেকে পোল্ট্রি ফার্ম করে সফলতা অর্জন করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে বা মাঝামাঝি সময়ে অনেকে চাকরি না পেয়ে পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে তুলেছেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রয়লার রেজিষ্ট্রিকৃত ৮২টি এবং রেজিষ্ট্রিবিহীন প্রায় ১২০টি খামার রয়েছে। এছাড়া লেয়ার রেজিষ্ট্রিকৃত ৪৮টি এবং রেজিষ্ট্রিবিহীন ২৩টি রয়েছে। মানুষের আয় বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগামীতে পোল্ট্রির চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পাবে। সেই চাহিদা মেটানোর জন্য পোল্ট্রি উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা দরকার।
কুমিল্লার জেলা পোল্ট্রি খামার এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান মজুমদার বলেন, পোল্ট্রি একটি শক্তিশালী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে বেশী করে সচল রাখতে এ শিল্পের বিকল্প নেই। তবে পোল্ট্রি শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের উচিত হবে দক্ষতার সঙ্গে উৎপাদন পরিচালনা করা। এতে উৎপাদন খরচ কমবে, বাজার স¤প্রসারিত হবে, মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। নতুুবা দেশের গরিব ভোক্তাদের ও ছোট খামারিদের অদক্ষতার মাশুল গুনতে হবে।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাণি সম্পদক কর্মকর্তা আজহার উল আলম বলেন, খামারীরা মুলত এফএইউ এর তত্ত¡াবধানে থাকার কারণে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পাওয়ার কারণে বেশি উদ্বুদ্ধ হয়। তাছাড়া তাদের মুরগিতে কোন এন্টিবায়েটিক না থাকায় প্রতি কেজি মুরগি স্বাভাবিক মুল্যের চাইতে ১০-১৫টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারছে। এই সকল খামারীদের মুল ক্রেতা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট, ঢাকার আগোরা, স্বপ্ন ইত্যাদি সুপার শপসমূহ। এই এন্টিবায়েটিক ফ্রি মুরগি তাদের রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করার পর বাজারজাত করা হয়। যদি কৃষি লোনের মত ২% লোনে তাদের খামারকেত লোন প্রদান করা হলে তারা আরও উন্নতি করতো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন