শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কোটি টাকার ক্ষতি, শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

পটিয়ায় অজ্ঞাত রোগে মুরগির মড়ক

পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে এস.কে.এম. নূর হোসেন | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৯ এএম

পোল্ট্রি শিল্প দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জনে একটা সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু অজ্ঞাত রোগে মুরগীর মড়কের কারণে এ শিল্পের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পটিয়ায় প্রায় সময় অজ্ঞাত রোগে মুরগী মারা যায়। এতে খামারী মালিকেরা লোকসানের শিকার। পটিয়ায় গত ফেব্রুয়ারী মাসে ২০ জন পোল্ট্রি খামারীর প্রায় ৩০ হাজার মুরগী মারা যাওয়ার ফলে এখানে পোল্ট্রি শিল্পে ধস নেমেছে। বিশেষ করে পটিয়া উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নে গত ১২ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারী ৪দিনের মধ্যে ৮জন খামারীর প্রায় ২২ লক্ষ টাকার মূল্যের ১৬ হাজার মুরগী মারা গেছে। এছাড়াও পটিয়ার কুসুমপুরা, কেলিশহর, ধলঘাট, খরনা, কচুয়াই, দক্ষিণভূর্ষি এলাকায় বিভিন্ন খামারে আরো ১৫ হাজার মুরগী মারা গেছে বলে জানা গেছে।
সরোজমিনে আশিয়া এলাকায় গিয়ে জানা যায়, মুরগীর হঠাৎ অজ্ঞাত রোগে মড়কের ফলে আশিয়ার খামারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখানে অধিকাংশ রয়েছে ক্ষুদ্র খামারী। গত ফেব্রুয়ারী মাসে যেসব খামারে মুরগী মারা যায় তাদের মধ্যে খামারী এরশাদের ৪লাখ ৮৩হাজার টাকার ৪ হাজার ২শ মুরগী, আলী আকবরের ১লাখ ৯৮ হাজার টাকার ১৪শ মুরগী, মোস্তফা আলীর ১লাখ ৫৮ হাজার টাকার ৭শ মুরগী, খোকনের ১লাখ ৩৮ হাজার টাকার ১২শ মুরগী, কামালের ৮৪ হাজার টাকার ৭শ মুরগী, ফারুকের ৭৮ হাজার টাকার ৯শ মুরগী, সোহেলের ১লাখ ৮হাজার টাকার ১৪শ মুরগী, জিয়াউর রহমানের ২লাখ ৮৫ হাজার টাকার ১৮শ মুরগী, কিবরিয়ার ১লাখ ৩২ টাকার ১হাজার মুরগী, জাবেদের ৭০হাজার টাকা ৭শ লেয়ার মুরগী, বিটুর ৩লাখ ৮০হাজার টাকার ১৫শ সোনালী মুরগী রয়েছে। এখামারীরা এখন সর্বশান্ত। তাদের মুরগীর শেডে এখন মুরগী নেই।
ফার্ম মালিক আলী আকবর জানান, মুরগীগুলো প্রথমে শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে একদিনের মধ্যে মারা যায়। খামারী মোস্তফা আলী জানায়, এসব মুরগী কি রোগে মারা যায়, পশু চিকিৎসকেরা তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। তবে স্থানীয় তারেক ও আশরাফ নামের দুজন পশু চিকিৎসক তাদের খামারে মুরগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকে। রানীক্ষেত রোগে এসব মুরগী মারা যায় বলে পশু চিকিৎসকেরা জানিয়েছে।
খামারী মোস্তফা জানান, রানীক্ষেত ও গামবুরা ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগের জন্য মুরগীর বাচ্চাকে ১৫ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। তিনি আরো জানান মাইক্রোগ্রুসমা ও ব্রনকাইটিস রোগেও মুরগীর মড়ক দেখা দিতে পারে। ফার্ম মালিকদের অভিযোগ সম্প্রতি আশিয়ার বিভিন্ন ফার্মে ব্যাপকহারে মুরগী মারা যাওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লেও পটিয়া উপজেলার প্রাণী বিভাগের কোনে লোকজন ঘটনাস্থলে যায়নি। এমনকি মুরগীর মৃত্যুর সর্ম্পকে কোনো ধারনা দেন নি। আশিয়ার ফার্ম মালিকেরা জানান তাদের অধিকাংশ খামারী এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মুরগীর খামারে বাচ্চা তুলেছে। বিক্রয়ের সময়ে তাদের মুরগী গুলো মারা গেছে। এসব খামারীরা এখন লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারছেনা। ঋণের ঘানি টানতে হচ্ছে। পটিয়ার ১৭ ইউনিয়নে প্রায় ১২০টি মুরগীর ফার্ম রয়েছে। এ ফার্ম গুলোতে প্রতিবছর প্রায় ৫০কোটি টাকার মুরগী উৎপাদন হয়। ফার্ম মালিকেরা জানান, সরকারীভাবে খামারীদের কোনো সাহায্য সহযোগীতা করা হয়না। এমনকি সরকারী প্রাণী বিভাগের চিকিৎসকগণ তাদের খোঁজ খবর রাখেন না। রোগের সঠিক প্রতিষেধক দেন না। মুরগীর মড়কের কারণে বারবার লোকসান দিতে গিয়ে খামারীরা দেউলীয়া হয়ে যাচ্ছে। খামারীরা দিনদিন পোল্ট্রি শিল্পের প্রতি আগ্রহী হারিয়ে ফেলছে।
ফার্ম মালিক ও খামারী মোস্তফা আলী জানান পোল্ট্রি শিল্পের লোকসান পুষিয়ে তার পরিধি বাড়াতে হলে সরকারী পৃষ্ট পোষকতার প্রয়োজন রয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সুব্রত সরকার থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমে আশিয়া এলাকায় মুরগীর মৃত্যু সংবাদটি তাকে কেউ জানায়নি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে তিনি এলাকায় গিয়ে কয়েকজন খামারীর সাথে কথা বলেছেন। তিনি আরো জানান শীতের শেষে মৌসুমী আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মুরগীর রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস রোগ হয়ে থাকে। ফলে মুরগী মারা যায়। তিনি বর্তমানে খামারীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন