শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সরকার ধান সংগ্রহ করলেও কৃষকের হাহাকার আর লোকসান কমছে না

মুরশাদ সুবহানী, পাবনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ৪:৪৬ পিএম

কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ভঙ্গ , মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে। বোর ধানের বাজার দর কম হওয়ায় কৃষকরা সোনালী সপ্নের বদলে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন । কোনো কোনো প্রান্তিক কৃষক এনজিও ,দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে কর্জ নিয়ে বোর আবাদ করে ছিলেন। ধানের মূল্য না পাওয়ায় এই ঋণ পরিশোধ দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতির বড় চালিকা শক্তি কৃষি। ধান এর মধ্যে অন্যতম।
সেই ধানের দরপতন হলে অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে আসে আর কৃষক ধানের মূল্য না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।পাবনাসহ উত্তরের শুধু নয় বলতে গেলে সারা দেশেই হঠাৎ করে ধানের দরপতন ঘটেছে।
প্রতি ধান মওসুমে এক শ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ধানের বাজার মূল্য কমিয়ে দেন। টেকনোলজির যুগে কৃষক কোন হাট-বাজারে বেশী মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন না। ফরিয়া মধ্যসত্বভোগীরা সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া দামে ধান ক্রয় করে । তবে,
কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মিল মালিকরা কম মূল্যে চাউল বিক্রি করেন না। চাউল কিনতে ক্রেতা সাধারণ বিশেষ করে মধ্যম আয়ের মানুষজনের উপর চাপ পড়ে। কৃষক লোকসান গোনেন আর মুনাফালোভীরা অধিক মুনাফা লুটে নেন। পাবনায় ধান কর্তন ও মাড়াই শেষ পর্যায়ে। মাঠে এখনও পাকা সোনালী শিষের ধান রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এই ধান কর্তন শেষ হবে।
সরকারিভাবে পাবনায় ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পাবনা সদর উপজেলার নুরপুর খাদ্য গুদামে অভ্যন্তরীণ ধান সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করেন, পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স । এ সময় পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোশাররফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন, সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণক কর্মকর্তা আলাউল কবির, নুরপুর এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
বক্তারা বলেন, প্রকৃত কার্ডধারী কৃষকরা যাতে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারে, কোনো ব্যবসায়ী যাতে সুযোগ না পায় সেদিকে নজরদারি রাখা হবে। প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে ক্রয় করা হচ্ছে। এক মণ ধানে ১০৪০ টাকা মূল্য আসছে যা হাট বাজারের মূল্যের চেয়ে বেশী।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এক সপ্তাহে ৫২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। এই সংগ্রহ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জানান, উপজেলা পর্যায় এবং জেলা কৃষি দপ্তর থেকে প্রকৃত কৃষকের তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি। প্রকৃত কার্ডধারী কৃষকের ধান পাওয়া গেলে তা অবশ্যই সংগ্রহ করা হবে । পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর’র উপ-পরিচালক আজহার আলী জানান, পাবনায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোর ধান আবাদ ও বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে ১৯ শত ২৬ হাজার মেট্রিক টন, চাউল সংগ্রহ করা হবে মিলারদের কাছ থেকে ৩০ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন আর আপদকালীন চাউল সংগ্রহ করা হবে ৬৮৬ মেট্রিক টন। ধানের মূল্য প্রতি কেজি ২৬ টাকা আর চাউল প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ধার্য করা হয়েছে। তিনি আরও জানান , এ পর্যন্ত ২০ হাজার কৃষকের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। আরও ২০ হাজার কৃষকের তালিকা প্রদান করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অপর সূত্র জানান, সব জেলাতেই কম বেশী একই রকম সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাবনা জেলার হিসাব অনুসারে দেখা যায় সরকারিভাবে ১৯ শত ২৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২ লাখ মেট্রিক ২০ হাজার মেট্রিক টন ধানের মধ্যে । আর ধানের সিংহ ভাগ কৃষককে হাট বাজারেই বিক্রি করতে হচ্ছে। গোডাইনের ধারণ ক্ষমতা বেশী না থাকায় সরকার সব ধান ক্রয় করতে পারে না, আবার সরকার নিজেও ব্যবসা করবে না, ফলে বাজারে ধান-চাল বিক্রি করতেই হয়; আর সেখানে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষককে লোকসান দিতে হচ্ছে। সরকারিভাবে যারা ধান দিতে পারছেন, তাঁরা লাভের মুখ দেখলেও
হাট-বাজারে মোটা জাতের বোর ধান ৫শত টাকা আর চিকন বোর ধান ৬ থেকে ৬৫০ টাকা দরে কেনা বেঁচা হচ্ছে। কৃষক সাদেক আলী, রমজান প্রামানিক, আ: আলিম’র সাথে আমারা কথা বলেছিলাম, তারা জানান,
ধানের ফলন আল্লাহ’র রহমতে ভাল হয়েছে তবে বাজারে দাম নেই। ৫/৬শত টাকা মনে ধান বিক্রি করে গড়ে ২শত টাকা লোকসান যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিকের মজুরী বেড়েছে। প্রতিদিন দিতে হয়েছে ৭ শত টাকা। এরপরও শ্রমিক পাওয়া যায় না। অটো ইজি বাইক , অটো (ব্যাটারী চালিত) রিকশা চালাচ্ছে তাঁরা । রোদে পুড়ে মাঠে কাজ করতে চায় না। পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শিবলী সাদিকের নেতৃত্বে কৃষি শ্রমিকের সংকটে থাকা প্রান্তিক কৃষকের ধান কেটে গোলায় তুলে দিয়েছেন। এতো কিছু করার পরও হাট- বাজারে কৃষক লোকসান ঠেকাতে পারছেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন