সিদ্ধান্ত ছিল চলতি বছর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে সরকার ন্যায্যমূল্যে বোরো ধান সংগ্রহ করবে। এ ঘোষণায় কৃষকের মনে আশার আলো সঞ্চার হয়েছিল। কৃষকরা ভেবেছিলেন সরকারের এই কার্যক্রমে হয়তো তারা লাভবান হবেন। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি হয়েছে জেলা খাদ্যকর্মকর্তার হঠাৎ এক সিদ্ধান্তের কারণে। এদিকে কৃষকরা স্থানীয় বাজারেও ধানের মূল্য কম পাওয়ায় আরো হতাশ হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, বাউফল উপজেলা থেকে ৫০ মেট্টিক টন বোরো ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও আশানুরূপ কমিশন না পাওয়ায় বাউফল উপজেলা থেকে বোরো ধান সংগ্রহ করেনি খাদ্য বিভাগ।
বাউফল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে বাউফল উপজেলায় বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে। আর মোট উৎপাদিত ধানের পরিমান প্রায় সাত হাজার ৬০০ মেট্টিক টন।
উপজেলার একাধিক কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, জমি তৈরি, সার, বীজ, কিটনাশক এবং ধান রোপণ, কাটা এবং পরিবহন খরচসহ একর প্রতি বোরো আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। প্রতি একরে ফলন এসেছে ৬০ মন ধান। সে হিসেব অনুযায়ী মনপ্রতি বোরো ধান আবাদে খরচ পড়েছে ৬৬৭ টাকা। বর্তমানে প্রতিমন ধানের বাজার মূল্য রয়েছে ৭০০ টাকা। কৃষকের প্রতি মনে লাভ হচ্ছে মাত্র ৩৩ টাকা। অপর দিকে, সরকার এ বছর প্রতি কেজি বোরো ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৬ টাকা। যা মণ দ্বারায় এক হাজার ৪০ টাকা।
সরকার নির্ধারিত এই মূল্যে কৃষক পর্যায়ে ধান সংগ্রহ করা হলে লাভের মুখ দেখতে পারত উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাউফল উপজেলা থেকে কোনো বোরো ধান সংগ্রহ করা হয়নি। সরকার কর্তৃক বরাদ্দ অনুযায়ী বাউফল থেকে বোরো ধান সংগ্রহ না করায় ক্ষোভ জানিয়েছে কৃষক এবং কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার নুরাইনপুর এলাকার কৃষক যাদব চন্দ্র মিস্ত্রী বলেন, আমরা জানতাম যে এ বছর বাউফল থেকে সরকারিভাবে বোরো ধান কেনা হবে। আমরা সেই আশাতেই বোরো ধানের আবাদ করি। কিন্তু সরকারিভাবে বোরো ধান না কেনার কারণে আমাকে অনেক টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। প্রায় চার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা এই কৃষক জানান, ভালো ফলন হওয়া সত্তে¡ও দাম না পাওয়ার কারণে সামনের বছর আর বোরো ধানের আবাদ করব না। একই কথা জানান, কৃষক মাহাবুব শরিফ, সাইদুর রহমান, ওয়াজেদ খাঁসহ আরো অনেকে। কৃষকরা অভিযোগ করেন, বাউফল থেকে ধান কিনতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা যে কমিশন আশা করেছিলেন, তা না পাওয়ার কারণেই মূলত বাউফল থেকে ধান ক্রয় করেনি খাদ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. আবদুস সোবাহান বলেন, আমরা বরাদ্দ অনুযায়ী ধান ক্রয় করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাউফল থেকে ধান ক্রয় না করে কলাপাড়া উপজেলা থেকে ওই ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। এটা জেলার সিদ্ধান্তের বিষয়।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পটুয়াখালী জেলার জন্য মোট বরাদ্ধ ছিল ৩০০ মেট্টিক টন। যা পুরো জেলার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এরপরে বাউফলে কোনো রাইস মিল না থাকার কারনে বাউফল থেকে ধান ক্রয় করা হয়নি। বিষয়টি জেলা কমিটির সাথে আলাপ করে করা হয়েছে। এখানে কমিশন নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন