বিশ্বকাপ শুরুর এক মাস আগ থেকে এক তারকা বোলারকে নিয়ে সরগম ক্রিকেটঙ্গন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেটজজ্ঞের জন্য ঘোষিত পাকিস্তান দলে নেই মোহাম্মাদ আমিরের নাম। বলতে গেলে সমালোচনার তোপ সইতে না পেরেই শেষ মুহূর্তে বাঁ-হাতি পেসারকে দলে নেওয়া। সেই আমিরের চওড়া কাঁধে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গতকাল জয়ের ক্ষেত্র রচনা করেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জিততে পারেনি পাকিস্তান। বিশ্বাকাপে সরফরাজ বাহিনী দ্বিতীয় হার বরণ করেছে ৪১ রানে।
টন্টনে বিশ্বকাপের ১৭তম ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা আমিরই। সেক্ষেত্রে ম্লান হয়ে যেত ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। জিততে হলে পাকিস্তানকে করতে হত ৩০৮। ‘রান বন্যার বিশ্বকাপে’ লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যে ছিল বলেই মনে হচ্ছিল। টপ ও মিডিল অর্ডারদের ব্যর্থতায় লেজের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও ২৬ বল বাকি থাকতে ২৬৬ রানে থেমে যায় পাক ইনিংস। এর আগে ফিল্ডিং ব্যর্থতাও হয়ত পুড়াবে পাকিস্তানকে। ভারতের বিপক্ষে হারের পর দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে চার ম্যাচে তৃতীয় জয় তুলে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
পাকিস্তানের শুরুটা নড়বড়ে হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটে দুই ফিফটি জুটিতে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু ২১ থেকে ৩০- এই দশ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে তারা ছিটকে পড়ে। এসময় সেট ব্যাটসম্যান ইমাম-উল হক (৫৩) ও মোহাম্মাদ হাফিজের (৪৬) পর এসেই বিদায় নেন শোয়েব মালিক (০) ও আসিফ আলি (৫)। অষ্টম উইকেটে হাসান আলিকে (১৫ বলে ৩২) নিয়ে ৪০ এবং অষ্টম উইকেটে ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে ৬৪ রানের জুটিতে জয়ের ক্ষীণ সম্ভবনা তৈরি করেন সরফরাজ (৪০)। ওয়াহাবের (৩৯ বলে ৪৫) বিদায়ে সেই সম্ভবনা শেষ হয়ে যায়। শেষ ৩ উইকেটে পাকিস্তান যোগ করতে পারে ২ রান। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে টপ অর্ডারে সবচেয়ে বড় আঘাত হানেন প্যাট কামিন্স, ২টি করে নেন মিচেল স্টার্ক ও কেন রিচার্ডসন।
এখনো অনেক পথ বাকি। পাকিস্তান সবে খেলেছে তাদের চতুর্থ ম্যাচ। জয় একটিতে। একটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বৃষ্টি। সেমিফাইনালের টিকিট পেতে এখনো পাঁচ ম্যাচ তাদের হাতে। এজন্য আমিরের কাছ থেকে দলের যে প্রত্যাশা তার পুরোটাই দিয়ে চলেছেন এই গতির পেসার। গতকাল ওয়ার্নারের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে সাড়ে তিনশ-চারশ রানের আভাস দিয়েও অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস যে ৩০৭ রানে গুটিয়ে গেল তা তো আমিরের কল্যাণেই। অন্য বোলাররা যেখানে খরুচে বোলিংয়ে অজি ব্যাটসম্যানদের সামনে টিকতে পারেননি সেখানে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে একাই পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন আমির। দুর্দান্ত লাইন লেন্থ, সুইং আর ভয়ঙ্কর ইয়োর্কার-বাউন্সারের যেন পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ২৭ বছর বয়সী পেসার।
বাংলাদেশের মত পাকিস্তানও বৃষ্টির বাধায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে পারিনি। তার আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ রানের জয়ে আমির নিয়েছিলেন দুই উইকেট। এর মধ্যে একটি উইকেট ছিল সম্ভবত পুরো টুর্নামেন্টের মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান। সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে রূদ্রমূর্তিতে থাকা জস বাটলারকে ফিরিয়ে আমিরই পাকিস্তানে জয়ের পথ সুগম করে দিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে নিজেদের রেকর্ড ব্যবধানের পরাজয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তানও দুর্দান্ত জয়ে ফিরে পায় আত্মবিশ্বাস। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সেই ম্যাচেও দলের নেয়া তিন উইকেটের সবকটিই ছিল আমিরের শিকার। সব মিলে তিন ম্যাচে আমিরের শিকার ১৪ দশমিক ৭৫ গড়ে ১০ উইকেট। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলারদের তালিকার শীর্ষে যে নামটি জ্জ্বলজ্জ্বল করছে সেই নামটিও আমিরের।
ভেন্যুর নাম টন্টন হওয়াতে এমন কিছুর আভাস মিলেছিল আগেই। এই কুপার অ্যাসোসিয়েট কাউন্টি গ্রাউন্ডেই তিন বছর আগে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরেছিলেন আমির।
অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে যখন ১৭ ওভার বাকি তখনই তাদের সংগ্রহে জমা পড়ে ২ উইকেটে ২১৮। এই অবস্থা থেকে ৬ বল বাকি থাকতে তাদের গুটিয়ে যাওয়ার পিছনে অবদান আছে অন্য পেসারদেরও। যে কারণে ২৮ ওভারে শেষ ১০ উইকেটে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা করতে পারে ১৬১ রান। শেষ পাঁচ উইকেট থেকে আসে মাত্র ১৯।
ফিঞ্চ-ওয়ার্নার জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ছিল উড়ন্ত। ২৩তম ওভারে ফিঞ্চকে ক্যাচে পরিনত করে ১৪৬ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন করেন আমির। অজি অধিনায়ক ২৬ ও ৪৪ রানে জীবন পেয়ে ৮৪ বলে ছয়টি চার ও চারটি ছক্কায় করেন ৮২ রান। এরপর আর তেমন জুটি গড়তে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। আগের ম্যাচে নিজের মন্থরতম ফিফটি করা ওয়ার্নার এদিন ওয়ানডেতে ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায়। তার ১১১ বলে ১০৭ রানের ইনিংসে ছিল ১১ চার ও একটি ছক্কার মার। ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট পাওয়া আমিরের বোলিং ফিগার ১০-২-৩০-৫।
অস্ট্রেলিয়া : ৪৯ ওভারে ৩০৭ (ফিঞ্চ ৮২, ওয়ার্নার ১০৭, স্মিথ ১০, ম্যাক্সওয়েল ২০, মার্শ ২৩, খাজা ১৮, কেরি ২০; আমির ৫/৩০, আফ্রিদি ২/৭০, হাসান ১/৬৭, ওয়াহাব ১/৪৪, হাফিজ ১/৬০)।
পাকিস্তান : ৪৫.৪ ওভারে ২৬৬ (ইমাম ৫৩, বাবর ৩০, হাফিজ ৪৬, সরফরাজ ৪০, হাসান ৩২, ওয়াহাব ৪৫; কামিন্স ৩/৩৩, স্টার্ক ২/৪৩, রিচার্ডসন ২/৬২, কোল্টার-নাইল ১/৫৩, ফিঞ্চ ১/১৩)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৪১ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : ডেভিড ওয়ার্নার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন