শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

কার্ডিফের স্মৃতি ফিরবে নটিংহ্যামে?

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

১৬ জুন ২০০৫। ওয়েলসের কার্ডিফ, সোফিয়া গার্ডেন্স। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি নবীন এক বাংলাদেশ। একদিকে গিলক্রিস্ট, হেইডেন, পন্টিং, গিলেস্পি, ম্যাকগ্রাদের মতো ডাকাবুকোদের মেলা, অন্যপ্রান্তের নামগুলো বিশ্ব ক্রিকেটের বড্ড অচেনা- বাশার, রফিক, শান্ত, খালেদ, আশরাফুল, মাশরাফিরা। ব্যাটে-বলে বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করে বেড়ানো সেই অজিদেরই আশরাফুলের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল নবজাতক বাংলাদেশ!

এক যুগ পেরিয়ে ফের দুয়ারে সেই জুন মাস। ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখাটা চার দিন পিছিয়ে ২০। সাল ২০১৯। আসর বিশ্বকাপ। কন্ডিশনও সেই এক, ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম, ট্রেন্ট ব্রিজ। মুখোমুখি আবারও সেই দু’দল। সেদিন প্রথম ওভারেই বোলারদের বুকে কাঁপন তুলে দেয়া গিলক্রিস্টকে শূণ্যরানে ফেরানো মাশরাফি ছাড়া দু’দলের মিল নেই কোথাও। এই এক যুগে অনেকটা এগিয়েছে বাংলাদেশ, বড় নাম হয়ে পৌঁছে গেছে প্রতিযোগীতার দুয়ারে। এর পরেও দুটি বৈশ্বিক আসরে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। তবে দু’বারই উত্তেজনায় পানি ঢেলে দিয়েছে বেরসিক বৃষ্টি। ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে আজও চোখ রাঙাচ্ছে ঘন কালো মেঘ। কাকতাল নয় কী?

ঘটনাচক্র গত চার বছরের। প্রথমবারের ঘটনা, ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে। বিশ্বকাপের ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিতক্ত হয়েছে। ওই ম্যাচে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। এমনটি টস পর্যন্ত হয়নি। আর সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই ইংল্যান্ডেই অনুষ্ঠিত হওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ আসরে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ অর্ধেক হওয়ার পর বৃষ্টির হানায় বাতিল ঘোষণা করতে হয়েছে।

এর মধ্যে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ ছিল হারের পথে। স্কোর লাইন বা খেলার চালচিত্র এমন ছিল যে, ম্যাচ পুরো হলে অনিবার্য্য হারের সম্ভাবনা ছিল টাইগারদের। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দুই অসি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক (৪/২৯) আর লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার (২/১৩) সাঁড়াশি বোলিং আক্রমণে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৮২ রানে। তামিম ইকবাল একাই যা করার করেছিলেন ওই ম্যাচে। এ বাঁ-হাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছিল ১১৪ বলে ৯৫ রানের দারুণ সাহসী এক ইনিংস। ১৮৩ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াও এগোচ্ছিল ভালই। ১৬ ওভারে এক উইকেটে ৮৩ রান করার পরই বৃষ্টির হানা। অজি ইনিংস অন্তত ২০ ওভার হলেও হয়ত ডি/এল মেথডে ফলাফল নিষ্পত্তি হতো। কিন্তু তা না হওয়ায় ম্যাচ বাতিল হয়ে গেছে।

বৃষ্টির ছোঁয়া পাওয়া ঐ এক পয়েন্টেই সেমিফাইনাল খেলার পথ সুগম করে দিয়েছল বাংলাদেশকে। শুরুতে ইংল্যান্ডের কাছে হার। তারপর মাঝে অজিদের কাছ থেকে বৃষ্টির সাহায্য নিয়ে এক পয়েন্ট পাওয়া। আর সবশেষে কিউইদের বিপক্ষে সেই দাপুটে জয়। সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবিস্মরণীয় জোড়া শতকে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত কোন বিশ্ব আসরের সেমিতে পৌঁছে যায়।
দুই বছর পর সেই ইংল্যান্ডের মাটিতে আবার অস্ট্রেলিয়ার সামনে বাংলাদেশ। এবার বিশ্বকাপের আসর। আবারও সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা আছে মাশরাফি বাহিনীর সামনে। এখন অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলেই সে সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল হয়ে যাবে বাংলাদেশের। অসম্ভবও নয়। বাংলাদেশ এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সে সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছে। তবে মাশরাফির দল এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচে যদি বৃষ্টির সাহায্য নিয়ে এক পয়েন্টও পায়, সেটা হবে আশির্বাদ। অনেক বড় পাওয়া।
মনের গভীরেও এক রাশ কালো মেঘ নিয়ে ব্রিস্টল থেকে টন্টনে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বাড়তি মাথার উপর ছিল পাহাড়সম চাপ। সে চাপ ডিঙিয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে জেতার পর বেঁচেছে সেমিফাইনালের আশা। সেই পথে সামনে এবার অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেওয়ার সাহস নিয়ে, ফুরফুরে মেজাজে টন্টন থেকে নটিংহ্যামে পৌঁছেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

গতপরশু সকাল ১১টায় টন্টন থেকে নতুন স্বপ্ন নিয়ে নটিংহ্যামে বাংলাদেশ। নটিংহ্যামে র্পৌছে পার্ক প্লাজা হোটেলে উঠেছেন ক্রিকেটাররা। আজ এখানকার নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নামবে টেবিলের পাঁচে থাকা বাংলাদেশ।

গত কয়েক মাসে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে নয়বারের দেখায় সাতবারই জিতেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের পক্ষেই পাল্লা ছিল ভারী। তবে সেমিফাইনালের পথ হিসেবে অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াই হওয়ায়, চ্যালেঞ্জটা ছিল কঠিন। দু’দিন আগেই সেই চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ যেভাবে জিতেছে, তাতেই ছড়িয়েছে নতুন বার্তা। রেকর্ড ৩২২ রানের লক্ষ্যে সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি আর লিটন দাসের তান্ডবে ৫১ বল হাতে রেখেই জিতে যায় বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ান পেসারদের পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা আরও দুর্ধর্ষ। গতি আর প্রখর বুদ্ধিতে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন তারা। আর তাতেই মেলে মুক্তি। বাউন্সার আর শর্ট বলের ঘাটতি পুষিয়ে উঠা এক টগবগে যুবকের লড়াই দেখেছে বিশ্ব। এবার কার্ডিফের সেই স্মুতি ফিরিয়ে নতুন ইতিহাস লেখার অপেক্ষায় মাশরাফির দল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন