বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দুর্যোগের ঝুঁকিতে তিন লাখ মানুষ

উপকুলীয় অঞ্চলে পরিকল্পনা মাফিক বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

 জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সমুদ্র উপক‚লীয় অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বতমানে কয়রা এলাকায় অতি মাত্রায় নদী ভাঙন দেখা দেওয়ায় চরম উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে জনগণ। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছাসে সুন্দরবন উপক‚লীয় জনপদগুলো লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে একদিকে যেমন সমুদ্র পৃষ্টের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে সমুদ্রের পানি উপক‚লীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। যে কারনে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপক‚লীয় কয়রাসহ এ সকল এলাকার লাখ লাখ মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে।

সূত্রমতে, ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপক‚লে প্রলংকরী সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল খুলনা চট্রগ্রাম কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরনকালের ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী ও খুলনা উপকুলে সিডরের তান্ডব এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে খুলনা, সাতক্ষীরা উপক‚লে আইলার ভয়াবহ জলোচ্ছাসে গোটা উপক‚লীয় এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। এর সাথে নতুন মাত্রায় নদী ভাঙন যোগ হয়ে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কয়রা, দাকোপ, আশাশুনি ও শ্যামনগর এলাকায় প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। উপর্যুপরি নদী ভাঙন কেড়ে নিচ্ছে শত শত একর কৃষি জমি, বসত ভিটা, চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট।

দিন যতই পার হচ্ছে উপক‚লীয় এলাকার মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে জমি জায়গা হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দুর্যোগের ঝুঁকিহ্রাস কমাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। জলবায়ু ফান্ডের অর্থায়নে সরকার উপক‚লীয় এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম বলেন পরিকল্পনা মাফিক বেড়িবাঁধ করা হলে উপক‚লীয় এলাকার মানুষ ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। উপজেলা জলবায়ু পরিষদ ইতোমধ্যে সিএসআর প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে কয়রাার সমস্যাগুলো বের করে তা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তার উপর কাজ করছে।

জানা গেছে,সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো অনেক সংস্থার মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার, কাঁচা রাস্তা নির্মাণ, ঝড় সহনশীল ঘর তৈরি, পয়নিস্কাশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, গভীর অগভীর নলক‚প স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা দেশের উপক‚লীয় বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে সমুদ্র উপক‚লীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ঝড় জলোচ্ছাসজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে কিছুটা রেহাই পাবে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীর কিনার ড্যাম্পিং করে বেড়িবাঁধে বøক বসানোর কারণে নদী ভাঙন কিছুটা কমেছে। উপক‚লীয় এলাকার বেড়িবাঁধ রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্প চালু থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে সৃষ্ট জলোচ্ছাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এ অঞ্চলের জনসাধারনের জানমাল অনেকটা রক্ষা করা সম্ভব হবে। কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ এস এম শফিকুল ইসলাম,বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপক‚লীয় এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকার ব্যাপক ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এনে টেকসই প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন