শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

সুযোগ ‘হাতছাড়ার’ আক্ষেপ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

৩৫ ওভার পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১ উইকেটে ২০৮। হাতে উইকেট থাকায় বাকি ১৫ ওভারে তারা নিয়ে নিয়েছে আরও ১৭৩ রান। ওভারপ্রতি রান ছুটেছে প্রায় সাড়ে ১১ করে। শেষ ১০ ওভারে ঝড় বয়েছে আরও বেশি। ওভারপ্রতি ১৩ রানের উপর নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের শেষ দিকের এই ঝড় নাকি ১০ রানে জীবন পেয়ে ডেভিড ওয়ার্নারের ১৬৬ করে ফেলা। কোনটা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট? অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা মনে করেন সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে তো হতই। কিন্তু শেষ দিকেও যদি তারা আরেকটু আঁটসাঁট হতে পারতেন, ওয়ার্নার বড় রান পেলেও ম্যাচের ফলটা হতে পারত ভিন্ন। বাগে পেয়েও অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সুযোগ হাতছাড়ার আক্ষেপটা তাই পোড়াচ্ছে সবচেয়ে বেশি মাশরাফিকে।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে অধিনায়কের বলেই পয়েন্টে ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলে দেন সাব্বির রহমান। তখন পর্যন্ত ভুগতে থাকা ওয়ার্নার পরে থিতু হয়ে ঘুরিয়েছেন ছড়ি। পুরো খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা করে দেন এলোমেলো।

বাঁহাতি ওপেনার ওয়ার্নার ক্রিজে থাকায় সুবিধা করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ছয় ওভারে ৫০ রান দেওয়ায় আর বল করতেই আসেননি তিনি। অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকারকে দিয়ে তাই পুষিয়ে নিতে হয়েছে বাকিটা। আরেকদিকে রুবেল হোসেন মার খাওয়ায় আরেকজন বোলারের অভাব আর পুষিয়ে দেওয়া যায়নি। ম্যাচ শেষে অধিনায়কের কথায় বেরিয়ে এলো এই দুই সংকটের কথা, ‘যেটা বললাম এই ধরণের ম্যাচে যেকোনো কিছুই হতে পারে। ডেভিড ওয়ার্নার এরপরে (ক্যাচ মিসের পর) ১৫০ রান (আসলে ১৫৬) যোগ করেছে। এখানে হয়তবা সুযোগগুলো কাজে লাগালে ভিন্ন কিছু হতো। ক্যাচ মিস হয়, হতে পারে। তারপরও দেখেন ৩০-৩৫ ওভার পর্যন্তও ম্যাচে ছিলাম। যদিও উইকেট পড়েনি। এরপর থেকে যদি আমরা ৭-৮ করেও দিতাম তাহলেও একটা সেট ব্যাটসম্যান আউট হলে নতুন ব্যাটসম্যানের জন্য কঠিন হতো। বেশি সময় ছিল না ওদের মারার জন্য।’

শেষ ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলে দেয় ১৩১ রান। গেøন ম্যাক্সওয়েলে চারে নেমে ১০ বলে করে ফেলেন ৩২ রান। মার্কাস স্টয়নিস করেন ১১ বলে ১৭। ব্যাটিংয়ে ৩৩৩ রান করার পর ছোটখাটো এই মোড়গুলোও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়াকে ৩৩০-৩৪০ এর ভেতর রাখতে পারলেও এই মাঠে রান তাড়া করে ফেলা সম্ভব ছিল বলে বিশ্বাস বাংলাদেশ অধিনায়কের। এই আক্ষেপের পাশাপাশি হাহাকার উঠলো শেষ সময়ের চোটে পড়ে সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেকের খেলতে না পারা নিয়ে।

একজন টুর্নামেন্টে দলের সফলতম বোলার। আরেকজন স্পিনে বাড়তি বিকল্প হিসেবে কাজ চালাচ্ছিলেন বেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে চোটে ছিটকে গেলেন দুজনই। ম্যাচের নানা সময়ে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেনের অভাব বারবার অনুভব করেছেন মাশরাফি।

পিঠের ব্যথার কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে পারেননি সাইফ। কাঁধের চোটের কারণে ছিলেন না মোসাদ্দেক। অস্ট্রেলিয়া রান পাহাড়ে ওঠার পথে ১৯২ রানের জুটি গড়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ইসমান খাওয়াজা। মেহেদী হাসান মিরাজ চেষ্টা করেছেন তাদেরকে আটকে রাখতে। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানকে থিতু হতে দেননি এই দুজন। মাহমুদউল্লাহ এখনও বোলিং করার অবস্থায় নেই। অধিনায়কের মনে হচ্ছিল, আরেকজন অফ স্পিনার যদি থাকত, ‘বাঁহাতি দুজন যখন ব্যাট করছিল, সাকিবকে ওরা খুব পরিকল্পনা করে খেলেছে। তিনে স্মিথ নামার কথা, সাকিবের জন্য খাওয়াজাকে নামিয়েছে। সে সিঙ্গেল নিচ্ছিল, ওয়ার্নার চার্জ করছিল। মোসাদ্দেক থাকলে কাজে লাগত। সৌম্য যদিও অনেকটা কাভার করেছে। তবে মোসাদ্দেক থাকলে, দুই পাশ থেকে দুটি অফ স্পিনার চালাতে পারলে হয়তো ক্ষতিটা কমিয়ে রাখা যেত।’

মোসাদ্দেকের জায়গায় এই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন সাব্বির রহমান। ফিল্ডিংয়ে তিনি ১০ রানে জীবন দিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। পরে ওয়ার্নারকেই রান আউট করতে পারেননি ৭০ রানে। ব্যাটিংয়ে আউট হয়েছেন প্রথম বলে। একই চিত্র সাইফের বদলির ক্ষেত্রেও। খরুচে হলেও টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ ৯ উইকেট তার। তার জায়গায় অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে মাঠে নেমে ৯ ওভারে ৮৩ রান দিয়েছেন রুবেল। মাশরাফির আশা, দ্রæতই ফিরে পাবেন সাইফকে, ‘আশা করছি দ্রæত সুস্থ হবে। অবশ্যই... প্রতি ম্যাচে সে উইকেট পাচ্ছিল, প্রতি ম্যাচেই কঠিন সময়ে বল করে ব্রেক থ্রু দিয়েছে। শুরুতেও উইকেট দিয়েছে। ফর্মে থাকা কোনো বোলারকে মিস করা দলের জন্য কঠিন। ওকে অবশ্যই মিস করেছি। আশা করি পরের ম্যাচ থেকে আবার পাব ওকে।’

বাংলাদেশের দলীয় সূত্র জানা গেছে, মোসাদ্দেকের বাম কাঁধে সমস্যা থাকলেও সাইফুদ্দিনের চোটের ধরনটি বেশ রহস্যে ঘেরা। টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নাকি তিনি পিঠে চোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচের মাঝখানে তাকে কোন শুশ্রƒষা নিতে দেখা যায়নি। টন্টন থেকে দল নটিংহ্যামে আসার পরই আবিষ্কার হয় পীঠের চোটে ভুগছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ফলাফল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ন ম্যাচে টুর্নামেন্টে দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া (৪ ম্যাচে ৯ উইকেট) এই পেসারকে পাওয়া গেল না। দুজনের কারও চোটই খুব গুরুতর মনে করা হচ্ছে না। আগামী পরশু আফগানিস্তান ম্যাচের জন্য বিবেচনায় থাকবেন হয়তো দুজনই।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন