বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

অবসর প্রশ্নে বিরক্ত মাশরাফি

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

প্রশ্নটার অবতারনা তার একদিনের এক কথা থেকেই। অভিমানি কণ্ঠে বলেই ফেলেছিলেন, ‘আর বোধহয় খেলা সম্ভব হচ্ছে না, শরীরটা সায় দিচ্ছে না’। এই বার্তাটি যদি মাশরাফি বিন মুর্তজার না হতো, তবে বিশ্বাসযোগ্যতা পেলে পেতেও পারতো। তবে কে না জানে, লড়াই সংগ্রাম আর ফিরে আসার অসম্ভব শক্তি দিয়ে যাকে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে পাঠান তার নামই যে ‘মাশরাফি’। সেই অধিনায়কের কাঁধে দায়িত্ব দিয়েই বিশ্বকাপে গেছে বাংলাদেশ। তবে ইংল্যান্ড যাবার আগে একটি বিষয় পরিস্কার করে দিয়েছিলেন এই বলে, ‘এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ’। তবে সেই কথা ধরেই সংবাদমাধ্যমগুলোতে চললো খবরের পর খবর ‘বিশ্বকাপের পরই অবসরে যাচ্ছেন মাশরাফি।’ পরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে যে ভুল ভাঙিয়েছিলেন স্বয়ং দেশসেরা এই অধিনয়াক।

বিশ্বকাপের মধ্যেও মাশরাফি একদিন কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, অবসর নিয়ে তখনো কিছু ভাবেননি। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগে এ নিয়ে চিন্তাও করতে চান না। কিন্তু গতকাল সিদ্ধান্তটা এক রকম জানিয়েই দিলেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘এখনই খেলা ছাড়ছি না। আমি আরও খেলব। বোর্ড থেকে কোনো নির্দেশনা এলে আলাদা কথা। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তা নেই।’

স্ত্রী সুমনা হক খুব বেশি ক্রিকেট প্রেমী নন। তবুও ছেলে সাহেল মুর্তজা ও মেয়ে হুমাইরা মুর্তজাকে নিয়ে চলে এসেছেন ইংল্যান্ডে। ভাই মোরসালিন মুর্তজাও এসেছেন। এসেছেন বাবা গোলাম মুর্তজাও। তাতে গুঞ্জন চলছে, মাশরাফির ক্যারিয়ারের ইতি দেখতেই কি পরিবারের সবাই এসেছেন ইংল্যান্ডে? সে প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন অধিনায়ক, ‘বিশ্বকাপ আর খেলব না, এটা তো বলেই দিয়েছি। সে জন্যই চেয়েছি পরিবারের সবাই আসুক, খেলা দেখুক।’

বিশ্বকাপের আগেও দারুণ ছন্দে ছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপটা সে অর্থে খুব ভালো যাচ্ছে না তার। ৬ ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি। বয়সটা যখন প্রায় ৩৬, তাই আলোচনা হচ্ছে, পেসার হয়ে এ বয়সে আর কতটুকু পারবেন। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় মাশরাফির। এরপর প্রায় ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। এক সময়ের দ্রæততম পেসার বার বার ইনজুরিতে পড়ে হারিয়েছেন আগের গতি। চোট-আঘাতকে নিত্যসঙ্গী করে এগিয়েছেন। ইনজুরিতে বাদ পড়লে দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরেছেন প্রতিবার। চলতি বিশ্বকাপেও খেলছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি নিয়ে। কিন্তু এ মুহূর্তে খেলা ছাড়ার ইচ্ছা নেই বলেই জানালেন অধিনায়ক। কারণটাও ব্যাখ্যা দিয়েছেন যুক্তিসঙ্গত ভাবেই, ‘আমি আরও খেলব, এটা ঠিক। আর বিশ্বকাপের মধ্যে ও রকম কিছু করতেও চাই না। তাতে পুরো দলের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। খেলোয়াড়েরা যা-ই করবে, বলবে, ওরা এটা আমার জন্য করছে বা করতে চায়। এটা চাচ্ছি না। আমি চাই বিশ্বকাপটা সবাই নিজের মতো করে খেলুক। এখানে অন্য কিছু না আসুক।’

এদিকে মাশরাফি কতদিন খেলবেন তা তার উপরই ছেড়ে দিয়েছে বিসিবি। বিশ্বকাপের পরও তিনি খেলতে চাইলে তার সিদ্ধান্তে সম্মান জানবে বলেই জানিয়েছেন মিডিয়া কমিটির প্রধান ও বিসিবির পরিচালক জালাল ইউনুস, ‘মাশরাফির অবসরের ব্যাপারে বোর্ড কিছু বলবে না। সে এখনো আমাদের নেতা। ও যদি মনে করে খেলা চালিয়ে যাবে, তো খেলতে পারে। আবার ও যদি অবসর নিতে চায়, সেটাতেও বোর্ড বাধা দেবে না।’

২০০১ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর প্রায় ১৮ বছর হয়ে গেছে তাঁর ক্যারিয়ারের বয়স। চোট-আঘাত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুবার। দুই হাঁটুতে সাতবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। মাশরাফি তবু থমকে যাননি। প্রতিবার ফিরেছেন দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। চোটের সঙ্গে লড়াই জেতার এমন উদাহরণ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই আর আছে কি না সন্দেহ।

আবার এসব কারণে ওই প্রশ্নও ওঠে। বয়স প্রায় ৩৬ হয়ে গেছে। পেস বোলার হিসেবে শরীরটাকে আর কত টানতে পারবেন তিনি! পালন করতে হচ্ছে ওয়ানডে দলের অধিনায়কের দায়িত্বও। এবার তো সাংসদও নির্বাচিত হয়েছেন। বয়স এবং গুরুত্বপূর্ণ দুটি দায়িত্বের ভার সামলে খেলায় কতটা মনোযোগী থাকতে পারবেন মাশরাফি, সে প্রশ্নও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেই গত কয়েকটি ম্যাচ তিনি খেলছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে, যার কিছুটা প্রভাব তো খেলায় পড়ছেই (৬ ম্যাচে ১ উইকেট)। বিশ্বকাপের পরও খেলা চালিয়ে গেলে ফিটনেসের প্রসঙ্গ আরও বেশি করেই আসবে। অথচ গত তিন বছরে বাংলাদেশে বল হাতে দেশের সেরা পারফর্মার ছিলেন এই মাশরাফি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন