শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

ভারতের বিপক্ষে চেনা মুস্তাফিজ

ইমামুল হাবীব বাপ্পি | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

স্লগ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের মত বোলারের জুড়ি মেলা ভার। আর প্রতিপক্ষ যখন ভারত তখন তো কথাই নেই। প্রিয় প্রতিপক্ষকে পেয়ে আরো একবার জ্বলে উঠলেন কাটার মাস্টার। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাঁচা মরার ম্যাচে তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই ম্যাচ নাগালের মধ্যেই রাখে বাংলাদেশ।

ভারতীয় ইনিংসের শুরু ও শেষটা ছিল একেবারেই বিপরীতমুখী। বাংলাদেশের শুরুটা ছিল অনিয়ন্ত্রিত বোলিং, বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের হতাশা দিয়ে। তামিম ইকবালের বিশ্বস্থ হাত গলে ভয়ঙ্কর রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচ বেরিয়ে যাওয়ার পর যেন মাঠে নুইয়ে পড়ে দল। মাশরাফি-মুস্তাফিজদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আসে পরিবর্তন। নেতিবাচ সেই মনোভাবের সুযোগে আরো চড়াও হয় ভারতের রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের ওপেনিং জুটি। ৩০ তম ওভারে যখন অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকার এসে সেই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে ১৮০ রান। চলতি আসরে তো বটেই বাংলাদেশের বিপক্ষে যা ভারতের রেকর্ড ওপেনিং জুটি। দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন রোহিত। ভারতের সাড়ে তিনশ সংগ্রহ তখন ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তা হতে দেননি মুস্তাফিজ। বিশ্বকাপে তার প্রথম ও দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ৫ উইকেট শিকার ভারতকে ৯ উইকেটে ৩১৪ রানে বেধে রাখে।

দিনের শুরুতে দরকার ছিল টস জেতা। কিন্তু তা হয়নি। টসভাগ্যে হেসে ব্যাটিং নেন বিরাট কোহলি। মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম ওভারেই ১০ রান তুলে ভয়ের আভাস দেন নেয় রোহিত-রাহুল জুটি। এরপর অধিনায়ক বোলিংয়ে আসেন দশম ওভারে। মাঝে সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজের বল যে রোহিত-রাহুল জুটি সাচ্ছন্দে খেলেছে তা নয়। তবে বাজে ফিল্ডিংয়ের সুবাদে রান এসেছে তরতর করে। সবচেয়ে বড় হতাশা উপহার দেন দেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডার তামিম। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মুস্তাফিজের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহিত। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে বেশ খানিকটা দৌঁড়ে এসে ক্যাচটা পুরোপুরি নাগালে পেয়েও তালুবন্দি করতে পারেননি তামিম। দলীয় রান তখন ১৮। রোহিত ব্যাট করছিলেন ৯ রানে। ওয়ানডের সর্বোচ্চ ইনিংস ও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনটি দ্বিশতক হাঁকানো বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যানকে জীবন দেওয়ার মাশুল দেয় মাশরাফি বাহিনী। কুমার সাঙ্গাকারার (২০১৫) পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে রোহিত তুলে নেন চতুর্থ সেঞ্চুরি। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি। সৌম্যের বলে শর্ট এক্সট্রা কাভারে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন ৯২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৪।

খানিক বাদে রাহুলকে (৯২ বলে ৭৭) উইকেটের পিছনে ক্যাচ বানান রুবেল হোসেন। এরপর দরকার ছিল ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠতে থাকা বিরাট কোহলি ও ঋষব পন্তের জুটি বিচ্ছিন্ন করার। ৪০তম ওভারে মুস্তাফিজ বাংলাদেশকে এনে দেন জোড়া উইকেট। আগের টানা পাঁচ ম্যাচে ফিফটি করা কোহলিকে (২৬) বাউন্ডারি লাইনে রুবেলের ক্যাচে পরিণত করার এক বল পরেই নতুন ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়াকে বেধে ফেলেন মায়াবি গুড লেন্থ ডেলিভারিতে। সৌম্যের নেয়া ক্যাচটাও ছিল দুর্দান্ত। তখনও ভারতের স্কোর সাড়ে তিনশর চোখ রাঙানি দিচ্ছিল। কিন্তু সাকিব-মুস্তাফিজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তা সম্ভব হয়নি। শেষ দল ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলতে পারে ৬৩ রান।

১০ ওভারে মাত্র ৪১ রানের বিনিময়ে পন্তের (৪৮) উইকেট তুলে নেন সাকিব। ৪৮তম ওভারে দিনেশ কার্তিককে তুলে নিয়ে ঝড় তুলতে দেননি মুস্তাফিজ। ইনিংসের শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে মুস্তাফিজ তুলে নেন আরো ২ উইকেট। ছিল একটি রান আউটও। ইনিংসের শেষ বলটি শাফল করতে গিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মোহাম্মাদ শামির স্টাম্প। তৃতীয় বারের মত ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন মুস্তাফিজ। সব মিলে ওয়ানডেতে এটি তার চতুর্থ ৫ উইকেট শিকার। সাড়ে তিন বছর পর ম্যাচে ৫ উইকেটের দেখা পেলেন ‘ফিজ’।

তিনশোর্ধো রান তাড়া করে জেতা সব সময়ই কঠিন। তবে বিশ্বকাপে দুইবার তিনশ তাড়া করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। চলতি আসরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩২২ তাড়া করে প্রতাপের সঙ্গেই জিতেছিল টাইগার বাহিনী। শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই বাংলাদেশ করে তিনশোর্ধো রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ হারলেও মিচেল স্টার্ক-প্যাট কান্সিদের সামলে ৩৩৩ রানের সংগ্রহ গড়েছিল সাকিব-মুশফিরকরা।

তারই পুনরাবৃত্তি করার জন্য দরকার ছিল উড়ন্ত শুরুর। এখানেও হতাশ করেন তামিম। শামির অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে এনে বোল্ট হয়ে সাজঘরে পেরেন ৩১ বলে ২২ রান করে। দশম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৩৯। ভারতের রিভিউ নষ্ট করে জীবন পাওয়া সৌম্য (৩৩) দলীয় ১৬তম ওভারে ৭৪ রানে। এরপর শুরু হয় বাংলাদেশের দুই স্বপ্ন সারথি সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের লড়াই।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ম্যাচের ফল জানার উপায় ছিল না। সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে এই ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। অন্যদিকে জিতলে শেষ চার নিশ্চিত হত ভারতের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nannu chowhan ৩ জুলাই, ২০১৯, ৯:৩৬ এএম says : 0
Mustafij congrats,you did great job,you had given great hope the Bangladesh,even though we did able to win the game but still you have won the game...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন