শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খেলাধুলা

আরেকটি স্বপ্নভঙ্গের বেদনা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও বাজে ফিল্ডিং আর ব্যাটসম্যানদের একের পর এক আত্মাহুতিতে শেষ হয়েছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন। ভারতের দেওয়া তিনশোর্ধো রান তাড়ায় বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে ২৮ রানে। অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে আসরের শেষ চারে নাম লিখিয়েছে ভারত।

১২ বল হাতে রেখে অল আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন মোহাম্মাদ সাইফউদ্দিন। সঙ্গীর অভাবে অপরাজিত থাকেন ঝড়ো ফিফটি তুলে। সাইফের মত ব্যাটিংয়ের শুরুতে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বাকিরাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থিতু হয়ে উইকেটে বিলিয়ে আসেন তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাশ, সাব্বির রহমান এমনকি ইনিংসের আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসানও। তবে একেবারে ছেড়ে কথা বলেনি টাইগাররা। ৩১৫ রান তাড়ায় ২৮৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। সাইফ ব্যাটে থাকায় জয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিন্তিত ছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

দিনটা হতে পারত তামিমের। কিন্তু ভাগ্য এদিন তার সহায় ছিল না। ব্যাক্তিগত ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে দিনের শুরুতেই হাতছাড়া করেন রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচ। সেঞ্চুরি ইনিংসে সেই রোহিতই দিন শেষে ম্যাচ সেরা। একসময় তো সাড়ে তিনশোর্ধো রানের হুমকি দিচ্ছিল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ পর্যন্ত যে তারা ৯ উইকেটে ৩১৪ রানে আটকে যায় তার কৃতিত্ব মুস্তাফিজের। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ৫ উইকেট শিকার করে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রাখেন কাটার মাস্টার। আব্দুর রাজ্জাককে (২০০৭ সালে, ১৩ উইকেট) টপকে বিশ্বকাপের এক আসরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার এখন মুস্তাফিজ (১৫ উইকেট)। উঠে এসেছেন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারদের তালিকার শীর্ষ পাঁচে।

এমন লক্ষ্যে শুরুটা হতে হতো উড়ন্ত। কিন্তু এখানেও ব্যর্থ তামিম (২২)। উইকেটের বাইরের বল টেনে নিজের স্টাম্প ভেঙে এই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন দশম ওভারে দলীয় ৩৯ রানে। থিতু হয়ে হার্দিক পান্ডিয়ার বাজে এক ডেভিলারিতে উইকেট বিলিয়ে আসেন সৌম্যও। সৌম্য ছাড়াও অপর প্রান্ত থেকে একে একে সাকিবকে ছেড়ে যান মুশফিক (২৪), লিটন (২২) ও মোসাদ্দেক (৩)। প্রথম চার জুটির প্রত্যোকটি ত্রিশ পেরুলেও তা বড় ফিফটি স্পর্শ করেনি।

দলীয় ১৭৯ রানে সাকিবকে তুলে নিয়ে বড় ব্যবধানে হারের চোখ রাঙানি দিচ্ছিল ভারত। কিন্তু এর পরই আসে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি। সত্যি বলতে সাইফ-সাব্বিরের ৫৬ বলে ৬৬ রানের সেই জুটিতে বাংলাদেশ নতুন করে জয়ের স্বপ্নও দেখতে থাকে। কিন্তু বুমরাহর স্লো ডেলিভারিতে বোকা বনে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাব্বির (৩৬)। নবম উইকেটে রুবেল-সাইফের ২৯ রানের জুটিও ভয় ধরিয়ে দেয় কোহলিকে। কিন্তু টানা দুই বলে রুবেল ও মুস্তাফিজ বোল্ড হওয়ায় ৩৮ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থেকে যান সাইফ। ভারতের সেরা বোলার বুমরাহ চার উইকেট নেন, প্রত্যেক অন্যের সহায়তা ছাড়া, চারটিই বোল্ড।

ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলতে মুস্তাফিজের পর বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক আসরে সাকিবের পাঁচশ রান, সঙ্গে আছে দশ (১১) উইকেট। ৬৬ রানের ইনিংসের সাথে আর ৩ রান যোগ করতে পারলে রোহিতকে (৫৪৪) টপকে আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় শীর্ষে ফিরতে পারতেন সাকিব।

এর আহে ভারতীয় ইনিংসের শুরু ও শেষটা ছিল একেবারেই বিপরীতমুখী। বাংলাদেশের শুরুটা ছিল অনিয়ন্ত্রিত বোলিং, বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের হতাশা দিয়ে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মুস্তাফিজের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহিত। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে বেশ খানিকটা দৌঁড়ে এসে ক্যাচটা পুরোপুরি নাগালে পেয়েও তালুবন্দি করতে পারেননি তামিম। দলীয় রান তখন ১৮, রোহিতের ৯।

এরপর যেন মাঠে নুইয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। মাশরাফি-মুস্তাফিজদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আসে পরিবর্তন। নেতিবাচ সেই মনোভাবের সুযোগে আরো চড়াও হয় রোহিত-রাহুলের ওপেনিং জুটি। ৩০ তম ওভারে যখন অনিয়মিত বোলার সৌম্য এসে সেই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে ১৮০ রান। চলতি আসরে তো বটেই বাংলাদেশের বিপক্ষে যা ভারতের রেকর্ড ওপেনিং জুটি। আগের রেকর্ড ছিল ১২১ রানের, ১৯৯০ সালে চন্ডিগড়ে উরকেরি রমন ও নভোজাত সিং সিধুর ব্যাটে।

ফেরার আগে কুমার সাঙ্গাকারার (২০১৫) পর বিশ্বের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি। সৌম্যের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন ৯২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৪ রান।
খানিক বাদে রাহুলকে (৯২ বলে ৭৭) উইকেটের পিছনে ক্যাচ বানান রুবেল হোসেন। এরপর দরকার ছিল ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠতে থাকা কোহলি ও ঋষব পন্তের জুটি বিচ্ছিন্ন করার। ৪০তম ওভারে মুস্তাফিজ বাংলাদেশকে এনে দেন জোড়া উইকেট। আগের টানা পাঁচ ম্যাচে ফিফটি করা কোহলিকে (২৬) বাউন্ডারি লাইনে রুবেলের ক্যাচে পরিণত করার এক বল পরেই নতুন ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়ার নেয়া সৌম্যের ক্যাচটা ছিল দারুণ। তখনও ভারতের স্কোর সাড়ে তিনশর চোখ রাঙানি দিচ্ছিল। কিন্তু সাকিব-মুস্তাফিজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেষ দশ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলতে পারে ৬৩ রান।

৪১ রানের বিনিময়ে পন্তের (৪৮) উইকেট তুলে নেন সাকিব। মুস্তাফিজ ৫ উইকেট নেন ৫৯ রানের খরচায়। তৃতীয় বারের মত ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন মুস্তাফিজ। সব মিলে ওয়ানডেতে এটি তার চতুর্থ ৫ উইকেট শিকার। সাড়ে তিন বছর পর ম্যাচে ৫ উইকেটের দেখা পেলেন ‘ফিজ’।
শুক্রবার নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। পরের দিন ভারত লড়বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

ভারত : ৫০ ওভারে ৩১৪/৯
বাংলাদেশ : ৪৮ ওভারে ২৮৬
ফল : ভারত ২৮ রানে জয়ী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জাহিদ ৩ জুলাই, ২০১৯, ৪:০৮ এএম says : 0
স্বপ্নভঙ্গের মাঝেই নতুন স্বপ্নের জন্ম হয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন