বিশ্বকাপে এসেছিলেনই বিশ্বরেকর্ড সঙ্গী করে। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপেই সাকিবের উপস্থিতি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মুকুট মাথায় করে। সেই মুকুটের অসম্মান হতে দেননি একটি দিনের জন্যও। এবারের আসর রাঙিয়েছেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে। ভেঙেছেন একগাদা রেকর্ড, গড়েছেন অনন্য সব নতুন কীর্তি। সাকিব আল হাসান শেষটাও রাঙালেন তেমনই আরো কিছু মাইলফলক সঙ্গী করে।
বিশ্বকাপে এবার ব্যাট করতে নামলেই যেন ফিফটি একেবারে বাঁধা সাকিবের। কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিরেছিলেন ৪১ রানে। বাকি সব ম্যাচেই তুলেছেন ৫০-এর বেশি রান। টানা দুই ম্যাচে করেছেন সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেও হেসেছে তার ব্যাট। এদিন আউট হওয়ার আগে ৭৭ বলে করেন ৬৪ রান।
আগের তিন বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচে করেছিলেন ৫৩৯ রান। এবার ৮ ম্যাচেই করে ফেলেছেন তারচেয়ে বেশি। অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপের ইতিহাসে ছাপিয়ে গেছেন বহু নামজাদা ব্যাটসম্যানদের। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, জাভেদ মিয়াঁদাদ, মাহেলা জয়াবর্ধনেরদের মতো তারকাদের টপকে সাকিব এখন বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা ১০ রান সংগ্রাহকদের একজন।
এতদিন বিশ্বকাপে রান সংগ্রহে দশে থাকা শ্রীলঙ্কান জয়াবর্ধনের রান ৪০ ম্যাচে ১১০০। সাকিব ২৯ ম্যাচেই তা টপকে জায়গা করে নিয়েছেন সেরা দশে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩১৬ রান তাড়ায় তিনে নেমে বরাবরের মতোই সাবলীল ব্যাট চালাচ্ছেন সাকিব। সেরা দশে ঢুকতে এদিন তার দরকার ছিল ১৯ রান। কেবল ২৩ বল খেলেই তা পেয়ে যান তিনি। দশে জায়গা করতে সাকিব গতকাল পেছনে ফেলেছেন ৩১ ম্যাচে ১০৮৫ করা অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ৩৩ ম্যাচে ১০৮৩ রান করে জাভেদ মিয়াঁদাদকেও। এবার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করাতেও রোহিত শর্মাকে (৫৪৪) ছাপিয়ে ফের এক নম্বরে উঠেছেন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই বিশ্বকাপে স্পর্শ করেন ৬০০ রান। ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে আর ৯৬.০৩ স্ট্রাইকরেটে ৬০৬ রান করেন সাকিব।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান ভারতীয় কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের। ছয় বিশ্বকাপে ৪৫ ম্যাচ খেলে ২২৭৮ রান করে বিশ্বকাপে দুই হাজারের বেশি রান পাওয়া একমাত্র ক্রিকেটারও তিনি। দুইয়ে থাকা রিকি পন্টিং ৪৬ ম্যাচে করেছেন ১৭৪৩ রান। কুমার সাঙ্গাকারার আছে ৩৭ ম্যাচে ১৫৩২ রান। ব্রায়ান লারার রান ৩৪ ম্যাচে ১২২৫। ক্রিস গেইল ৩৫ ম্যাচে করেছেন ১১৮৬ রান। সনৎ জয়াসুরিয়া ৩৮ ম্যাচে করেছেন ১১৪৮ রান। ব্যাটসম্যান সাকিব জায়গা করে নিলেন এই তারকাদের পাশে। এতদিন একাই রাজত্ব করা লিটল মাস্টারের সঙ্গে এদিন ভাগাভাগি করেছেন আরেকটি রেকর্ড। এক আসরে ৭টি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের মালিক যে এতদিন একাই ছিলেন ভারতীয় গ্রেট!
শুধু ব্যাট হাতেই নয়, অলরাউন্ডারের কাজটি সুনিপুন ভাবে করে গেছেন বল হাতেও। বাঁহাতি চোখ ধাঁধানো স্পিনে ঝুলিতে উইকেট পুড়েছেন ১১টি। আছে ম্যাচে পাঁচ উইকেটের কীর্তিও। বিশ্বকাপে আগের কোনো আসরে ১০ উইকেটের পাশে ৪০০ রানও ছিল না কোনো ক্রিকেটারের।
গত ১০ বছর ধরেই আইসিসি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে বেশিরভাগ সময় শীর্ষে ছিলেন সাকিব। বরাবরই বাংলাদেশের সেরা পারফরমার। তবে এই বিশ্বকাপে ছাড়িয়ে গেছেন যেন নিজের আগের সব পারফরম্যান্সকে। বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের লড়াই থেকে ছিটকে গেলেও টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার হওয়ার লড়াইয়ে প্রবলভাবেই আছেন সাকিব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন