সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বাংলাদেশের অম্লমধুর বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখালেন মুস্তাফিজুর রহমান; বিশ্বকাপের এক আসরে সাতটি পঞ্চাশোর্ধো ইনিংস খেলে সাকিব আল হাসান ভাগ বসিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ডে- কিন্তু এর কোনো কিছুই গতকাল বাংলাদেশের পরাজয়কে রুখতে পারল না। সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন শেষ হয়েছিল আগেই। অনেক যদি কিন্তুর সমীকরণে পাঁচে থেকে আসর শেষ করতে চাওয়ার স্বপ্নও শেষ হলো পাকিস্তানের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে। শেষ পর্যন্ত দশ দলের পয়েন্ট তালিকায় সাতে থেকে আসর শেষ করল বাংলাদেশ।
শুরুতে বোলারদের নির্বিষ বোলিংয়ের সাথে বাজে গ্রাউন্ড ফিল্ডিং আর শেষে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানেই হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে তত বড় নয়, যে ব্যবধানের হার পাকিস্তানকে তুলে দিত সেমিফাইনালে।

নিউজিল্যান্ডকে টপকে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ডের সাথে শেষ চারে জায়গা পেতে চারশোর্ধো ইনিংস গড়ে ৩১৬ রানে জিততে হত পাকিস্তানকে। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান বাংলাদেশকে লক্ষ্যই দিতে পারে কাকতালীয়ভাবে ৩১৬। বাংলাদেশের ইনিংস সাত রান পেরুতেই সরফরাজ আহমেদের দলের শেষ চারের অসম্ভব সমীকরণ শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ৪৪.১ ওভারে গুটিয়ে যায় ২২১ রানে। ৯৪ রানের জয়ে তালিকার পাঁচে থেকে আসর শেষ করে পাকিস্তান।

সেমির আশা নিয়ে আসর শুরু করে সাতে থেকে শেষ। সেই হিসাবে বলা যায় বিশ্বকাপটা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। তাহলে বিশ্বকাপে প্রাপ্তিটা কী? এমন প্রশ্নে সবার আগে চল আসে একটি নাম- সাকিব আল হাসান। ৬০৬ রান করে ফিরেছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে, সাথে আছে ১১টি উইকেট। তার এই অল-রাউন্ডার কীর্তি অনেক দিন মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। ৩৬৭ রানে আসর শেষ করা মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিংকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তবে একথা বলতে দ্বিধা নেই বাংলাদেশকে একার কাধেই টেনেছেন সাকিব। আসর জুড়ে নিয়ম মেনে সৌম্য-তামিমের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হওয়ার পরও যে বাংলাদেশ ব্যাট হাতে টুর্নামেন্ট জুড়ে ইতিবাচক পারফম্যান্স প্রদর্শন করেছে তা সাকিব-মুশফিকের কল্যাণেই।

টুর্নামেন্ট জুড়ে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া কিছু ব্যাটসম্যানের ক্যাচ যেমন পড়েছে ক্লোজ হয়ে আসা কিছু ম্যাচে, তেমনি রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করা কিংবা ফিল্ডিং মিসে বাউন্ডারি বেরিয়ে যাওয়া ছিল নিয়মিত দৃশ্য। সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ধরা পড়েছে বোলিংয়ে। স্লগ ওভারে মুস্তাফিজ নিজেকে আবারো কার্যকরী প্রমাণ করে তুলে নিয়েছেন এখন পর্যন্ত আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ উইকেট। তবে রান খরচ আটকাতে পারেননি। গতকাল ৫ উইকেট নিলেও দিয়েছেন ৭৫ রান। মুটামুটি মানের বোলিং করেছেন সাইফউদ্দিন (১৩)। সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি রুবেল হোসেন। অনেক অঙ্ক কষে দলে নেওয়া আবু জায়েদকে তো কোনো ম্যাচেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বড় ধাক্কা মাশরাফিকে নিজের ছায়া হয়ে থাকাটা। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপের আসরটা ভুলে যেতেই চাইবেন দেশের সফলতম অধিনায়ক। আট ম্যাচে তার নামের পাশে এক উইকেট যে বড্ড বেমানান। এর মধ্যে কিছু কিছু ম্যাচে তো বোলিং কোটাই শেষ করেননি।

গতকাল যেমন ৭ ওভারে দিয়েছেন ৪৬ রান। ৯ ওভারে ৩ উইকেট নিলেও ৭৭ রান দেন সাউফউদ্দিন। মুস্তাফিজের ৭৫ রানে ৫ উইকেটের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। শেষ ম্যাচে একমাত্র দেখার মত বোলিং করেছেন মিরাজ। ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রানের বিনিময়ে নেন ১ উইকেট।

স্লগ ওভারে মুস্তাফিজের ঘুরে দাঁড়ানোতেই লক্ষ্যটা নাগালেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে উইকেট মন্থর হয়ে যাওয়ায় এই লক্ষ্যটাই যে কোনো দলের সামনেই পাহাড়সম। সেটা আরো কঠিন হয়ে যায় ব্যাটসম্যান একের পর এক আত্মাহুতিতে। এদিনও বলার মত স্কোর গড়েছেন কেবল সাকিব। বক্তিগত ৬৪ ও দলীয় ১৫৪ রানে সাকিব আউট হওয়ার সাথে সাথেই মূলত শেষ হয় বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন। বরাবরের মত এদিনও থিতু হয়ে বাজে শট খেলে আউট হন অনেকেই।

অবশ্য বাংলাদেশের বাজে ব্যাটিংকে প্রাধান্য দিলে পাকিস্তানের বোলিংকে খাটে করে দেখানো হয়। আদতে দুর্দান্ত বোলিং করেছে তারা। বিশেষ করে শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী (১৯ বছর ৯০ দিন) বোলার হিসেবে ৫ উইকেট তুলে নিয়েই থামেননি, ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত আসরের সেরা বোলিং ফিগার তারই।

বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে মূলত প্রথম ইনিংসেই। শুরুতে চাপে রাখা গেলেও ইমাম-উল-হক ও বাবর আজমের ১৫৭ রানের জুটিতে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। মাঝের ওভারগুলোতে রানের স্রোতে মুস্তাফিজরা বাধ দেন বটে, তবে শেষ দিকে ইমাদ ওয়াসিমের (৪৩) ঝড়ে ৯ উইকেটে পাকিস্তান তোলে ৩১৫ রান।

দারুণ সেঞ্চুরি ইনিংসে মুস্তাফিজের সঙ্গে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান ইমাম-উল। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়ার হিসেবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই পরের বলে আউট হন হিট আউটের শিকার হয়ে। দুবার জীবন পেয়ে বাবর করেন ৯৮ বলে ১১ চারে গড়া ৯৬ রান। এই ইনিংসের পথে জাভেদ মিয়াঁদাদকে (৪৩৭) ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ (৪৭৪) রান সংগ্রাহক বনে যান বাবর।

শেষ ওভারে টানা দুই বলে ইমাদ ও মোহাম্মাদ আমিরকে তুলে নিয়ে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও আসরে টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন মুস্তাফিজ। বিশ্বকাপের এক আসরে দেশের হয়ে দুবার ৫ উইকেট নেয়া একমাত্র বোলার তিনিই। একই সাথে দেশের দ্রুততম বোলার হিসেবে (৫৪ ম্যাচে) ১০০ উইকেটের মাইলফলক পূর্ণ করেন কাটার মাস্টার। আগের দ্রুততম ছিল আব্দুর রাজ্জাকের (৬৯)। সব মিলে বিশ্বের চতুর্থ দ্রুততম বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েন মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজ-সাকিবদের এই কীর্তিই হয়ত ক্রিকেটের পথচলায় বাংলাদেশকে পথ দেখাবে।

পাকিস্তান : ৫০ ওভারে ৩১৫/৯

বাংলাদেশ : ৪৪.১ ওভারে ২২১

ফল : পাকিস্তান ৯৪ রানে জয়ী

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Md Sharif ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
হারলেও ভালবাসি, জিতলেও ভালবাসি। শুভকামনা রইল টাইগারদের জন্য
Total Reply(0)
Riad Uddin Ridu ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
May be the performances were not up to the mark in this world cup but we stick to our hopes Better luck for the next world cup
Total Reply(0)
Tasnim Tabasum ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
Well done tigers. Please don't lose hope. Better luck next time.
Total Reply(0)
Dhiman Ghosh ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
দশ বিশ রান করার জন্যে, এই বিশ্ব কাপের মত মঞ্চে, চেহারা দেখাইবার জন্যে না যাওয়াই ভাল| যারা সেরা পারফর্ম করতে পারবে কেবল তাদের জন্যেই রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যায় করা আবশ্যক বলে আমি মনে করি।
Total Reply(0)
Basak Indrajit ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে সত্যি সেরা দল এর মতোই খেলেছে।সাকিব তো অসামান্য ''মুসি ও মুস্তাফিজ ও দারুন করেছে সামনে আরো ভালো করবে আসা করি এশিয়ার অন্যতম ভালো দল টি।।।। মাশরাফি কাছ থেকে অনেক আসা ছিল।।।যায় হোক better luck next time love from Kolkata
Total Reply(0)
Abul Hayat Rocky ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
এম‌নি‌তেই কোন লাভ ছিল না এর‌চে‌য়ে অন্যদল‌কে সু‌যোগ ক‌রে দি‌য়ে ভালই ক‌রে‌ছে। এমন হারই কাম্য। অ‌ভিনন্দন পা‌কিস্থান, শু‌ভেচ্ছা বাংলা‌দেশ। জয়তু আই‌সি‌সি।
Total Reply(0)
Rishat Siddique ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
শুধু সাকিব,মুশফিক আর শেষ দিকে এসে মুস্তাফিজ ছাড়া আর সবাইকেই আমার মনে হচ্ছে লন্ডনে পিকনিক করতে গেছেন! সরি সাকিব ভাই,আপনি অন্তত একটা ইন্টারন্যাশনাল ট্রফি পাওয়ার যোগ্য,কিন্তু আপনার এই টিমের জন্য কোনোদিনও পাবেন না
Total Reply(0)
Ibtehaz Hussen Rony ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম says : 0
Tamim is still our best opener, he'll come back strongly. Everyone is unnecessarily trolling him, but what has mosaddek done? If mosaddek, sabbir, soumyo can't improve, young plyr like yasir will replace them soon Most importantly change d bowling coach, fielding coach and fitness trainer.
Total Reply(0)
Faisal Rahman Khan ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৮ এএম says : 0
৪৪ ওভার খেল্লো আজ বাংলাদেশ। আসলে এক সাকিব ছাড়া কেউই দলে পার্ফমার নেই।মুস্তাফিজুর ও যেসব ৫ উইকেট পায়,ওইগুলা দলের কাজে আসে না,বুঝা উচিৎ ৭৫ ৫৫ টাইপ রানে ৫ উইকেট পাওয়া মানে,শেষের দিকের ব্যাটসম্যান রা যখন পিডাইয়া ক্লান্ত হয়,তখন মুস্তাফিজুর কেন, যেকোন লোক উইকেট পেতেই পারে,শাহিন আফ্রিদি আজ ৬ উইকেট পেল।বাংলাদেশ ৪৪ ওভারেই ধ্বসে গেল,এটা হল বোলিং, এই বিশ্বকাপে উইকেট আদায় করেছে সাকিব,আর দান চ্ছত্র টাইপ উইকেট পেয়েছে মুস্তাফিজুর,শাহিনশাহ এর ৩৫/৬ আর ফিজ সাহেব এর ৭৫/৫ এই দুই জিনিস এক না,এটা ফলাফল এ টের পাওয়া যায়,
Total Reply(0)
NH Oyon Hasan ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
যারা যারা বলতাছেন আমরা আগের চেয়ে অনেক ভালো খেলছি, আমাদের অনেক কিছু প্রাপ্তি আছে এই বিশ্বকাপে, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য আগামীতে ভালো খেলবে, হারলেও বাংলাদেশ জিতলেও বাংলাদেশ ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের কে আমি একটা কথাই বলবো = আগামীতেও আপনারা মনে হয় ঠিক একইভাবে এইরকম বাংলাদেশের হার দেখবেন আর বলবেন আমাদের এইখান থেকে অনেক প্রাপ্তি আছে। কারণ একটাই আপনাদের মতো আবেগী জনগনের আশকারা।
Total Reply(0)
Shamaun Iqbal Shamun ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
প্রথম তিনটি ম্যাচের পরেই যদি মাশরাফি এবং তামিম দয়া করে আর কোন ম্যাচ না খেলে আমাদেরকে মাফ করে দিতো, তাহলে আজ নিশ্চত আমরাও সেমিফাইনালে খেলতাম! ...তারপরেও পাজয় আর অপমানের সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে যদি ম্যাচ শেষ সংবাদ সম্মেলনে এসে মাশরাফি এবং তামিম বিদায়ের ঘোষণা দেয়!
Total Reply(0)
Liza Khan ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:৫৯ এএম says : 0
একজন প্লেয়ার যিনি নিজেই স্বীকার করেন, তাঁর যে ইনজুরি তাতে ৩ সপ্তাহের বিশ্রাম দরকার ছিল। বিশ্বকাপের আগে থেকে যিনি ইনজুরড তাঁকে কেন খেলতে হবে? এর আগে ২০১১ তেও ইনজুরি নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন! দলে না নিয়ে কেঁদুকুটে ভাসাই দিছিলেন। ক্রিকেট আমাদের আবেগের জায়গা কিন্তু দল সিলেকশন আবেগের জায়গা না। ফিট প্লেয়াররাই খেলবেন।আর এক প্লেয়া
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন