লোহাগাড়ার কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী সারা বছর অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনে বালু ও খাল পাড়ের মাটি তুলছেন। বর্ষায় এর খেসারত দিচ্ছে খালপাড়ের গ্রামবাসী। অপরিকল্পতিভাবে বালু উত্তোলনের কারণে বন্যার পানির স্রোতের গতি পরিবর্তন হয়ে খালগুলোর দুইপাড় ভেঙে পড়েছে।
এক দিকের গতি পরিবর্তন হয়ে অন্যদিকে বয়ে যাচ্ছে। চরম আতঙ্কে দিনযাপন করছে খালপাড়ের বাসিন্দারা। খালের গতি পরিবর্তনের কারণে খালপাড়ের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে। বান্দরবান পার্বত্য এলাকা হতে সৃষ্ট ডলু, টংকাবতী, হাঙ্গর, হাতিয়া, সরই, জামছড়ি খালগুলো লোহাগাড়া উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। খালগুলোতে নাম মাত্র ১/২ টি বালু মহাল ইজারা দিলেও প্রতিটি খালেই শতাধিক স্পটে বালু উত্তোলন করা হয়। ডলু খালের পুটিবিলা এলাকায় ৭টি বালু মহাল বিগত কয়েক বছর আগে সরকারিভাবে ইজারা দিলেও গত বছর ইজারা দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, পুটিবিলা এলাকা থেকে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল। যার কারণে এলাকাবাসীর দাবির মুখে সব মহাল আর ইজারা দেয়া হয়নি। কিন্তু ইজারা না দিলেও ডলু খালে পুটিবিলা থেকে আধুনগর, বড়হাতিয়া পর্যন্ত প্রায় শতাধিক স্পট থেকে বালু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মত ড্রেজার মেশিনে সারা বছর বালু উত্তোলন করে। বর্তমানে প্রতিটি গ্রামই ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। গেল বন্যায় আধুনগরের বেশ কয়েকটি সড়ক খালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাশাপাশি মানুষের বাড়ি ঘরও ফসলি জমিও নদী গর্ভে চলে গেছে। এই খালের আধুগর হাই স্কুল ও প্রাইমারি স্কুলের পাশে খাল পাড়ের মাটি ও বালু কেটে নিয়ে যাবার কারণে বর্তমানে স্কুল দুটির পাশের সড়ক ভেঙে স্কুল ও ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। টংকাবতী খালের অবস্থা আরো শোচনীয়। এই খালেও চরম্বা থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক স্পটে বালু উত্তোলন করা হয়ে থাকে।
হাজারিবঘা গ্রামের নুরুল আলম চৌধূরী প্রাইমারী স্কুল, হাজারবিঘা হিন্দু পাড়া, মসজিদ ও পুরো গ্রামটি যেকোন সময় খালের গর্ভে চলে যেতে পারে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার হিন্দু পাড়ার একমাত্র শশ্মানটি খালের গর্ভে চলে গেছে পাশাপাশি খাল পাড়ের রাস্তাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, হাজার বিঘা গ্রামের পাশে বয়ে যাওয়া টংকাবতী খাল থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি খাল পাড়ের নরম মাটিগুলোও সারাবছর ধরে কেটে নিয়ে যাচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা। জমিগুলো স্থানীয় কৃষকদের মালিকানাধীন হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জমির নরম মাটিগুলো কেটে নিয়ে গেছে। জমির মালিক কৃষকগণ এসব বন্ধের জন্য বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার পায়নি। ব্রিজের গোড়া থেকে বালু উত্তোলনের কারণে সরই খালের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাছনাভিটা ব্রিজ ও সরইয়া ব্রিজ দুটি ভেঙেছে কয়েক বছর আগে। এখনও তা নির্মিত হয়নি। লাখ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।
এছাড়াও হাঙ্গর, জামছড়িসহ লোহাগাড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবকটি খালেই বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলে সারা বছর। বালু উত্তোলনকারীরা বরাবরই সরকারদলীয় নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকাতে এলাকাবাসীরা কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। পুটিবিলা এলাকার বাসিন্দারা কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় প্রতিজনের নামে ৪/৫ টি করে মামলার আসামি হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, কোন ইজারা ছাড়া সম্পুর্ন বেআইনিভাবে গায়ের জোরে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোন ভ‚মিকা চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে অভিযানের নামে ড্রেজার মেশিন জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয়। ২/৩ দিন পর আবার একই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায় একই বালু ব্যবসায়ীকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন