সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ফুটপাথ নিয়ে লুকোচুরি বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ২ আগস্ট, ২০১৯

ঢাকার যানজট ও নাগরিক বিড়ম্বনা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। যানজটমুক্ত করে ঢাকার চাকাকে গতিশীল করতে এবং নগরীকে নান্দনিক ও বাসযোগ্য রাখতে সরকার নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এ লক্ষ্যে হাজার হাজার কোটি টাকায় বেশকিছু ফ্লাইওভার নির্মাণের পরও অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। গত এক দশকে ঢাকার যানবহনের গড় গতি ২১ কিলোমিটার থেকে বর্তমানে ৭ কিলোমিটারের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যা ও যানবাহন বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিশ্বের প্রায় সব মেগাসিটিতেই কমবেশি যানজট হয়ে থাকে। যানজটে আক্রান্ত রাস্তায় ফুটপাথ বা পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে গমনই হচ্ছে শেষ ভরসা। ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় শহরে প্রতিদিন সকালে লাখ লাখ মানুষকে কয়েক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা যায়। অস্বাভাবিক যানজটের কারণে ঢাকা শহরে ১০ মিনিটের পথ পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বেশিরভাগ রাস্তায় একসাথে অনেক মানুষ পায়ে হাঁটার উপযোগী ফুটপাথ নেই। যে সব রাস্তায় ফুটপাথ আছে তা যেন পথচারীদের জন্য নয়। নানাভাবে বেদখল হওয়া ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে না পারলেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে নাগরিকদের সুনাগরিক হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন এবং মেয়র ও কর্মকর্তারা মাসে মাসে বিদেশ ভ্রমণ করে জনগণের রাজস্বের কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন।

রাস্তায় গাড়ি চলাচলের চেয়ে ফুটপাথ দিয়ে নির্বিঘে্ন ও স্বাচ্ছন্দে চলাচলের নিশ্চয়তা নাগরিকদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বছরের পর বছর ধরে ফুটপাথগুলো বেদখল হয়ে আছে। সেই সাথে শহরের ব্যস্ততম রাস্তার বিশাল অংশ অবৈধ কার পার্কিংয়ের দখলে ও যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার মাধ্যমে বেড়ে চলা যানজটের তীব্রতা রোধে যেন কারো মাথাব্যথা নেই। এসব সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি সুয়োমোট রুল এবং আদেশ জারি করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০০১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এক রায়ে ঢাকার ফুটপাথকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুটপাথে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, যে কোনো ধরনের নির্মাণ সামগ্রী রাখা নিষিদ্ধ করাসহ ফুটপাথকে পরিকল্পিত ও স্থায়ীভাবে উন্মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। গত ১৮ বছরেও হাইকোর্টের সেই রায় বাস্তবায়ন করা হয়নি। উপরন্তু এ সময়ে নতুন নতুন রাস্তার ফুটপাথের পাশাপাশি ঢাকার চারপাশের নদনদী, খাল, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান বেদখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয়ে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে নতুন আদেশ ও নির্দেশনা দেয়া হলেও তার খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে।

রাস্তার ফুটপাথ, নদী, খাল, জলাভ‚মি ও উন্মুক্ত স্থান পরিবেশগত নিরাপত্তা ও নাগরিক জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের আর কোথাও এসব ক্ষেত্রে বেআইনী দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং আদালতের হস্তক্ষেপের নজির নেই। নগর কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে নগরীতে যান চলাচল ও নাগরিক সমাজের পায়ে হাঁটার পথ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে নিরাপত্তা এখন এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, যানজটে স্থবির রাস্তায়ও যে সব দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের শতকরা ৪৭ জনই সাধারণ পথচারী। অন্যদিকে দখলে দূষণে ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাওয়ার পরও আমাদের সরকার বা নগর কর্তৃপক্ষের যেন টনক নড়ছে না। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরের রাস্তার ফুটপাথগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকা চাঁদাবাজদের দ্বারা বেদখল হয়ে আছে। ফুটপাথ দখল করে তারা সেখানে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সাথে স্থানীয় পুলিশের একশ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করার পাশাপাশি নগরীকে যানজট, মশক ও দুর্ভোগমুক্ত করতে ঢাকার মেয়রদ্বয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার কোথা থেকে কারা হকার বসিয়ে চাঁদা তুলছে তাদের কিছু নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে দখলদার ও চাঁদাবাজদের নাম উঠে এসেছে। এসব তথ্য সম্পর্কে পুলিশের অজানা নেই। কিন্তু লাখ লাখ টাকার ভাগাভাগি ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এসব বন্ধ হচ্ছে না। হকার উচ্ছেদের নামে মাঝে মধ্যেই কিছু অভিযান পরিচালিত হতে দেখা যায়, যা নাগরিক সমাজ এবং আদালতের চোখে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। একে উচ্ছেদ না বলে চাঁদাবাজির হাতবদল বলাই শ্রেয়। একবিংশ শতকের উপযোগী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমে রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য ও যানজটমুক্ত করতে হবে। ঢাকার নাগরিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাস্তা ও ফুটপাথ ব্যবহারে নাগরিক সমাজকেও আরো সচেতন হতে হবে, নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন