শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

তৈরী পোশাক খাতে অ্যাকর্ডের প্রতিবন্ধকতা

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পখাত নিয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক একটি মহলের ষড়যন্ত্র কোনো নতুন বিষয় নয়। বিভিন্ন পোশাক কারখানায় নাশকতার ঘটনা এবং গুজব ছড়িয়ে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীর বেশ কিছু ঘটনা অতীতে আলোচিত হয়েছে। সেই সাথে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মপরিবেশ বা কমপ্লায়েন্সের ধূয়া তুলে ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতাদের পক্ষ থেকে একটা খবরদারির প্রচেষ্টা সব সময়ই সক্রিয় রয়েছে। বিশেষত ২০১৩ সালে রানাপ্লাজা ট্রাজেডির পর বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প নিয়ে আন্তজার্তিক অঙ্গনে একটি মহলের বিরূপ প্রচারণার সুযোগে অ্যাকর্ড-এলায়েন্সের নামে সে প্রচেষ্টা অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। অ্যাকর্ড এলায়েন্সের খবরদারি, নজরদারি ও সুপারিশে দেশের তৈরী পোশাক শিল্পের বিনিয়োগকারিরা কমপ্লায়েন্স বা কর্মপরিবেশ উন্নয়নে শত শত কোটি টাকা খরচ করতে বাধ্য হয়েছে। কারখানায় কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের মজুরিবৃদ্ধির মত ইস্যুগুলোতে অ্যাকর্ড বেশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেও পাশাপাশি পোশাকের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিনিয়োগের নিরাপত্তার প্রশ্নে তাদের তেমন কোনো ভ‚মিকা দেখা যায়নি। উপরন্তু তাদের শর্ত মানতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে শত শত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে লাখ লাখ শ্রমিক হারিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। তাহলে অ্যাকর্ড এলায়েন্সের মূল লক্ষ্য কি কমপ্লায়েন্সের নামে বিনিয়োগকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা এবং শুধুমাত্র ক্রেতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা?

দেশের গার্মেন্টস শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই অ্যাকর্ড ও এলায়েন্সের নানা স্বেচ্ছাচারি সিদ্ধান্ত ও আচরণের বিরোধিতা করে আসছে। দেশের তৈরী পোশাক কারখানা মালিক ও রফতানিকারদের সাথে ক্রেতাজোটের চুক্তি অনুসারে গত বছরের মে মাসেই বাংলাদেশে অ্যাকর্ড এলায়েন্সের কর্মকাল বা মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা টাল বাহানা ও কিছু অমিমাংসিত ইস্যুতে তাদের মেয়াদ বেড়ে চলেছে। সেই সাথে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম আরো বেশি একপাক্ষিক ও স্বেচ্ছাচারি হয়ে উঠার অভিযোগ উঠেছে। পোশাক কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক এক কর্মশালা গত শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাকর্ড এলায়েন্সের পক্ষ থেকে নানা অজুহাতে এখনো বিভিন্ন কারখানাকে সর্তক করা বা শর্ত দেয়া হচ্ছে বলে তৈরী পোশাক খাতের উদ্যোক্তা প্রতিনিধি এবং বিজিএমইএ’র তরফ থেকে খোলাখুলি অভিযোগ করা হয়েছে। গত ৬ বছরে অ্যাকর্ড ১ হাজার ৬২০টি কারখানা পরিদর্শন করলেও তারা মাত্র ২০০ কারখানাকে পরিদর্শন সনদ দিয়েছে। আর শর্ত মানতে না পারায় শতাধিক কারখানার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও অবশিষ্ট কারখানাগুলো নিয়ে তারা টালবাহানার আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূলত কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে একটি নির্দ্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে কারখানা পরিদর্শন করে সনদ দেয়ার দায়িত্ব নিলেও ৬ বছরেও তারা সে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স এখন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও দেশে বেশ কিছু ‘গ্রীন ফ্যাক্টরি’ বা পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরী হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের এক জরিপে পরিবেশবান্ধব সবুজ গার্মেন্টস কারখানা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। গত বছর দেশের ২৪টি বৃহদাকার কারখানা বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় কারখানা হিসেবে স্থান লাভ করেছে, যেখানে বিশ্বের শীর্ষ ১০ কারখানার ৬টি বাংলাদেশের। অর্থাৎ গত এক দশকে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্সে বিশাল পরিবর্তন ঘটে গেছে। কিন্তু অ্যাকর্ড ও এলায়েন্স এ বিষয়ে উদাসীন। তারা নানা অজুহাত ও শর্ত তুলে কারখানা বন্ধে নেপথ্য ভ‚মিকা পালন করছে। অথচ তারা বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কমদামে বিশ্বমানের পণ্য কিনতে আগ্রহী। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হওয়ার পরও পোশাকের মূল্যবৃদ্ধিতে কোনো ভ‚মিকা না রাখা এবং কমপ্লায়েন্সের অজুহাত তুলে বিভিন্ন কারখানার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং প্রকারান্তরে বন্ধ করে দিতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে তাদের দ্বিচারিতা ও অসদুদ্দেশ্য ধরা পড়ছে। এ ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পোশাক রফতানিতে প্রতিদ্বন্দি দেশগুলোর কোন মহলের ইন্ধন বা প্রভাব থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। অ্যাকর্ডের প্রতিবন্ধকতা সত্তেও¡ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়ে চলেছে।গত অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। বিশেষত চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। অ্যাকর্ড এলায়েন্সের টালবাহানা না থাকলে এটি আরো বেশি গতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ঈদকে সামনে রেখে এক শ্রেনীর কারখানা মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে টালবাহানা করে পুরো সেক্টরের জন্য বদনাম ডেকে আনেন। বিজিএমইএ এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে তারা জানিয়েছে। দেশের রফতানি বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের অন্যতম খাতটিকে আর কোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MD Zakir Hossain ৫ আগস্ট, ২০১৯, ৯:৪৩ এএম says : 0
Thank's a lot Inquilab
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন