দেশের উত্তরের জেলার মতো এই রকম সমতল ভূমি-জমি অন্য জেলায় কম। পাবনা সমতল ভূমির জেলা। এই জেলায় ধান-পাট এবং অন্যান ফসলের জন্য উপযোগী মাটি রয়েছে। কৃষক পাট রোপন করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তাঁদের মুখে সোনালি হাসির ঝিলিক। তবে পাট মৌসুমে সিন্ডিকেট পাটের দরপতন ঘটায়। আর মধ্যসত্বভোগিরা লুটে মুনাফা। কৃষক পাটের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। গত বছর প্রথম দিকে এই চেষ্টা করে দাম কমানো হয়েছিল, তবে পড়ে সেটি সরকারি তদারকির কারণে আর পারেনি। কৃষক আশা প্রকাশ করছেন, এবারও সিন্ডিকেট কোনো অসাধু পাট ব্যবসায়ী কারসাজি করে তাদের শ্রম-ঘামে উৎপাদিত পাটের ন্যায্য মূল্য কমিয়ে দিতে পারবেন না।
এবার আগাম বন্যার কারণে বিভিন্ন নদী, বিল, জলাশয়ে পানি থাকায় এবং আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দিতে পাট চাষিদের অসুবিধায় পড়তে হয়নি। ইতোমধ্যেই পাট কাটা আশ ছড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। এখন কয়েক দিন বৃষ্টি না হলে সোনালি আঁশ শুকিয়ে কৃষক ঘরে তুলতে পারবেন, তারপর হাট-বাজারে বিক্রির জন্য নেবেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাবনায় পাট কাটা ও জাগ ও শুকানোর কাজ শেষ হবে। সোনালি পাট আসবে হাট-বাজারে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার পাট মৌসুমে পাবনা জেলার ৯ উপজেলায় ৩৬ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ আগের তুলনায় বেড়েছে। এরমধ্যে তোষা পাট আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সুজানগর উপজেলায়। এই উপজেলায় ৮ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। যা নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে ২ হাজার হেক্টর বেশি। সাঁথিয়া উপজেলায় ৭ হাজার ৪শ’ হেক্টর, পাবনা সদর উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টার, আটঘরিয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৯শ’ ৭০ হেক্টর, চাটমোহর উপজেলায় ৬ হাজার ৮শত ৭৫ হেক্টর, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ৩শ’ ৫৫ হেক্টর, বেড়া উপজেলায় ২ হাজার ৬শ’ ২০ হেক্টর, ফরিদপুর উপজেলায় ৬০৫ হেক্টর এবং ঈশ্বরদী উপজেলায় ১শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এবার হেক্টর প্রতি গড়ে ৯৮ হাজার মেট্রিকটন পাট পাওয়া যাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে পাবনার দাপুনিয়া, বাঁশেরবাদা, চর কোশাখালী ঘুরে দেখা যায়, পাট-চাষিরা পাটের আঁশ ছড়িয়ে শুকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষাণ-কৃষাণীরা খুব শ্রম দিচ্ছেন। মতিজান খাতুন, রহিমা বেওয়া, রমজান আলী, মো. সেন্টু মিয়া, রজব তাঁদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাট তো ভালো হয়েছে। এখন কয়েক দিন খরা হলে ভালো পাট দ্রুত শুকানো যাবে। তাঁরা সবাই আশা করছেন এবার পাটের ন্যায্য মূল্য পাবেন। পাট খড়ি ভালো বাজার রয়েছে। গ্রামীণ জনপদে বাড়ি-ঘরের বেড়া ও জ্বালানী হিসেবে পাট খড়ির চাহিদা আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন