শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সংরক্ষিত জায়গায় অবৈধ বাজার লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে : | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ফেনী রেলওয়ে স্টেশন ও এলাকায় অবৈধ বাজারে শতাধিক দোকান বসিয়ে মাসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে একটি প্রভাবশালি সিন্ডিকেট। প্রকাশ্যে এই সিন্ডিকেটের নেতারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করে বলে দোকানিদের সূত্রে জানা গেছে। আড়ালে থেকে এই অবৈধ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ফেনী পৌরসভার এক প্রভাবশালী কাউন্সিলর।
সরেজমিন পরিদর্শনে ফেনী রেলস্টেশনের সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট সংলগ্ন রেললাইনে ও রেলের সংরক্ষিত জায়গা দখল করে অবৈধ ঝুপড়ি দোকান চালাতে দেখা যায়। ঝুপড়ি দোকান চালানো এসব হকারদের কাছে জানতে চাইলে তারা দৈনিক চাঁদার বিনিময়ে এখানে বসেন বলে জানান। চাঁদা আদায়কারী সিন্ডিকেটের কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। এরা দোকানগুলোর বিভিন্ন অংশ ভাগ করে নিয়েছে। যারা যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করে তারা সে অংশের সর্বেসর্বা।

তাদের ভয়ে আতঙ্কিত ঝুপড়ি দোকানের এসব হকাররা অনায়াসে চাঁদা দিয়ে থাকেন। একদিকে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট আর অন্যদিকে রেলওয়ে পুলিশের নাম বিক্রি করে চাঁদা আদায়ে অতিষ্ঠ এখানকার হকাররা। রেল লাইনে শুধুমাত্র চাঁদার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব দোকান চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট। তাদের কাছে রেলওয়ে কর্মকর্তারাও অসহায়। দু’একজন প্রতিবাদ করেও অপমাণিত হয়ে এখন নিরব রয়েছে।

এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়কারী চক্রের প্রধান হিসেবে নাম উঠে এসেছে মুরগি বিক্রেতা আবুল তালেব ওরফে চদ্দি, তার ২ সহোদর হোনা মিয়া ও রবির। এরা তিন ভাইয়ের ক্যাশিয়ার হলো আসলাম। সে রেললাইনের উপর ঝুপড়ি দোকানের পুরনো কাপড় বিক্রেতাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়। এখানে প্রায় ৪৫টি দোকান রয়েছে। দোকানভেদে ৪০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে তারা। সে হিসেবে তাদের মাসে চাঁদা উঠে প্রায় ১লাখ টাকা। আবার রেলগেইট থেকে শুরু করে স্টেশন বাজার পর্যন্ত পেঁয়াজ, রসুন, মসলা শাকসবজির দোকান নিয়ে বসে হকাররা। এসব দোকান থেকে সিন্ডিকেটের ক্যাশিয়ার হিসেবে টাকা আদায় করে সাইফুল। এখানেও দোকানপ্রতি ৪০ থেকে ১০০ টাকা আদায় করা হয়। এসব দোকান থেকে দৈনিক আদায় করা হয় ১০০ টাকা করে। সিন্ডিকেটের ক্যাশিয়ার আইয়ুব। বাজারের রাস্তা দখল করে বসানো এসব মাছ দোকান থেকে দৈনিক ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আবু তালেব ওরফে চদ্দি, হোনা মিয়া, রবি, সাইফুল, আসলাম ও আইয়ুব, জহিরসহ সিন্ডিকেটের মূলহোতারা ঝুপড়ি দোকানগুলোতে গাঁজা, ফেন্সিডিল ও ইয়াবা ট্যাবলেট সরবরাহ করে। কোন হকার তাদের এসব মাদকদ্রব্য বিক্রিতে অনিহা প্রকাশ করলে রেলওয়ে পুলিশের ভয় দেখানো হয়। তাই একদিকে পুলিশ আর উচ্ছেদের ভয়ে মাদক বিক্রিতে রাজি হয় হকাররা।

আরো জানা যায়, এসব সিন্ডিকেট এখানে সন্ধ্যার পরে বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি হওয়া মোবাইল বিক্রির মেলা বসায়। এসব মোবাইল বিক্রি করে তারা এখান থেকেও কমিশন আদায় করেন। এসব ঝুপড়ি দোকানগুলো রেলওয়ে পুলিশের আওতায় হওয়ায় ফেনী মডেল থানা পুলিশ হস্তক্ষেপ করেনা। চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে, আবু তালেব ওরফে চদ্দি বলেন, আমার বাবা রেলওয়েতে চাকরি করত। সে সুবাদে এ জায়গাগুলি ৯৯ বছরের জন্য রেলওয়ে থেকে লিজ নেওয়া হয়েছে। দোকানগুলো থেকে শুধুমাত্র টাকা আদায় করেন তিনি। পরে একপর্যায়ে বলেন, এসব নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে ফেনী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোকন হাজারী। আপনি উনার সাথে কথা বলেন। আইয়ুব জানান, রাস্তায় বসানো মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে গন্ডি উঠানো হয়। দিনশেষে যা আদায় হয় তা জহিরের কাছে জমা দেয়া হয়। জহির রাস্তার জায়গা ডাক নিয়েছে বলে তিনি জানান।

এসব বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী বলেন, রেলওয়ের জায়গা ভাড়া দিয়ে চাঁদাবাজী করি এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট। তিনি এসবের সাথে জড়িত নন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে ফেনী ও লাকসাম রেলওয়ের কানুনগো কাউছার বলেন, অবৈধ এসব ঝুপড়ি দোকানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও আবার তারা বসে যায়। এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেন। ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, রেলওয়ে পুলিশের চাঁদার অংশ পাবার কথা জানেন না মন্তব্য করে পরিত্যক্ত রেললাইন তার আওতাভুক্ত নয় বলে নিশ্চিত করেন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন