ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ডানার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকা। বুলবুলের ঝাপটা খেয়ে শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি হৃদরোগে মৃত্যুবরণও করেছেন। ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। কাঁচা ঘর বাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে শত শত মানুষকে নিরাশ্রয় করেছে শক্তিশালী বুলবুল। একই সাথে বুলবুল ভেঙ্গেছে হাজার হাজার গাছ। ডুবিয়ে দিয়েছে মাছের ঘের,ফসলি জমি।
জানা যায়, প্রবল শক্তি নিয়ে ১০ নভেম্বর রোববার ভোররাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। যার গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ৮১ কিলোমিটার। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন সংলগ্ন বকখালি এলাকায় বুলবুল আঘাত হানে। সেখানে সবকিছু লন্ডভন্ড করে কিছুটা দুর্বল হয়ে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে শ্যামনগর এলাকায় আঘাত হানে বুলবুল। এরপর ডানা ঝাপটিয়ে চলে যায় বরিশাল,ভোলা এলাকায়। বুলবুলের আগমনে শুক্রবার থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত আকাশ ছিলো মেঘলা। কখনো অল্প আবার কখনো ছিলো ভারী বৃষ্টি। সাথে দমকা থেকে জোর বাতাস। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সুন্দরবন সংলগ্ন দীপ অঞ্চল গাবুরা গ্রামটি। এখানকার প্রায় দুই হাজার কাঁচা ঘর-বাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়েছে। আংশিক নষ্ট হয়েছে আরো প্রায় দুই হাজার ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাথে গাছ, মাছের ঘেরসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনি, মুন্সিগঞ্জ, রমজাননগর,ভেটখালি, হরিনগর, কাশিমাড়ি এলাকাতেও শত শত কাঁচা বাড়ি ঘর, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। আশাশুনির প্রতাপনগর,আনুলিয়া, খাজরাসহ অন্যান্য উপজেলার কিছু এলাকাতেও বুলবুলের ঝাপটানো ডানায় ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে আরো জানা যায়, রবিবার সকাল থেকে সেমাবার দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা সড়কে পড়ে থাকা গাছপালা, বিদ্যুতের খুটি সরানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তায় ব্যস্ত রয়েছেন এই বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন ভুক্তভোগীদের। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ সামগ্রীও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকতেও দিয়েছেন।
এদিকে, শনিবার রাতে হাজার হাজার মানুষ উপকুলীয় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো মুড়ি ও চিড়া খেয়ে কোনো রকমে জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, প্রচন্ড ঝড়ের পরে রবিবার সকালে কোনো রকম খাবার না খেয়েই অভুক্ত অবস্থায় নিজ ভিটায় গেছেন। উপকুলীয় দীপাঞ্চলের ভুক্তভোগীরা জানান, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মহাবিপদের সময় একমাত্র নৌ-বাহিনী ও কোষ্টগার্ডের সদস্যদের তারা কাছে পেয়েছেন। কৃতঙ্গতা প্রকাশ করে তারা বলেন, হাজার হাজার মানুষ ও গবাদি পশুদের আশ্রয়ে এনেছেন এই বাহিনীর সদস্যরা।
শ্যামনগরে দূর্গত মানুষদের সহায়তায় নিয়োজিত নৌ কমান্ডার সাব লেফটেন্যান্ট রাশেদুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্ধার ও সহযোগিতায় আমাদের টিম কাজ করছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
এদিকে, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ঝড়ের দাপটে গাবুরা ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আক্তারুজ্জামান বাচ্চু
সাতক্ষীরা। তারিখ-১১-১১-২০১৯
মোবাইল-০১৭১০-৮৫১৪০৯
ছবির ক্যাপশন-সাতক্ষীরার শ্যমনগরে বুলবুলের আঘাতের পর রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ অপসারনে ব্যস্ত আছেন নৌবাহিনীর সদস্যরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন