ঘূর্ণিঝড় বুলবুলি’র ছোবলের সাথে স্মরনকালের ভয়াবহ বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে এবার ফসল আর মাছের ক্ষতি সরকারী হিসেবে প্রায় সোয়াশ কোটি টাকা বলা হলেও বাস্তবে তা ২শ কোটির ওপরে বলে দাবী করছেন ওয়াকিবাহল মহল। শুধু ফসলের উৎপাদন ক্ষতিই ৩০ হাজার টনে পৌছতে পারে বলে জানা গেছে। রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সাথে ৮০ কিলোমিটার বেগের ঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা ৭ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন ও রবি ফসল ছাড়াও প্রায় ৬ হাজার হেক্টর পুকুর, দিঘি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়। বুলবুলির ঝড়ের কবলে পরে ভোলার ইলিশার কাছে মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১০ জেলে নিহত হয়েছে। নিখোজ রয়েছে আরো একজন। স্মরনকালের ভয়াবহতম ঐ বর্ষনে এবার বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলই সয়লাব হয়ে যায়।
বুলবুল-এর মাথায় ভর করে আসা ঐ প্রবল বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন ও রবি ফসলের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর আক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টরের আমন সহ রবি ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ডিএই’র মতে বুলবলি’র তান্ডবে দক্ষিণাঞ্চলে ফসল উৎপাদন ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ হাজার টন। যার সরকারী মূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা হিসেব করা হলেও বাস্তবে তা দেড়শ কোটিরও বেশী বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন জানিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কৃষক এ ঝড়ে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে ডিএই’র অনুসন্ধান টিম জানিয়েছে।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পুকুর ও দিঘি ছাড়াও ১৮৪টি মাছের ঘের বুলবুলি’র বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয় যায়। ফলে এসব পুকুর-দিঘি ও ঘের থেকে প্রায় দেড় হাজার টন বিভিন্ন ধরনের মাছ ছাড়াও ২ কোটি বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা বের হয়ে গেছে। মৎস অধিদপ্তরের মতে, মাছ ও মাছের পোনা এবং চিংড়ি ছাড়াও মৎস সেক্টরের বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোরও এবার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু মৎস সেক্টরেই দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। ফলে কৃষকদের মত মৎস্য চাষীদেরও এখন মাথায় হাত।
রবিবারের লাগাতর বর্ষনে শহর-বন্দরÑগ্রাম সর্বত্রই ছিল শুধু পানি আর পানি। ফসলি জমি সহ রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে জনপদের পর জনপদ শুধু পানিতে থৈ থৈ করছিল। রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বরিশালে ২৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল ঐদিন দেশের সর্বাধিক ও দক্ষিণাঞ্চলে সর্বকালের ইতিহাসে এত স্বল্প সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ঐ বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর সাথে পাশর্^বর্তি কির্তনখালা নদী একাকার হয়ে যায়। এখনো নগরীর সব রাস্তা থেকে পানি সরে যায়নি। ফসলি জমি থেকেও খুব ধীরে পানি অপসারন হচ্ছে। ফসলি জমি যত বিলম্বে প্লাবনমূক্ত হবে, ক্ষতির পরিমানও তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষিবীদগন।
বুলবলি আঘাত হানার দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘন্টায় ২৬.৩৩ মিলিমিটার হিসেবে ১৫৮ মিলিমিটার এবং দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ঘন্টায় ৩৪.৩৩ মিলিমিটার করে ১০৩মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে বরিশালে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা পুরো মাসের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের প্রায় দ্বিগুন।
স্মনকালের এ ভয়াবহ বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলে রবি ফসলের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও পান বরজের ক্ষতিও মারাত্মক। বেশীরভাগ পন বরজই মাটির সাথে মিশে গেছে। যা এখনো প্লাবনমূক্ত হয়নি।
কৃষিবিদদের মতে, প্লাবিত রবি ফসল রক্ষার কোন সুযোগ নেই। তবে আমন জমি থেকে যত দ্রæত পানি সরে যাবে ততই মঙ্গল। উঠতি আমন ফসলের বেশীরভাগই এখন ফুল ও থোর পর্যায়ে রয়েছে। ফলে নুয়ে পড়া জমির ধানের বেশীরভাগই চিটা হবারও আশংকা রয়েছে। এর সাথে বৃষ্টির পানির কারনে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর মাঠ থেকে এখনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন