বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থ বছরে প্রায় ১৩১ কোটি টাকা করপূর্ব মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। গত অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার ছিল প্রায় ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৭১ কোটি টাকা বেশী। খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থ বছরে সরকারী কোষাগারে ভ্যাট বাবদ অর্ধ শতাধিক কোটি টাকা এবং আয়কর বাবদও প্রায় ৫০ কোটি টাকা প্রদান করে। গত অর্থ বছরে খুলনা শিপইয়ার্ড উৎপাদন খাতে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ করদাতার সম্মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি গত প্রায় এক দশক ধরে খুলনা অঞ্চলে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভ্যাট ও করদাতা প্রতিষ্ঠানেরও সম্মান অর্জন করে আসছে।
এক সময়ের রুগ্ন ও বিরাষ্ট্রীয়করন তালিকাভুক্ত খুলনা শিপইয়ার্ডটি প্রায় পৌনে ২শ কোটি টাকার লোকসান ও দায়দেনা নিয়ে ১৯৯৯ সালে নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সব দায়দেনা কাটিয়ে গত প্রায় দুই দশকে প্রতিষ্ঠানটি হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি নিট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এসময়ে খুলনা শিপইয়ার্ড সরকারী কোষাগারেও প্রায় পাঁচ শতাধিক কোটি টাকার ভ্যাট ও আয়কর জমা দিয়েছে।
গত অর্থ বছরে খুলনা শিপইয়ার্ড সরকারী কোষাগারে যে ৫০ কোটি ২২ লাখ টাকার ভ্যাট প্রদান করে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২২ কোটি টাকা বেশী। প্রায় ৫০ কোটি টাকা আয়কর প্রদানের পরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার পরিমান দাড়ায় ৮১ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই গত অর্থ বছরের পরিপূর্ণ নিরিক্ষা সম্পন্ন করছে দেশের খ্যাতনামা নিরিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদ নিরিক্ষিত সে হিসেব অনুমোদনও করেছে। নৌবাহিনী প্রধান পদাধিকার বলে খুলনা শিপইয়ার্ড-এর পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান।
খুলনা শিপইয়ার্ড তার নিজস্ব ১শ কোটি টাকার তহবিলে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে একটি অত্যাধুনিক মেরিন রাবার ফ্যাক্টরি ও ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড নির্মান করেছে। ফলে দেশে মেরিন রাবার আইটেম উৎপাদনে বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে। এছাড়া ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড নির্মানের ফলে এখানে বার মাসই যেকোন ধরনের আবহাওয়ায় মানসম্পন্ন নৌযান নির্মান ও মেরামত এখন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হচ্ছে।
খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নৌ বাহিনীর জন্য ছোট ও বড়মাপের যুদ্ধ জাহাজ ছাড়াও সাবমেরিন টাগ, অভ্যন্তরীন ও উপকুলীয় নৌপথে চলাচল উপযোগী কন্টেইনার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকার, কার্গো কাম কন্টেইনার জাহাজ, সেলফ প্রপলড ক্রেন বোট, হাইড্রোগ্রাফি সার্ভে ভেসেল ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত নৌযান তৈরীতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড বাহিনী ছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি সহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি নানা ধরনের নৌযান নির্মান করে আসছে। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের নৌযান এবং ড্রেজার সহ অন্যান্য সরঞ্জামের মেরামত ও পূণর্বাসন কাজও সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ডিপিএম পদ্ধতিতে খুলনা শিপইয়ার্ড শরিয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা এলাকায় পদ্মার ভায়বহ ভাঙন রোধ সহ বরিশালের চরবাড়ীয়াতে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে ১২শ কোটি টাকার কাজ করছে। আগামী বছরের মধ্যেই এ দুটি প্রকল্পের কাজ সাফল্যজনক ভাবে শেষ করত চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। খুলনা শিপইয়ার্ডে খুব শিঘ্রই নৌ বাহিনীর জন্য আরো কয়েকটি মধ্যম মাপের যুদ্ধ জাহাজ নির্মান কাজের সূচনা হতে যাচ্ছে।
অদুর ভবিষ্যতে বড় মাপের আরো যুদ্ধজাহাজ সহ সমুদ্রগামী বানিজ্যিক নৌযান নির্মানের আশা করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন এম সাজেদুল করিম-বিএন। তিনি জানান, শিপইয়ার্ডে কর্মরত প্রতিটি কর্মী দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে বলেই এক সময়ে রুগ্ন এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি আজ নিট মুনাফা অর্জন সহ বিভিন্ন ধরনের কর বাবদ সরকারী কোষাগারের বিপুল অর্থ জমা করতে সক্ষম। প্রতিষ্ঠানটির সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ছাড়াও সরকারী নির্দেশনার আলোকে লভ্যাংশের একটি অংশ ভাতা হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শি সিদ্ধান্তের ফলেই খুলনা শিপইয়ার্ড ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় এবং আজ উপমহাদেশর খ্যতনামা নৌ নির্মান প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অর্জন করেছে বলেও জানান ক্যাপেটন এমএস করিম। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি আগামী দিনে সরকার প্রধানের দিক নির্দেশনায় খুলনা শিপইয়ার্ড সমৃদ্ধির শিখরে পৌছবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন