শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

দুর্নীতি দমনে ইসলামের নির্দেশনা

শাহ মাহমুদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৩৭ পিএম

ইসলামের দৃষ্টিতে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, উৎকোচের মত যেকোনো অবৈধ পন্থা অবলম্বন, দায়িত্বে অবহেলা, ক্ষমতা বা আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অবৈধ স্বার্থ হাসিল এবং দেশ, জাতি ও সাধারণ নাগরিকের অধিকার ও স্বার্থ হরণ করার নাম দুর্নীতি।

দুর্নীতির ব্যাপকতা: দুর্নীতির ব্যাপকতা কত বেশি বালিশ ও পর্দা দুর্নীতি ফাস হওয়াতে তা অনুমান করা যায়। নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে চাকরি পেতে একজন প্রার্থী যখন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে চাকরি নেয় সে দুর্নীতি করাটা বৈধ ও তার অধিকার মনে করে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেনাকাটায় প্রতিটি বালিশের মূল্য ৫৯৫৭ টাকা দেখানো হয়েছে। বালিশ দুর্নীতির রেশ কাটতে না কাটতে পর্দা দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ফাস হলো। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের একটি পর্দা ৩৭ লাখ ৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে। আসলে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতার পাশাপাশি সততার মানদন্ডও যথাযথ ভাবে রক্ষা করা জরুরি।
দুর্নীতি দমনে ইসলাম: ইসলাম একটি সুন্দর ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েম করার উপর অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। ইসলাম সবাইকে দুর্নীতিমুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তার জন্য পার্থিব ও অপার্থিব শাস্তির বিধান দিয়েছে। শুধু আইন ও বিধান দিয়ে সবক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। কারণ আইন প্রয়োগের রয়েছে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অন্যদিকে আইনে থাকে বিভিন্ন ধরণের ফাঁক-ফোড়ক। তাই ইসলাম দুর্নীতি প্রতিরোধে আইন ও শাস্তির বিধানের সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; যা মানবীয় সহজাত বৈশিষ্ট্যের সাথে ভারসাম্যপূর্র্ণ।
পার্থিব শাস্তির বিধান
ইসলাম অপরাধী, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পার্থিব শাস্তি প্রদানে স্বচ্ছ আইন এবং তা দ্রুত কার্যকর করার বিধান প্রণয়ন করেছে। ইসলামে কোনো অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, এমনকি খুনির শাস্তি প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ক্ষমা করার বিধান রাখা হয়নি। কারণ এতে অপরাধীদের ভবিষ্যতে আরো বড় ধরণের অপকর্ম করার সুযোগে করে দেওয়া হয়। এজন্য মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমা চুরি করলেও আমি তার হাত কেটে দিব।’ (বুখারি : ৩২৮৮)।
আখেরাতের জবাবদিহিতা
দুনিয়াতে অপরাধের শাস্তি হোক বা না হোক আখিরাতে সব অপরাধের বিচার হবে এই মানসিকতা জনসাধারণের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের শাস্তি স¤পর্কে সচেতন করার দ্বারা অপরাধ দমন করা যায়। সবাইকে অবহিত করতে হবে যে, দুনিয়াতে মানুষের চোখকে ফাঁকি দেওয়া গেলেও আখিরাতে আল্লাহর দরবারে সব কর্মকান্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। সেখানে কোনো বিষয়ে দুর্নীতি, ব্যক্তি বা জাতির হক আত্মসাৎ প্রমাণিত হলে তার জবাবদিহি করতে হবে এবং পরিণামে জাহান্নামের মারাত্মক আজাবের সম্মুখীন হতে হবে। যা থেকে বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। সেদিন হাত-পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অপরাধির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে। (সূরা ইয়াসিন : ৬৫)। আল্লাহর সামনে হিসাব দিতেই হবে, এই মানসিকতা জনসাধারণের মধ্যে সৃষ্টি হলে দুর্নীতি ও অপরাধ বন্ধ হবে।
ইসলামী শিক্ষার প্রসার: সৎ ও যোগ্য লোক গঠনের জন্য আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এজন্য প্রথমেই পারিবারিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারণ একজন শিশুর ওপর পারিবারিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক সন্তানই প্রবৃত্তির ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অত:পর তার পিতামাতাই তাকে ইহুদী বা খৃষ্টান বানায় অথবা অগ্নি-উপাসক বানায়।’ (বুখারি : ১২৯২)। তাই প্রত্যেক পিতামাতার উচিত নিজেদের সন্তানকে সৎ, আল্লাহভীরু ও ইসলামী অনুশাসনের পূর্ণ অনুসারী হিসাবে গড়ে তোলার সুব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তা হচ্ছে সৎ, যোগ্য ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ইসলামী শিক্ষার স¤পূরক অধ্যায় চালু করা। যেমন মালয়শিয়ার শিক্ষা ব্যাবস্থায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক ইসলামী শিক্ষা চালু রয়েছে এবং এর সুফলও তারা পাচ্ছে।
তাকওয়া ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা
দুর্নীতিমুক্ত জাতি গঠণের লক্ষ্যে ইসলামি মূল্যবোধ এবং তাকওয়ার ব্যাপক অনুশীলন হওয়া প্রয়োজন। ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে দুর্নীতির ভয়াবহ পরিণতি স¤পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। যে জাতি ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, যাদের তাকওয়া ও আখিরাতে জবাবদিহিতার বালাই নেই সে সমাজে দুর্নীতি সহজেই প্রবেশ করে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে অপরাধ ও অনৈতিকতা। কিন্তু তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গঠিত হলে সমাজিক নিরাপত্তা পতিষ্ঠিত হবে এবং ও আল্লাহর রমহমত ও বরকতের দুয়ার খুলে যাবে। আল্লাহতায়ালার ইরশাদ, ‘লোকালয়ের মানুষগুলো যদি ঈমান আনতো ও তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করতো তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম।’ (সূরা আরাফ : ৯৬)। তাই জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ জনগণকেকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সততা ও নৈতিকতার আদর্শে উজ্জীবিত করতে হবে।
হালাল-হারাম স¤পর্কে সচেতনতা: দুর্নীতি দমনের মূলনীতি হিসেবে ইসলাম হালাল-হারাম তথা পবিত্র-অপবিত্রর পার্থক্য সু¯পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছে। সেই সঙ্গে হালালের কল্যাণ ও উপকারিতা এবং হারামের অপকারিতা ও ক্ষতি ¯পষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সূরা বাকারা : ১৬৮)। তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অবৈধ পন্থায় গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।’ (সূরা বাকারা : ১৮৮)। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঐ শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না যা হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত হয়েছে।’ (কানযুল উম্মাল : ৯২৭৩)।
সৎকাজে উৎসাহ : দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সৎকর্ম স¤পাদন ও সৎকাজে উৎসাহ প্রদানের কোনো বিকল্প নেই। কারণ সবাই যখন সৎকাজে উদ্যোগী হবে, দুর্নীতিবাজরা নিজে থেকেই নিস্তেজ হয়ে দুর্নীতি করতে উৎসাহ হাড়িয়ে ফেলবে। এতে সমাজ হবে দুর্নীতিমুক্ত। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৎ কাজের প্রতি উৎসাহিত করতে গিয়ে বলেন, ‘মুমিন পুরুষ কিংবা নারী যে কেউ সৎকর্ম করবে আমি তাকে পবিত্র জীবন দেব এবং তাদের তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সূরা নাহাল : ৯৭)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)।
দুর্নীতির প্রতি ঘৃণাবোধ: অপরাধ ও দুর্নীতির প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসলাম। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখে তাহলে সে যেন তার শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করে। যদি সে এতে অক্ষম হয়, তবে মুখ দ্বারা নিষেধ করবে। যদি সে এতেও অপারগ হয় তবে সে অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করবে। (মুসলিম : ১৮৬)। তাই আসুন দুর্নীতিবাজদের সাথে সামাজিক সকল বন্ধন ছিন্ন করে দুর্নীতির প্রতি ধিক্কার জানাই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
ash ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:২৫ এএম says : 0
MUSLIM DESH E TO BESHI DURNITI CHURI, RAHAJANI HOY !
Total Reply(0)
Md Toton khan ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৫১ পিএম says : 0
Thanks
Total Reply(0)
Md Toton khan ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৫২ পিএম says : 0
Thanks for you
Total Reply(0)
সামিউল ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৯ পিএম says : 0
হা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন