উপকূলের রক্ষাকবচ সংরক্ষিত বনাঞ্চল দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় বিট কর্মকর্তা এবং পুলিশ প্রশাসন ম্যানেজ করে চলছে নিয়ম ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। একদিকে বনাঞ্চলের গাছপালা কেটে জমি দখল করে শুকটি মাছ শুকানোর ফলে ধ্বংসের মুখে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। অপর দিকে অবৈধ বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জাল দ্বারা মাছ শিকার চলছে দিনের পর দিন। যার ফলে অসংখ্য বড় মাছের পোনা জালে মারা পরছে। যা জেলেরা রোদে শুকিয়ে শুটকি ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং কুয়াকাটায় বিক্রি করছেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের অলিখিত চুক্তির ফলে দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের মৎস্য ভাণ্ডার এমনটাই মনে করছেন সচেতনমহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার আশাখালী এলাকায় সমুদ্র মোহনা সংলগ্ম সংরক্ষিত বনের মধ্যে ৩০টি মাছ শুকানোর বাসা রয়েছে। খাপড়াভাঙ্গা নদীর পূর্ব মোহনায় কাউয়ারচর প্রান্তে ১৩টি এবং আশাখালী প্রান্তে ১৭টি বাসা রয়েছে। এক একটি বাসার আওতায় রয়েছে ৮/১০ টি ট্রলার। এক একটি ট্রলারে আছে ৮/১০ টি অবৈধ বেহুন্দি জাল। এই ট্রলারের জালে প্রতিদিন কয়েক’শ মণ মাছ শিকার করে কূলে নিয়ে আসে। এর মধ্যে রয়েছে লইট্টা, পোয়া, ফাহা, চিংড়ি, কাঙ্গট, ফাইসা, ছুড়ি, ইলিশসহ অসংখ্য জাতের মাছের পোনা। শত শত মণ মাছ শুকানোর জন্য বনাঞ্চল উজার করে বিশাল জায়গা করা হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে জড়িত রয়েছে কয়েক’শ জেলে ও কর্মচারী। মাছ শুকানোর জন্য বিশাল জায়গা এবং রান্নাবান্নার জন্য বনের গাছ কেটে লাকড়ি ব্যবহার করছে মৎস্য শ্রমিকরা। যার ফলে দিন দিন বন উজার হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশাখালী প্রান্তের এক ব্যবসায়ী জানান, তারা যেহেতু বন বিভাগের জায়গা ও লাকড়ি ব্যবহার করছেন, সেহেতু বিট কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে কম বেশি টাকা দিতে হয়। তবে মাসে কত টাকা দিতে হয় তা বলতে রাজি হয়নি। অন্যএক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আশাখালী প্রান্তের ১৭টি বাসার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় নেতা মো. রিয়াদ এবং কাউয়ারচরের ১৩টি বাসার নেতৃত্ব দেন রহমাতউল্লাহ। মূলত এই দুই নেতাই বন বিভাগ থেকে প্রশাসন ম্যানেজ করছেন।
প্রশাসন ম্যানেজের দায়িত্বে থাকা রিয়াদ বলেন, এলাকার গরীব জেলেরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিবেকের তাড়নায় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমি কখনও লাভের চিন্তা করি না। রহমাতউল্লাহ বলেন, প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ না করলে জেলেরা হয়রানীর শিকার হয়। প্রশাসন এসে অভিযান চালিয়ে জেলেদের জাল পুড়ে ফেলে।
এ ব্যাপারে কথা হয় ধুলাসার বিট কর্মকর্তা মো.মনির হোসেনের সাথে তিনি বলেন, আমি শুনেছি বনবিভাগের জমিতে শুটকি মাছের বাসা আছে। কিন্তু এখনও যেতে পারিনি। আমি গত এক মাস পূর্বে এখানে যোগদান করেছি। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কারো সাথে লেনদেন করিনি। আমার পূর্বে যিনি ছিলেন তিনি করতেন কিনা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.আমিনুল ইসলাম’র সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কামরুজ্জামান ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু আমাদের নৌযান না থাকায় হাতেনাতে ধরতে পারছি না। তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন