মেলায় শেষ ১০ দিনে নিত্যপণ্য আর শিশুদের খেলনা সামগ্রীতে মূল্য ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। এদিকে পুলিশের তত্ত¡াবধানে থাকা পার্কিং জোন থেকে দর্শনার্থীদের বাইকের হেলমেট ও প্রাইভেটকারের পার্টস চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, দর্শনার্থীদের ব্যক্তিগত পরিবহন নিরাপদে পার্কিং করার জন্য মেলার ভেতরে ও পাশের খালি জায়গাকে পুলিশের নিয়নন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এখানে মোটরসাইকেল প্রতি ৩০ টাকা আর প্রাইভেটকারসহ অন্যন্যা গাড়ি প্রতি ৬০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে রাখা মোটরসাইকেল থেকে হেলমেট চুরি এমনকি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাও ঘটেছে একাধিক। চোরচক্র বিভিন্ন কৌশলে পার্কিং পয়েন্ট থেকে গত ২৪দিনে অন্তত ৩টি মোটরসাইকেল চুরি করেছে। এরমধ্যে ২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করলেও চোর ধরতে পারেনি পুলিশ।
গাজীপুর থেকে আসা দর্শনার্থী রফিকুল আলম জানান, গত শনিবার তার বাইক মেলার পশ্চিম প্রান্তে পুলিশের পার্কিং জোনে রাখলে কে বা কারা তার হেলমেট নিয়ে যায়। এ বিষয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের জানালে তারা দায় নিতে চায় না। এছাড়াও মেলার অভ্যন্তরে ও বাহিরে থেকে চোর ও ছিনতাইকারীরা ক্রেতাদের টার্গেট করে মালামাল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের যেগুলো পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে সেসব আমলে নিয়েছে পুলিশ।
মেলায় দায়িত্বরত পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, গত ২৪ দিনে ২৫ জনের অধিক চোর ধরে তাদের আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। তবে পার্কিং থেকে গাড়ি চুরি হয়েছে এ বিষয়ে জানা নেই। দু-একজনের হেলমেট চুরির বিষয়ে জেনেছি। ট্রাফিকের দায়িত্বরত টি আই জুলহাস মিয়া বলেন, পার্কিং জোন থেকে মিরপুরের ও নরসিংদীর দুটি গাড়ি চুরির চেষ্টা করলে গাড়ি দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধাওয়া পেয়ে চোরেরা বাইক রেখে পালিয়ে গেলে প্রকৃত মালিককে তা বুঝিয়ে দেয়া হয়।
রাজধানীর মালিবাগ থেকে আসা হাফিজুল ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের হেফাজতে রাখা আমার প্রাইভেটকার পার্কিং থেকে চালকের অনুপস্থিতে দুটি লুকিং গøাস ও পেছনের লাইট খুলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আশপাশের লোকদের জানালেও পুলিশকে জানাইনি, তাই সন্ধানও পাইনি।
এদিকে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যে ছাড় ঘোষণা করায় বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতা। মেলার শুরুতে যেসব পণ্যের দাম হাঁকা হতো ৫০০ টাকা শেষ ১০ দিনে একই পণ্যের দাম ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। এসব পণ্যের মাঝে শিশুদের খেলনা আর শীতের পোষাকই বেশি।
মেলায় ঘুরতে আসা গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা তানজুমা আইজি ইকরা বলেন, ব্যবসায়ীদের এমন আচরন মেলা জমতে অনুৎসাহ করে। কারণ মেলার শুরুতে কেউ কেনাকাটা করতে চায় না। সবাই জেনে গেছে শেষ মুহূর্তে ছাড় দেয়া হয়। তাই শেষ বেলায় ভিড় থাকে বেশি। আর যারা দূর জেলা থেকে প্রথমদিকে মেলায় আসেন। তারা বেশি দামে পণ্য ক্রয় করে পরের বছর আর আসেন না। এ বিষয়ে মেলার আয়োজকদের দৃষ্টি দেয়া জরুরি। গাজীপুরের ধীরাশ্রম থেকে আসা গৃহিনী নাসরিন আক্তার জানান, মেলার শেষের দিকে ছাড় দেয় শুনলাম। তাই আসলাম। এখানে শিশুদের খেলনা আর কিছু গৃহস্থালি পণ্য ছাড়া সব কিছুর দাম বেশি মনে হয়েছে।
মেলার প্রবেশদ্বার ইজারাদার কর্মকর্তা অ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন রাজিব বলেন, এবার মেলা জমজমাট হয়েছে। আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে প্রচুর দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে মেলায় পবেশ ও বাহিরের ব্যবস্থা ছিলো। এছাড়াও মেলার দায়িত্ব পালন করে ১৭৫জন স্বেচ্ছাসেবীসহ তরুণ বয়সীরা কাজের সুযোগ পেয়েছে।
মেলা ঘুরে আরো দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী বেচাকেনাও হয়েছে বেশ। মেলার অভ্যন্তরীণ প্যাভিলিয়ন ও সল্টগুলো ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। শীতের কাপড়, শিশুদের খেলনাসহ নিত্যপণে দেয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়। ফলে বেচাকেনা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মেলার পরিচালক ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটতেই পারে। তবে এসব মোকাবেলা করেই মেলাকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন