শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সরকারি ছুটির দিনের অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ঢাকা বাইপাস সড়কে ভোগান্তি

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

স্টল নির্মাণে দেরি আর শৈত্য প্রবাহের প্রভাব সব মিলিয়ে এখনো প্রস্তুত হচ্ছে বাণিজ্যমেলার অভ্যন্তরীণ স্টল। ফলে প্রথম সপ্তাহে আশানুরূপ ক্রেতা ও দর্শনার্থী না পেয়ে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছেন সরকারী ছুটির দিনের। গত বছরের মতো এবারও শুক্র ও শনিবার বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী পাবেন এমন আশায় রয়েছেন মেলা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থী আসলেও বিক্রি নেই খুব একটা। গতকালও মেলায় থাকা বঙ্গবন্ধু গ্যালারীতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ভিড়।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন সেন্টারে ২য় বারের মতো ২৭তম আসর চলছে। আজ তার ৫ম দিন। এদিকে মেলার অভ্যন্তরীণ রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের দাম রাখা হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া। মধুখালী এলাকার বাসিন্দা অলিউল্লাহ মিয়া বলেন, শৈত প্রবাহের প্রভাবে এমন পরিস্থিতি। কোন মেলাই শুরুতে জমে না। এবার কুড়িল থেকে রাজধানীমুখি লোকজন সহজে যাতায়াত করতে পারলেও এশিয়ান বা ঢাকা বাইপাস সড়কের কারণে যাতায়াত ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। একদিকে কাজ চলমান অন্যদিকে কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায় নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

মধুখালী এলাকার বাসিন্দা অলিউল্লাহ মিয়া বলেন, শৈত প্রবাহের প্রভাবে লোকজন কম। এরআগেও কোন আসরই প্রথমে মেলা জমে না। ফলে যারা আসেন তারা দেখছেন বেশি, কিনছেন কম। তবে কেউ কেউ হতাশার কথাও জানিয়েছেন। এবার ভোগান্তির অপর নাম ঢাকা বাইপাস সড়ক। কুড়িল থেকে রাজধানীমুখি লোকজন সহজে যাতায়াত করতে পারলেও এশিয়ান বা ঢাকা বাইপাস সড়কের কারণে যাতায়াত ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। একদিকে কাজ চলমান অন্যদিকে কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায় নিয়ে সমস্যা তৈরী হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে মেলার আয়োজকরা পদক্ষেপ নিলেও কোন প্রকার সুরাহা পাননি বলে জানিয়েছেন মেলার আয়োজকরা।

মেলার অভ্যন্তরীণ বেশির ভাগ বিদেশী পণ্যের স্টল পাওয়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার মেলায় আগতরা দেখছেন কিন্তু কিনছেন না। নতুন প্যাভিলিয়ন দেখতেই ভিড় করেন অনেকে। ফলে বেচাবিক্রি কম। পিতলগঞ্জ থেকে আসা দর্শনার্থী দিদারুল আলম বলেন, মেলার শুরুতে যেভাবে বেশি দাম হাঁকাচ্ছে। এতে নিন্ম আয়ের লোকজন খুব একটা খুশি হতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের উচিত মেলার পণ্যের দাম সহনীয় করে দেয়া।

মেলায় ৩৩৬টি স্টলের প্রায় ৩ শত স্টল সেজেছে তাদের নিজস্ব পণ্যে। তাদের আশা ১ম সপ্তাহে তেমন না জমলেও পরবর্তি সরকারী ছুটির দিনের আশায় রয়েছেন তারা। আয়োজক সংশ্লিষ্টদের দাবি, গতবারের তুলনায় এবার মেলায় দর্শনার্থী হবে তিনগুণের চেয়ে বেশি। যাতায়াত ব্যবস্থায় উন্নতির কারণে আশাবাদি তারা।

দেশি-বিদেশি স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা ও কেনাকাটা সারতে গিয়ে ক্লান্ত হলে অবশ্য স্বল্প পরিসরে বসে বিশ্রামের জায়গাও রেখেছে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ ইপিবি। তবে তারা কোথাও বিনামূল্যের পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা এখনো রাখেনি; যা থাকা দরকার বলে মনে করেন মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।

এক দর্শনার্থী বলেন, এখানে কোথাও কোনো পানির বুথ খুঁজে পাইনি। এদিকে খাবারের দোকানেও কোনো পানি বিক্রি করছে না। কিনতে চাইলে তারা বলছে যে খালি পানি বিক্রি করছে না। পানি কিনতে হলে সঙ্গে অবশ্যই অন্য কোনো খাবার কিনতে হবে। এখানে পরিবেশ বেশ সুন্দর তবে পানির ব্যবস্থা থাকলে বেশ ভালো হতো। এবিষয়ে ইপিবির সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে আগামী শুক্রবারের আগেই বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

বিক্রেতারা বলেন, মেলার শুরু হিসেবে ভালোই ক্রেতা সমাগম রয়েছে। আশা রাখছি, সামনে আরও ভিড় হবে।
এক ক্রেতা-দর্শনার্থী বলেন, যতটুকু ঘুরলাম, এতে ভালোই লাগছে। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই হয়েছে, তবে যাতায়াত ব্যবস্থা আরও উন্নত হলে ভালো হতো। এখন একটু ভিড় কম। বিদেশি স্টলগুলোর পণ্য বেশ ভালো লেগেছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাণিজ্য মেলার আগের স্থান থেকে পূর্বাচলের মেলা প্রাঙ্গণের দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ১৭ কিলোমিটার। বিমানবন্দর, মিরপুর, টঙ্গী, বনানী, গুলশান, বারিধারা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, নদ্দা, রামপুরা, বনশ্রী এমনকি জয়দেবপুর, গাজীপুর এলাকার বাসিন্দারা কুড়িল ফ্লাইওভার ব্যবহার করে তিনশ ফিট দিয়ে মেলায় আসতে পারবেন সহজেই। যাদের নিজস্ব পরিবহন নেই তারা গণপরিবহনে কুড়িল পর্যন্ত এসে সেখান থেকে বিআরটিসির বাসে মেলায় আসতে পারবেন সরাসরি। কুড়িল থেকে বিআরটিসি বাসে মেলা পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট বা তারও কম।

বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে ৩০টি বিশেষ বাস চালু করেছে বিআরটিসি। এসব বাসে কুড়িল থেকে মেলা পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা। এ ছাড়া মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর থেকেও বিআরটিসির বাস মেলা পর্যন্ত চলাচল করছে।
মেলায় আগতদের সুবিধার্থে কুড়িল থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত সড়কটি মেরামতও করা হয়েছে। দুই লেনে গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কটি এখন প্রস্তুত। পাঁচটি আন্ডারপাসের কাজও চলছে দ্রুত। যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মান্ডা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, বাসাবো, মাদারটেক, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, শনিরআখড়া, সাইনবোর্ড ও নারায়ণগঞ্জ থেকে যারা মেলায় আসবেন তারা গুলিস্তান থেকে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড ধরে গাউছিয়া ও কাঞ্চন ব্রিজ পার হয়ে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে পারেন।

মেলা থেকে ফেরার পথে কাঞ্চন ব্রিজের নিচের রাস্তায় ইউটার্নের কারণেও কিছুটা যানজট হচ্ছে। তবে আয়োজকদের অভিমত, ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা বাড়লে এ সমস্যা থাকবে না। মেলায় আসা-যাওয়ার জন্য সড়কটি নিরাপদ বলেও অভিমত তাদের। কেনাকাটার পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে বঙ্গবন্ধু স্টলে পাওয়া যাবে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সম্পর্কিত দুর্লভ কিছু ছবি। মেলা প্রাঙ্গণে বিশাল জলাশয়ে ভাসমান শাপলা যে কারও মন ছুঁয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন দর্শকরা।

এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্কসহ অংশ নিয়েছে ১২টি দেশ। মেলায় ঢুকতে শিশুদের জন্য ২০ টাকা ও বড়দের জন্য ৪০ টাকা মূল্যের টিকিট রাখা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন