রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দর্শনার্থী থাকলেও শুরু হয়নি কেনা-বেচা

২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

শৈত প্রবাহের প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যমেলার আসরে। তাই মেলা উদ্বোধনের প্রথম সপ্তাহে আশানুরূপ ক্রেতা ও দর্শনার্থী পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আবার মেলার অভ্যন্তরীণ স্টলগুলোও প্রস্তুত হয়নি এতোদিনে। তবে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থী আসলেও বিক্রি নেই খুব একটা। এদিকে মেলায় থাকা বঙ্গবন্ধু গ্যালারীতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ভিড়। তারা বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও দেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে জানতে পেরে খুশি।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন সেন্টারে গত ১লা জানুয়ারী ২য় বারের মতো স্বশরীরে মেলা উদ্বোধনের ১ম সপ্তাহে জমে ওঠেনি কেনা-বেচা। স্টল প্রস্তুতে কারিগরদের হাতুরি পেটার ঠকঠক শব্দে মেলায় আসায় দর্শনার্থীরা যেন হতাশ। তবে দেরি করে স্টল পাওয়ায় এমন অপ্রস্তুতের কথা জানিয়েছেন স্টল সংশ্লিষ্টরা। মেলায় কাজ করা স্টল নির্মাণ শ্রমিক মতিউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এবার দেরি করে স্টল পেয়েছি। আমার মতো আরো অনেকেই নানা সমস্যার কারণে দেরি করে স্টল পেয়েছে। তারাও দেরিতে কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে মেলায় পুরোপুরি সাজানো স্টলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও নেই আগের তুলনায়। শৈত প্রবাহের প্রভাবে এমন পরিস্থিতি বলছেন ব্যবসায়ীরা। মিনিস্টার নামীয় প্রতিষ্ঠানের মোতালেব মিয়া বলেন, মেলার শুরুতে জমে না। ফলে যারা আসেন তারা দেখছেন বেশি, কিনছেন কম। তবে হতাশার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ। এমন হতাশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ বিদেশী পণ্যের স্টল পাওয়া ব্যবসায়ীরা। ভারতের কাশ্মীর থেকে আসা ব্যবসায়ী অনিক হায়দার বলেন, এখন শুধু আসে, দেখে, হাতিয়ে তলিয়ে এরপর সোজা চলে যান। বেচাকেনা এখনো জমেনি। শীতের কারণে দর্শনার্থী কিছুটা কম। দিনাজপুর থেকে আসা দর্শনার্থী মহসিন মিয়া বলেন, মেলার শুরুতে যেভাবে বেশি দাম হাকাচ্ছে। এতে নিন্ম আয়ের লোকজন খুব একটা খুশি হতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের উচিত মেলার পণ্যের দাম সহনীয় করে দেয়া।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ক্যাম্প ইনচার্জ (উপ পরিদর্শক) মনির হোসেন বলেন, ২৭তম আসরের এ মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন প্রায় ৭০০ পুলিশ এবং বসানো হয়েছে ৩০০ সিসিটিভি ক্যামেরা। মেলার থাকা ৩৩৬টি স্টলের প্রায় ৩০০ স্টল সেজেছে তাদের নিজস্ব পণ্যে। তাদের প্রথম সপ্তাহে তেমন না জমলেও পরবর্তি সরকারী ছুটির দিনের আশায় রয়েছেন তারা। আয়োজক সংশ্লিষ্টদের দাবি, গতবারের তুলনায় এবার মেলায় দর্শনার্থী হবে ৩ গুণের চেয়ে বেশি। যাতায়াত ব্যবস্থায় উন্নতির কারণে আশাবাদি তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফটক ব্যবস্থাপনা ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রূপগঞ্জ ইউপি সদস্য রিটন প্রধান বলেন, করোনা পরবর্তি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের ২য় বারের আয়োজন সফল করতে কর্তৃপক্ষের নানা পদক্ষেপ থাকলেও হতাশা যেন কাটছেই না। তবে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছেন সরকারী ছুটির দিনের। যেদিন পরিপূর্ণ হয় লাখো দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগমে।

প্রধানমন্ত্রী এবারের ২৭তম আসর স্বশরীরে উপস্থিত থাকায় এবং আয়োজনের পরিধি বাড়ানোর কারণে দেশি বিদেশী দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি। তাই এবার আয়োজনে রাখা হয়েছে পরিসর বৃদ্ধির সব আয়োজন। এমনটাই জানালেন মেলার পরিচালক রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। এদিকে মেলার আয়োজনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতিতেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানী তাদের স্টলে কেনাবেচার অপেক্ষায় রয়েছেন। গতবারের চেয়ে এবার মেলায় বাড়বে দর্শনার্থী। কেনাকাটাও হবে আগের তুলনায় দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ। এবার তাদের প্রত্যাশার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি হওয়ার আশা করছেন তারা।

রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা আগত দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয় দেখভাল করবেন। সাদা পোশাকেও বিশেষ দল নিরাপত্তায় কাজ শুরু করেছেন। ফলে নিরাপদ পরিবেশে এ মেলা পুরোপুরি জমে ওঠবে।
ইবিপির দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বাণিজ্য মেলায় মোট ৩৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্কয়ার ফুট হিসেবে একেক দোকানের মূল্য একেক রকম ধরা হয়েছে। এবারের বাণিজ্য মেলায় আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের নিজস্ব জায়গায় (প্রায় ১,৫৫,০০০ বর্গফুট) আয়তনের ২টি হলে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবছর দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্কসহ ১১টি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার লক্ষ্যে কুড়িল বিশ^রোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য বিআরটিসির ৬৫টি বাস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শারিরিক প্রতিবন্ধি ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন