বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিমানবন্দরের ভাবমর্যাদা ও যাত্রীসেবা বাড়াতে হবে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। পাশাপাশি তিনি ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ নামে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দু’টি ড্রিম লাইনার্স এয়ারক্রাফট এবং বিমানের বুকিংয়ের একটি মোবাইল অ্যাপও উদ্বোধন করেছেন। এ উপলক্ষে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং যাত্রীদের সেবা ও সুবিধাদি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রায় চার দশক আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মিত হলেও এর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও শ্রীবৃদ্ধিতে আজ অবধি তেমন কোনো বড় কাজ হয়নি। এই প্রথমবারের মতো একটি টার্মিনাল নির্মাণের মতো বিশাল কর্মকা-ের সূচনা হলো। সঙ্গতকারণেই আশা করা যায়, টার্মিনালটি নির্মিত হলে বিমানবন্দরের সক্ষমতা ও যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পাবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালের মোট স্পেসের পরিমাণ ১০ লাখ বর্গফুট। আর তৃতীয় টার্মিনালের স্পেস ২২ লাখ বর্গফুটেরও বেশি। বর্তমানে দুই টার্মিনালের যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে ৮০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল হলে প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ২০ লাখ ও পরবর্তীতে ১ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া কার্গো ধারণক্ষমতা যেখান এখন ২ লাখ টনের মতো, সেখানে তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫ লাখ টনে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মিত হলে বিমানবন্দর হবে অত্যাধুনিক, বিশ্বমানের এবং আরো চিত্তাকর্ষক। জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। চার বছরে নির্মাণকাজ শেষ হবে। টার্মিনাল বিল্ডিং হবে তিনতলাবিশিষ্ট। আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার মিটার। জাপানের মিটসুবিসি ও ফুজিটা এবং কোরিয়ার স্যামসাং এটি তৈরি করবে। এতে চেক ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি, আগমন ও বহির্গমন ডেস্ক থাকবে ৬৪টি করে। থাকবে ২৭টি লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ৪০টি স্ক্যানিং মেশিন, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি ক্যারউজাল ও ১১টি বডি স্ক্যানার। থাকবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। আরো থাকবে ৬৩ হাজার বর্গ মিটার এলাকাজুড়ে আমদানি-রফতানির কার্গো কমপ্লেক্স এবং ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গ মিটারের এয়ার ক্রাফট এপ্রোন। পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, পাওয়ার প্লান্ট ও পাওয়ার সরবরাহ ব্যবস্থা, এয়ারফিল্ড লাইটিংয়ের ব্যবস্থা ইদ্যাদিও থাকবে। প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ অর্থের যোগান দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জাইকা)। অবশিষ্ট অর্থ দেবে সরকার।

হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে এখন আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সম্ভবপর হচ্ছে না। প্রতি বছর এই বিমানবন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বর্ধিত ও উন্নত সেবার চাহিদাও বাড়ছে। এখন সারা বছর ৮০ লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। ২০২৫ সাল নাগাদ যাত্রী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০৩৫ সালে তা গিয়ে পৌঁছাবে প্রায় ২ কোটি ৪৮ লাখে। সুতরাং সময়ের চাহিদা পূরণে এর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের চিন্তা ও পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। এর নির্মাণ কাজ শুরু করতে ইতোমধ্যেই অবশ্য তিন বছর বিলম্ব হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ সম্পন্ন হলে ২০২৩ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। আমরা বলতে চাচ্ছি, সময় খুব বেশি নেই। দ্রুতই কাজ শেষ করতে হবে, যাতে এর কার্যকর ব্যবহার সম্ভবপর হয়ে ওঠে। বিমানযাত্রীর সংখ্যাই ক্রমাগত বাড়ছে না, সেই সঙ্গে মালামাল পরিবহনও বাড়ছে। আমরা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিমানবন্দরের সক্ষমতা ও যাত্রীসেবা বাড়তে পারিনি। বাড়াতে পারিনি মালামাল পরিবহনের সুবিধাও। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সেবার মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। যাত্রীদের হয়রানি ও পেরেশানি, অসুবিধা ও সমস্যার কোনো শেষ নেই। মালামাল পরিবহনের অব্যবস্থা ও ভাড়ী বৃদ্ধির কারণে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিহার করে কলিকাতা ও কলম্বো বিমানবন্দরের শরণাপন্ন হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিদ্যমান সক্ষমতার মধ্যেই কীভাবে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা, যাত্রীসেবা ও মালামাল পরিবহনের সুবিধা অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো বাড়ানো যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে কোনো দেশের পরিচয়ের ফলক হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। বিমান বন্দর দেখেই দেশ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণার জন্ম হয়। দেশটি কতটা সুশৃঙ্খল, নিরাপদ, অভয়, সততানিষ্ঠা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং দেশের মানুষ কেমন সজ্জন, ভদ্র ও সদাচারী, সহৃদয় ও অতিথিবৎসল বিমানবন্দরে নেমেই তা উপলব্ধি করা যায়। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে কোনো বিদেশীরই বাংলাদেশ সম্পর্কে এবং তার অধিবাসীদের সম্পর্কে উত্তম ধারণা জন্মায় না। প্রথমেই তারা বিশৃঙ্খলা, হৈচৈ দেখতে পেয়ে বিবৃত ও হতাশ হয়ে পড়ে। বিমানবন্দরের কার্যক্রমে দায়িত্বশীলদের আচার-ব্যবহারে সেটা আরো বৃদ্ধি পায়। বিমানবন্দর থেকে বাইরে বেরিয়ে তারা যে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখে পড়ে, তা তাদের কাছে কল্পনারও অতীত। বিদেশি পর্যটন, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের কার্যত ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয়। বিমানবন্দরের সামনে বিশ্রী টানাটানির মুখে যেমন পড়তে হয় তেমনি একটু এগুলেই আবর্জনার স্তূপ থেকে বেরিয়ে আসা গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার দশা হয়। এরপর অভূতপূর্ব যানজট তো আছেই। নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়। বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদেশীদের বাংলাদেশ বিমুখ হওয়ার বড় কারণ এটাই। কাজেই তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণই যথেষ্ট হবে না, বিমানবন্দরে গোটা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করতে হবে। সহজ ও মসৃণ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সকল সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। যাতায়াত নিরাপদ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন