শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলামে সালামের গুরুত্ব ও নীতিমালা

ফিরোজ আহমাদ | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২০, ৮:৫৮ পিএম

আল্লাহ আমাদের রিজিক দাতা। তিনি আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানোর পূর্বে রিজিকের ব্যাবস্থা করে রেখেছেন। আমাদের রিজিক বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার রয়েছে। আল্লাহতায়ালার দেয়া নেয়ামত খাদ্য সামগ্রী গুদামজাত করে মানুষকে কষ্ট দেয়া মোনাফেকদের কাজ। অতি মুনাফার লোভে বাজারে সরবারহ বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দেয়ার ফলে গোনাহগার হতে হবে। প্রয়োজনের অধিক গুদামজাতকরণের ফলে মানুষের রিজিক সংকুচিত হয়ে পড়ে। মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। মানুষের দুঃখ দুর্দশা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।

আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বাজারে সরবরাহ অব্যাহত রাখলে ব্যবসা তখন দৈনন্দিন ইবাদতের অংশে পরিণত হয়ে যায়। কোনো একজন ব্যবসায়ীর সরবরাহকৃত পণ্যে নায্য মূল্যে খরিদ করে, পরিধান করে কিংবা খেয়ে যদি কোনো ব্যাক্তি আমল ইবাদত করে, ঐ ব্যক্তির আমলের ফজিলতের একটি অংশ বাজারে পণ্যে সরবরাহকারী ব্যবসায়ী পাবেন। কারণ ঐ ব্যবসায়ীর বাজারে সরবরাহ অব্যাহত রাখার পিছনে আল্লাহর সৃষ্টির মানুষের খেদমত করার উদ্দেশ্যে ছিলো।
বাজারে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা একটি উত্তম ইবাদত। অন্যদিকে খাদ্য দ্রব্য গুদামজাত করা একটি গোনাহের কাজ। হযরত রাসূল (সা) এর মতে, যারা মানুষের রিজিক সংকুচিত করার ন্যায় ঘৃণ্য কাজ করে তারা অভিশপ্ত। হযরত মা’মার (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্য দ্রব্য গুদামজাত করে, সে গুরুতর অপরাধী। খাদ্যদব্য গুদামজাতকারী গোনাহগার হিসেবে বিবেচিত হবে।’ (মুসলিম শরীফ)। হযরত উমর (রা) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, ‘আমদানীকারক মুনাফা অর্জন করবে। পক্ষান্তরে গুদামজাতকারী অভিশপ্ত হিসেবে চিহিৃত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, দারেমী)।
একজন মোমিন ব্যক্তি অপর মোমিন ব্যাক্তির ভাই ও বন্ধু। এক ভাই অপর ভাইকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিলে আল্লাহর পক্ষ আজাব গজব নেমে আসবে। হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের উপর অভাব-অভিযোগ সৃষ্টির লক্ষে খাদ্য বস্তু গুদামজাত করবে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দারিদ্র্যতা এবং কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান)। হযরত আবু উমামা (রা) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি চল্লিশ পর্যন্ত খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, সে তার মাল দান করে দিলেও তার গুনাহ ক্ষমার জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (রাযীন)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, কোন বান্দা হারাম পন্থায় উপাজিত অর্থ দান খয়রাত করলে তা কবুল হবে না এবং নিজ কাজে ব্যয় করলে তাতে বরকত হবে না। আর এরূপ অর্থ তার ওয়ারিসদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য দোযখের মূলধন হবে। (আহমদ, শরহে সুন্নাহ)।
যে সকল ব্যবসায়ীরা মানুষকে কষ্ট দেয় না, তারা মোমিনের দলভূক্ত। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এরা এমন লোক (মোমিন ব্যবসায়ী) যাদেরকে ব্যবসা বাণিজ্য ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর শ্নরণ থেকে বিরত রাখে না, সালাত কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টি সমূহ উল্টে যাবে। পরিণামে তাদের সৎ কাজের জন্য আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন।’ (সূরা নূর:৩৭-৩৮)। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক এবং শহীদের সাথে থাকবে।’ (তিরমিজি)।
সুতরাং মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করার উদ্দেশ্যে বাজারে সরবরাহ অব্যাহত রাখলে ব্যবসায় বকরত বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করবেন। আল্লাহতায়ালা বাজারে সরবরাহকারী ভাইদের ব্যবসার উপর বরকত দান করুক। আমীন

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন