রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

ফেডারেশন কাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা

ইতিহাস গড়া হল না রহমতগঞ্জের

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ৮:২০ পিএম

দেশের ফুটবলে ইতিহাস গড়া হল না পুরান ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির। ফেডারেশন কাপের নতুন চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতে নিল বসুন্ধরা কিংস। রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টিভিএস ফেডারেশন কাপের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে বসুন্ধরা ২-১ গোলে রহমতগঞ্জকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে। বিজয়ী দলের হয়ে কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস একাই দু’গোল করেন। রহমতগঞ্জের পক্ষে এক গোল শোধ দেন গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড মামুদু বাহ। এটা বসুন্ধরা কিংসের প্রথম ফেডারেশন কাপ ট্রফি জয়। এর আগে গেল মৌসুমে অভিষেক আসরের ফাইনালে খেললেও ঢাকা আবাহনীর কাছে ৩-১ গোলে হেরে ফেডারেশন কাপের সোনালী ট্রফি হাতছাড়া হয় তাদের। যদিও পরে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে হতাশা কাটায় দলটি। তবে ফেডারেশন কাপের ব্যর্থতা গেল বছরজুড়ে তাড়িয়ে বেড়ায় বসুন্ধরাকে। অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘুচলো। বসুন্ধরা কিংসের শিরোপা জয়ের মধ্যে দিয়ে ৮ বছর পর নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পেলো ফেডারেশন কাপ। ২০১২ সালে সর্বশেষ নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।

এবার মৌসুম সূচক টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপে দুর্দান্ত খেলে গ্রুপ পর্ব, কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনাল পেরিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে বসুন্ধরা। আর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ট্রফিও জিতে নেয় দলটি। তবে রহমতগঞ্জও নজর কেড়েছে এবারের আসরে। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৮৭ বছরের মধ্যে পুরান ঢাকার দলটি প্রথমবার ঘরোয়া কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ে। তাদের সামনে ছিল আরেক ইতিহাস গড়ার হাতছানি। এর আগে লিগ বা অন্য কোন টুর্নামেন্টের ট্রফি জিততে পারেনি রহমতগঞ্জ। এবারের ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হলে ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটির জন্য তা হতো নতুন ইতিহাস গড়া। কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়নি তাদের। ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে পারেননি রহমতগঞ্জের ফুটবলাররা। প্রতিবেশী ক্লাব ফরাশগঞ্জের পাশে নাম ওঠেনি কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানির দলের।

রোববার ফাইনালে শুরু থেকেই দু’দল আক্রমণাতœক ফুটবল উপহার দিয়ে ম্যাচকে উপভোগ্য করে তোলে। স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে উপস্থিত দু’দলের কয়েক হাজার সমর্থক মনে ভরে খেলা উপভোগ করেন। ফাইনালটি ঠিক ফাইনালের মতই হয়েছে। সেমিফাইনালে এতিহ্যবাহী মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করা রহমতগঞ্জকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বলেই পাঁচ ডিফেন্ডারকে নিয়ে এদিন দল সাজান বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন। আক্রমণভাগে নেতৃত্ব দেন কলিন্দ্রেস ও মতিন মিয়া। মূলত সব ম্যাচেই আক্রমণে শক্তিশালী বসুন্ধরা এ দু’জনের ওপরই ভরসা রাখেন। সিলেটের ফরোয়ার্ড মতিনের গতিতে ফেডা কাপের ফাইনালে বারবার পরাস্ত হন রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডাররা। তবে সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন কলিন্দ্রেসই। তার জোড়া গোলই বসুন্ধরাকে এনে দেয় সোনালী ট্রফি। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা চললেও ম্যাচের ৪১ মিনিটে প্রথম গোল পায় বসুন্ধরা। এসময় ডানপ্রান্ত দিয়ে বিশ^নাথের উড়ন্ত ক্রসে আসা বল লাফিয়ে ওঠে হেডের মাধ্যমে গোলে পরিণত করেন কলিন্দ্রেস (১-০)। উৎসবে মেতে ওঠে কিংসের গ্যালারি। অবশ্য বিরতির পর সমর্থকদের সেই উচ্ছ্বাস মিইয়ে যায় রহমতগঞ্জের গোলে। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে বাঁমপ্রান্ত থেকে শাহেদুল আলমের কর্নারে মামুদু বাহ চমৎকার হেডে বল বসুন্ধরার জালে ফেললে রহমতগঞ্জ গ্যালারিতে ওঠে গগনবিদারী আওয়াজ (১-১)। বাদ্যযান্ত্র আর ভুভুজেলা বাজিয়ে উচ্ছাস করতে থাকেন সমর্থকরা। কিন্তু ৭৬ মিনিটে পুরান ঢাকার দলটির স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটর। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ খেললেও ফাইনালে হঠাৎই যেন তিনি আবির্ভাব হন ভিলেন রূপে। লিটনের হাস্যকর এক ভুলেই সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় রহমতগঞ্জের। বলতে গেলে বসুন্ধরাকে গোল উপহারই দেন লিটন। কামারা ইউনুসের ব্যাক পাসে বল পান রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক। শট না মেরে কলিন্দ্রেসের সঙ্গে ড্রিবলিং করতে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রন হারান লিটন। সেই সুযোগে বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় আলতো শটে গোল করে ফের উচ্ছ্বাসে মাতান কিংসের সমর্থকদের (২-১)। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানের জয় পেয়েই ফেডারেশন কাপের সোনালী ট্রফি নিয়ে মাঠ ছাড়ে বসুন্ধরা।

এক নজরে ফেডারেশন কাপ

চ্যাম্পিয়ন- বসুন্ধরা কিংস (ট্রফি, মেডেল ও ৫ লাখ টাকা)

রানার্সআপ- রহমতগঞ্জ (ট্রফি, মেডেল ও ৩ লাখ টাকা)

ম্যাচ সেরা- বিশ্বনাথ ঘোষ (বসুন্ধরা কিংস)

টুর্নামেন্ট সেরা- ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস (বসুন্ধরা কিংস)

সর্বোচ্চ গোলাদাতা- সিডনি রিভেরা (পুলিশ ক্লাব, ৪ গোল)

ফেয়ার প্লে ট্রফি- ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন