বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তিস্তায় জেগেছে ৫৮ চর

খাল-বালুচরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে সেতু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পৌষ মাসেই তিস্তা নদী শুকিয়ে এখন মরুভ‚মি। পায়ে হেটে নদীর পার হচ্ছে মানুষ। মানবিক কারণে ফেনী নদীর পানি ভারতের ত্রিপুরাকে দেয়া হয়; অথচ এক যুগ ধরে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত। উত্তরের গজল ডোবা দিয়ে পানি উঠিয়ে নেয়ায় তিস্তার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন বালুচর। দফায় বন্যার পর তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে বালুচর। নদী খনন, শাসন, ড্রেজিং ও সংরক্ষণ না করায় উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে আবাদি জমিতে রূপ নিয়েছে তিস্তা। নদীর কাউনিয়া ব্রীজ পয়েন্টে গেলে দেখা যায় চর জেগে ছোট ছোট নালার মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

তিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এ নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। তিস্তা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের প্রধান নদী। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখাও বলা হয়। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নিলফামারি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ নদীর বাংলাদেশ অংশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন চর জেগেছে। গজল ডোবায় ভারতের একতরফা পানি উঠিয়ে নেয়ার কারণে বাংলাদেশ অংশ তিস্তা এখন মৃতপ্রায়। পানির অভাবে অনেকেই পেশা বদল করেছেন। বিপন্ন হয়েছে জীববৈচিত্র। নদীপাড়ের মানুষ বাধ্য হয়েই তিস্তার বালুচরে বিভিন্ন ফসল বুনেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড স‚ত্রে জানা যায়, তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। তবে নদী খনন করে পানিপ্রবাহ ধরে রাখা সম্ভব। এর মধ্যে ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে তিস্তা। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১৬৫ কিলোমিটার।

এই দীর্ঘ তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশেই জেগে উঠেছে ৫৮টি চর। কোনো কোনো বালুচরে সবুজের মাঠে ফসল ফলাতে বাধ্য হয়েছে কৃষকরা। তারা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ আলু, ভুট্টা, কাঁচা মরিচ, মসুর ডাল, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন ও তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল বুনেছেন। কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর এলাকার মানুষ জানান, পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ পাওয়া যায় না। তারা পেশা বদল করে বাধ্য হয়েই অন্য পেশায় চলে গেছেন। কেউ কেউ মাদাম, রসুন, তরমুজের চাষাবাদ করছেন। মূলত তারা নদীর চরে সবুজ দেখতে চান না, চান নদীতে থৈথৈ পানি।

দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতু, সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু দাঁড়িয়ে আছে বালুচরের ওপর। পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায় তিস্তা নদী। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা দুঃখ করে বলেন, তিস্তা এখন নদী নয়, আবাদি জমি। তিস্তার বুকে মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে ছুটে চলা জেলেদের দৌড়ঝাঁপ নেই। পুরো তিস্তা বালুচর। সেখানে ফসল বুনেছেন কৃষকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, নদী তিস্তা এখন মরুভ‚মি। তিস্তার বুকে নানা ধরনের ফসল। বিভিন্ন ফসলের পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। সবুজ মাঠে ফসল ফলায় তাদের খুশির চেয়ে হতাশাই বেশি। হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের পাসশেখ সুন্দর গ্রামের হাশেস আলী বলেন, দুই বিঘা আবাদি জমি তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে আমার। বর্তমানে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে আবাদ করেছি। জমিতে ভুট্টা, মসুর ডাল, মিষ্টি কুমড়া লাগিয়েছি। ভালো ফসল পাব। তবে নদীতে পানি থাকলে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করা যেত। লালমনিরহাটের চররাজপুর এলাকার আকবার হোসেন বলেন, তিস্তায় পানি নেই। নদীর ওপর দিয়ে হাঁটা যায়। প্রতি বছর এই সময়ে তিস্তায় পানি থাকে না। বাধ্য হয়েই জমিতে ফসল ফলাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসে বালু। ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বছর বছর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদীগুলো হারাতে বসেছে ঐতিহ্য। নদীতে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা অসহায় জীবন যাপন করছেন। পানি না থাকায় জেলেরা পেশা বদল করে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। নদীর পানি শুকিয়ে মরুভ‚মিতে পরিণত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। পানি না থাকায় দুর্দিন চলছে মৎস্যজীবীদের।

তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প স‚ত্র জানায়, বর্তমানে তিস্তায় পানি রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কিউসেক। প্রকল্প এলাকায় সেচ দেয়া এবং নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক পানি। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা পানি থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক। নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় চার হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। কিন্তু তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি নেই। শুষ্ক মৌসুমে ব্যারাজ পয়েন্টে কয়েক বছর ধরে পাওয়া যায় ৫০০ কিউসেক পানি। ব্যারাজের সবকটি জলকপাট বন্ধ রেখে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ করায় নদীর ভাটিতে প্রবাহ থাকছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ ধরে রাখার চেষ্টা করছি। উজান থেকে পানি কম আসায় এবার সেচযোগ্য জমি কমে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, জানুয়ারির শুরুতেই তিস্তার পানি শুকিয়ে যায়। সেখানে চাষাবাদ করেন কৃষকরা।

প্রায় ২০ বছর ধরে তিস্তা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন লালমনিরহাটের গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানি গ্রামের ৫০ বছর বয়সী আকবর আলী। তিনি বলেন, এখন নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। তিস্তা এখন মরুভ‚মি। বড় কষ্টে আছি। গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আতিয়ার রহমান বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে তিস্তা নদী। জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এই চরে কৃষকরা চাষবাদ শুরু করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Mohammed Kowaj Ali khan ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
খোনি ভারত আর ভারতীয় দালাল ওরা তিস্তাকে খোন করিয়াছে।
Total Reply(0)
salman ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:০২ এএম says : 0
........, ......... der Bondhu, Provu hotay paray, but Bangladesh JATIR SOTRU
Total Reply(0)
motiur rahman ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১৫ পিএম says : 0
bharot amadir bondhu desh nijir rokto dia amadir sadhin kori diacha. tai bondhuttir abodan hisibi nodi somuhir pani bondho kori amader chasi jomi toyri kori diccha !
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন