শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কঠোর অবস্থানে চট্টগ্রাম কাস্টমস

মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৫ এএম

মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা বেড়েই চলছে। বাড়ছে অর্থ পাচারের ঘটনাও। চট্টগ্রাম বন্দরে একের পর এক চালান আটক হলেও জালিয়াত চক্রের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এতে করে চাপের মুখে পড়েছে রাজস্ব আহরণ। এ অবস্থায় মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

শুল্কফাঁকির সাথে জড়িত আমদানিকারকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দিক নির্দেশনা চেয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম একটি সুপারিশ দিয়েছেন। এদিকে কাস্টম হাউসের এই উদ্যোগের প্রতিবাদে গতকাল পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কাজ বন্ধ করে দেয় ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট এসোসিয়েশন ও তাদের কর্মচারীরা। এতে করে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শুল্কায়ন পক্রিয়া ও রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হয়। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুল্কফাঁকির সাথে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগের বিরুদ্ধে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের এমন কর্মসূচিকে কাস্টম হাউসকে চাপে ফেলার কৌশল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের আমদানি রফতানির প্রায় ৯০ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রাজস্ব আয়ের একক বৃহত্তম যোগানদার চট্টগ্রাম বন্দরভিত্তিক এই কাস্টম হাউস। অসাধু আমদানিকারকদের একটি চক্র প্রতিনিয়ত মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে একদিকে শুল্কফাঁকি দিচ্ছে অন্যদিকে অর্থ পাচার করছে। প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় সাম্প্রতিককালে এ প্রবণতারোধে ব্যাপক উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এরফলে প্রতিদিনই চট্টগ্রাম বন্দরে ছোট বড় একাধিক চালান ধরা পড়ছে।

সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই কেবল এসব চালান আটক করা হয়। তবে বেশিরভাগ চালান নিরাপদে চলে যায়। এতে করে রাজস্ব আহরণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ প্রবণতারোধে আমদানিকারকদের পাশাপাশি পণ্য খালাসে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধেও লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশের সকল কাস্টম হাউস ও স্টেশনগুলোকে দিক নির্দেশনা দিতে এনবিআর বরাবরে সুপারিশ পেশ করেন চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার।

গত ১২ জানুয়ারি প্রেরিত সুপারিশে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন কাস্টম হাউস ও স্টেশনে ঘোষণার বহিভর্‚ত, ঘোষণা অতিরিক্ত এবং আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আনা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় আমদানিকারকের বিরুদ্ধে কাস্টম আইন অনুযায়ী জরিমানা আরোপসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে লাইসেন্সিং রুলের আওতায় ব্যবস্থা নেয়ারও বিধান আছে। কাস্টম কমিশনার বলেন, উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরও এ প্রবণতা আশানুরূপ কমছে না। এর অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া। এ জালিয়াত চক্রের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কিছু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। কাস্টম আইনে এ ধরনের অপরাধের জন্য আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে সমভাবে দায়ী। এ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন হলে শুল্কফাঁকির এমন প্রবণতা কমবে বলে মত দেন কাস্টম কমিশনার।

কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কফাঁকি দিয়েছে এমন অনেক আমদানিকারক আবার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালিক। এক্ষেত্রে শুল্কফাঁকির জন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। কাস্টম হাউসের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কাস্টমসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাও বেনামে কিংবা স্বজনদের নামে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি এবং শুল্কফাঁকি রোধে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।

কাস্টম কমিশনারের এমন সুপারিশের খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কাজ বন্ধ করে দেয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন ও তাদের কর্মচারীরা। ওই চিঠি প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবিতে এমন কর্মসূচি শুরু করে তারা। দিনভর কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়া বন্ধ রাখে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকর্মীরা। এতে করে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। কাস্টম হাউসে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজারের মত বিল অব এন্ট্রি জমা হয়। আগের দিনের শুল্কায়নের আমদানি পণ্য বন্দর থেকে গতকাল খালাস হয়। শুল্কায়ন বন্ধ থাকায় তবে আজ বুধবার থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গতকাল কাস্টম কমিশনারের সাথে দেখা করে এসোসিয়েশনের সিনিয়র নেতারা ওই চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানান। কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, যারা শুল্কফাঁকি এবং জালিয়াতির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ক্ষুব্ধ হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য খালাস ও রফতানি পণ্য জাহাজীকরণের ক্ষেত্রে শুল্কায়নের কাজ করে চট্টগ্রামে তিন হাজারেরও বেশি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান। তাদের অধীনে প্রায় ১২ হাজার কর্মচারী আছেন। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু ইনকিলাবকে বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে আমরা ক্ষুদ্ধ। কারণ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা অনেকটা উকিলের কাজ করে। পণ্য আনে আমদানিকারক। আমরা শুধু শুল্কায়নের কাজটা করে দিই। এখন আমদানিকারকের অপরাধে যদি আমাদের লাইসেন্স বাতিলের পাঁয়তারা করা হয়, আমরা তা মানব না।

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদারি প্রবণতা বাড়ার জন্য কাস্টমকে দায়ী করে তিনি বলেন, দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামা করে। কাস্টমসের ডাটাবেইজে তার কোনো প্রতিফলন নেই। কায়িক পরীক্ষার নামে কিছু কাস্টম কর্মকর্তা চাঁদাবাজিতে লিপ্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এতে আমদানিকারকরা নিরূৎসাহিত হচ্ছে। তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

এদিকে ১০ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬ টা থেকে কাস্টম হাউসে আমদানি নথি জমা দেয়া শুরু করেছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। এতে করে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সচল হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন নেতারা জানান, কাস্টম কমিশনারের সাথে বৈঠক শেষে তারা অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। কমিশনার তাদের ৮ দফা দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন