মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন শেষে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই তাগিদ উচ্চারণ করেন। কর্মসংস্থানের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরো কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর সম্ভাবনা সামনে রেখে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে সরকার চালানোর পর মুসলিম বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর এই তাগিদে বাংলাদেশের পুরনো নীতি ও ঐতিহ্যগত বার্তাই উচ্চারিত হয়েছে। আঞ্চলিক ও চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর এই তাগিদ ও নির্দেশনা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষেত্রে একটি নতুন প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলতে পারে। তবে শুধু তাগিদ ও নির্দেশনা দিলেই হবে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও ক‚টনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত গেøাবালাইজেশেনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বিশ্বকে ‘বৈশ্বিক পল্লী’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রতিটি দেশই পরস্পরের দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো অর্জনই এখন আর সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ভ‚-রাজনৈতিক অবস্থান ও সামগ্রিক ভ‚-মন্ডলীয় বাস্তবতায় বাংলাদেশের যে অপার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অন্যতম সোপান। বিগত দশকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ইতবাচক ধারায় সমুন্নত রাখতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স অনুঘটকের ভ‚মিকা পালন করেছে। আর আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মূল বাজারই হচ্ছে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য। কর্মসংস্থান ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের বিশাল কর্মক্ষেত্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। উপযুক্ত রাজনৈতিক ও ক‚টনৈতিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এ সম্ভাবনাকে বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের তাগিদ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেই সত্যই তুলে ধরেছেন। তাঁর এই বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত লাখ লাখ প্রবাসী এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আন্তরিক প্রত্যাশার কথাই উঠে এসেছে। এই সময়োপযোগী নির্দেশনার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
বৈশ্বিক ভ‚-রাজনীতি ও আঞ্চলিক দ্ব›দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন এক কঠিন ক্রান্তিকাল পার করছে। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা অনেক ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে কাজ করেও দেশের জন্য বছরে হাজার কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। আমাদের শ্রমিকরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে এসব দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথাপি বন্ধু প্রতিম মুসলিম দেশগুলোতে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের নানাবিধ হয়রানি, প্রতারনা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কর্মচাঞ্চল্যসহ লাখ লাখ শ্রমিক নিয়োগের বিশাল উদ্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগে অনাকাঙ্খিত প্রতিবন্ধকতা জিইয়ে রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়া ও সউদী আরবে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ সফল হলেও জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং স্বল্প খরচে ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক নিয়োগের বিশাল সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর জোরালো তাগিদকে একটি নতুন পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। দেশের প্রচলিত-অপ্রচলিত রফতানি পণ্যের বাজার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারিত হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন