বিশ্ব পরিস্থিতির সবচেয়ে জটিল অবস্থা সিরিয়ায়
এ অবস্থা কিভাবে সৃষ্টি হলো তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। ইতিহাস স্থানীয় রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতি আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি সব দিক দিয়ে বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি পরিস্ফুট হতে পারে। ইসলামী ধর্ম শাস্ত্রে দেখা যাচ্ছে, সিরিয়ায় শেষ যুগে এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যে একটার পর একটা সমস্যা এসে হাজির হবে। যার সমাধানে এমন দু’জন বিশ্ব বিখ্যাত কমান্ডারের প্রয়োজন হবে যাদের নাম পর্যন্ত ঘোষিত হয়েছে। প্রথমে আসবেন হযরত ইমাম মাহদী, তারপরে হযরত ঈসা (যীশুখ্রিস্ট)। তারা ইহুদি সৃষ্ট ফিতনা খতম করবেন। হযরত ঈসা সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের প্রধান মসজিদে (যা পূর্বে রোমান মন্দির ও পরবর্তীতে গির্জা ছিল) এসে হাজির হয়ে সিরিয়া এক বিশ্বের সমস্যার সমাধান করবেন। অতীতেও ইহুদি রোমান তথা পাশ্চাত্য) ফিতনায় জড়িয়ে পড়ে এবং স্রষ্টার রোষে নিপতীত হয়। যীশু খ্রিস্টের বাণীকে গ্রহণ না করায় ও তার সঙ্গে অপমানজনক ব্যবহার করায়, স্রষ্টা অলৌকিকভাবে রোমান জেনারেল টাইটাসের মাধ্যমে ইহুদি অধ্যূষিত নগরী জেরুজালেম ও ইহুদি রাজা হিরোড নির্মিত সিনাগগ ধ্বংস করেন। তদানীস্তন ইহুদি ইতিহাসবিদ খোশেফাসের তথ্য অনুযায়ী ৭০ খ্রিস্টাব্দে পাশ্চাত্যের জেরুজালেম অভিযানে এগার লাখ মানুষ নিহত হয়। যারা বেশিরভাগ ইহুদি। প্রায় এক লাখ ইহুদিকে বন্দি করে নিয়ে যায় টাইটাস পাশ্চাত্যে। তবে স্রষ্টা রোমানদেরও ছাড়েন নাই যীশুর অনুসারীদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করায় ৭৯ খ্রিস্টাব্দে রোমান শহর পম্পি ও হারকুলানিয়াস ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। অন্যায়ের শাস্তি যে পৃথিবীতে ও অলৌকিকভাবে হয়, এই সব হলো তার প্রমাণ।
মধ্যপ্রাচ্যে এখন প্রধান খেলোয়াড় ইসরাইল ও তার মিত্ররা। অনেক আরব দেশই এখন ইসরাইলী কোয়ালিশনের প্রকাশ্য ও গোপন অংশীদার। ইসরাইলী কোয়ালিশন এখন তুরস্ক, ইরান, লেবানন প্রভৃতি দেশকে চাপের মুখে রেখেছে। তুরস্কের এরদোগান সরকার উৎখাত হওয়া থেকে কোনভাবে রক্ষ পেলেও আবার যে বিপদের মুখোমুখি হবে না, তা বলা যাচ্ছে না। ইরাক ও লিবিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাস খুবই মর্মান্তিক। সাদ্দাম ও গাদ্দাফির উৎখাত ইহুদি কোয়ালিশনকে আরও শক্তিশালী করেছে। লিবিয়া ও লেবানন নিয়ে ইহুদি কোয়ালিশন নতুন খেলা শুরু করেছে। লিবিয়ায় সিআইএ এজেন্ট জেনারেল হাফতার ট্রিপলিভিত্তিক লিবিয়ার সর্ব জনমান্য সরকারকে উৎখাতে ইসরাইলী কোয়ালিশনের মদদ পাচ্ছে। হাফতারকে মদদ প্রদান একটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম অথচ এর পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
চীন রাশিয়া ইরানের নৌ-মহড়া হয়ে গেল ভারত মহাসাগর তথা ওমান উপসাগরে। এটা পাশ্চাত্য যে একটা মেসেজ। এতে কিছুটা ভারসাম্য আসলেও, চীন ও রাশিয়ার কিছু কার্যকলাপ অগ্রহণযোগ্য। রাশিয়া কর্তৃক সিরিয়ায় ইদলিব এদেশের আসাদ বিরোধীদের উপর বিমান হামলা অগ্রহণযোগ্য। নতুন করে প্রায় আড়াইলাখ লোক এখন তুরস্কের পথে আশ্রয়ের সন্ধানে। আর চীনের কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনলেও তাদের উইঘুর ও রোহিঙ্গা নীতি মানবাধিকার বিরোধী।
ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক তৎপরতা এ অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এর অভাব বাংলাদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। অমুসলমানরা এখন ইন্ডিয়ায় যাওয়ার জন্য প্ররোচিত হতে পারে। অথচ উপমহাদেশে শান্তি খুবই প্রয়োজনীয়।
মালয়েশিয়ার সাম্প্রতিক ইসলামী সম্মেলন হয়ে গেল। এটি একটি পজিটিভ দিক। তবে বেশ কয়েকজন উঁচুস্তরের বিশ্ব মুসলিম রাজনীতিবিদ পাশ্চাত্য ও সউদী চাপে উপস্থিত হন নাই। এ দিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির তার কোয়ালিশন সহযোগী আনোয়ার ইব্রাহিমকে মঞ্চ থেকে সরাতে কসরত করছে। এতে দেশের ভেতরেই অস্থিরতা বাড়তে পারে।
সমগ্র বিশ্ব মুসলিম পরিস্থিতিতে তবুও সিরিয়া পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল। এর সমাধান ও জটিল মনে হচ্ছে।
(লেখক: ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন