বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো মানব পাচার। এটি মানবাধিকার বিরোধী জঘন্য একটি অপরাধ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানব পাচারের ক্ষেত্রে ঝুঁঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদেও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। মানব পাচারের যে পরিমাণ খবর পত্রিকায় বা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত বা প্রচারিত হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানব পাচার হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে কিছু লোক মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
শুধু বর্তমান সময়ে নয়, মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধের প্রবণতা চলমান যুগ যুগ ধরে। পবিত্র ধর্ম ইসলাম মানব পাচারকে অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ হিসেবে দেখে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানব পাচার সংশ্লিষ্ট সব ধরণের কার্যক্রম বা কাজ হারাম হিসেবে গণ্য। দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে নারী-পুরুষের অসহায়ত্বের সুযোগে বিদেশে মানব পাচার করছে পাচারকারীরা। অনেক সময় পাচারকারীরা বিভিন্ন প্রলোভনে নারী বা শিশুর অভিভাবক নিজেদের সন্তানকে স্বেচ্ছায় পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়। আর এভাবেই মানব পাচারকারীরা প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের বিশ্বাসের চরম অবমূল্যায়ন করে থাকে। পাচার হওয়া নারী ও মেয়েশিশুদের সাধারণত পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা হয়ে থাকে। এছাড়া পর্নোগ্রাফি, গৃহস্থালির কাজসহ নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, উটের জকি, অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা হয়। আর পাচার হওয়া পুরুষদের বিভিন্ন অমানবিক, অপরাধমূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যথা মাদক ও অস্ত্র পাচার, চোরাচালান ইত্যাদি কাজে বাধ্য করা হয়।
পাচারের শিকার হওয়া নারী-পুরুষ-শিশু কারো কোন স্বাধীনতা থাকে না। পাচারকারীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নারী ও শিশুদের সাধারণত যেসব কাজে নিয়োজিত করে তা কোনভাবেই (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) ইসলাম সমর্থন করে না এবং শরিয়তসম্মত তো নয়ই। পাচারকারীরা নারী ও শিশুদের সাধারণত যেসব কাজে নিয়োজিত করে এসব কাজ ইসলামে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানব পাচার শারীরিক ও মানসিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের নানা অনৈতিক কাজে নিয়োজিত করে।
মানব পাচার সম্পর্কে হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছুই নেই যে তুমি এমন ব্যক্তির সঙ্গে মিথ্যার আশ্রয় নেবে, যে তোমাকে বিশ্বাস করে।’-আবু দাউদ
ইসলাম ধর্মে পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নানবিদ অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের শাস্তির বিধান রয়েছে। মানব পাচার একটি প্রতারণামূলক কাজ। ইসলাম মানব পাচারকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছে এবং পাচারকারীদের কঠিন শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। পাচারের মাধ্যমে যারা নির্যাতিত তাদের জীবন রক্ষায় আত্মনিয়োগ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যম্ভাবী। ইসলাম মানব পাচারকারীদের ক্ষমা করে না। পাচারকারীদেও অতি অবশ্যই ইহকাল ও পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। যাতে আর কেউ পাচার না হয় সে জন্য প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। সেইসাথে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ তা’আলা অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করছ না? অথচ দুর্বল নারী, পুরুষ ও শিশুরা চিৎকার করে বলছে যে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের জালিমের জনপদ থেকে উদ্ধার করুন। আপনি আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে সাহায্যকারী পাঠান।’ -সূরা আন নিসা, আয়াত : ১৭৫
মানব পাচার সম্পর্কে ইসলামি চিন্তাবিদদের অভিমত, রাষ্ট্রিয় আইনে প্রতারণার মাধ্যমে মানব পাচারে মৃত্যুদÐ, জেল-জরিমানা, মালামাল ক্রোক করা, সামাজিকভাবে বয়কট করাসহ নানা শাস্তির বিধান রয়েছে। ভয়াবহ মানব পাচার রোধ করে সমাজের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদÐ প্রদানের যে বিধান রয়েছে তা ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। মানব পাচারের সঙ্গে যারা নানাভাবে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এখন সময়ের দাবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন