বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

যুবচিত্তের ভ্রমবিপাক ধর্ষণের জন্য দায়ী

আবদুল লতিফ নেজামী | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটণা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশবাসির জন্যে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিন সংবাদপত্রে ধর্ষণের খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই আজ ভেসে আসছে ধর্ষণের শিকার নারীদের আর্ত চিৎকার। আঘাত হানছে আকাশের দ্বারে তাদের আহাজারী এবং সর্বত্র ধ্বনীত হচ্ছে ক্রন্দনরোল। শুরু হচ্ছে সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়। অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং ধর্ষণের মতো বদভ্যাসের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। এই অপসংস্কৃতির দুষিত জোয়ারে শুধু সুস্থ সংস্কৃতিই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেনা, বরং ভেসে যাচ্ছে চিরায়ত মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ। বিপন্ন হয়ে পড়ছে যুবকদের নৈতিক মেরুদন্ড। যুবকরা পঙ্গুত্ব বরন করছে নীতি-নৈতিকতায়। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠায় নারী সমাজ নিরাপত্তাহীনতায় শংকিত। ধর্ষণের মতো হীন কাজ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশবাসি বিস্ময়ে হতাশ, হতবাক, স্তম্বিত ও ক্ষুব্ধ। তাই মনে হয় দেশ আজ ধর্ষকদের অভয়ারণ্যে ও স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। 


ধর্ষণের মতো মন্দ কাজের উল্লম্ফনে মানুষের ধারণা ধর্মীয় বিশেষ করে ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রীতি-নীতি প্রবহমান না থাকায় একশ্রেণীর যুবক চিত্তের ভ্রমবিপাকে ও আত্মপ্রবঞ্চনায় ভোগছে। বিপরীতে উচ্ছৃঙ্খল জীবনের উপসর্গগুলো যুব সমাজে ক্রমশঃ বিস্তার লাভ করার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। অবাধ স্বাধীনতার উন্মত্ত স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার মতো পশ্চিমা পর্ণগ্রাফী সংস্কৃতি ধারণ, চর্চা ও অনুশীলনে অভ্যস্ত যুবমনের ভাবতরঙ্গে বিস্ময়াবহ পরিবর্তন ঘটায় তারা ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে দ্বিধা করছেনা। তাছাড়া বিষ ফোঁরার মতো ভিসিআর, নগ্ন ও অশ্লীল নৃত্য-গীত, দেহবল্লরী প্রদর্শন,পর্ণ ও রম্য পত্র-পত্রিকা, ইউটুবে ও চলচ্চিত্রের প্রসার, বেলেল্লাপন-উচ্ছলতা, সুন্দরী প্রতিযোগিতা ও মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা প্রভৃতি যৌন আবেগপূর্ণ উপাদানগুলোর প্রভাবে কুপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলার ফলে হিতাহিত জ্ঞানলুপ্ত একশ্রেণীর লোকদের এধরনের নিন্দনীয় ও অসামাজিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যে দায়ী। যৌন ভাবোদ্দীপক এসব উপসর্গগুলো ক্রমশঃ সমাজে বিস্তার লাভ করায় বিপন্ন হচ্ছে যুব সমাজের নৈতিক মেরুদন্ড। পঙ্গুত্ব বরন করছে মন-মননে, নীতি-নৈতিকতায় ও চিন্তা-চেতনায়। বীভৎসতা, কাম ও প্রবৃত্তিপরায়ণতার নারকীয় গহবরে নিমজ্জিত হচ্ছে যুব সমাজ। ফলে তাদের দ্বারা সংঘটিত অসামাজিক কার্যকলাপ ও অপরাধ প্রবনতার সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

যৌনাশ্রয়ী সংস্কৃতিতে সৃষ্ট কুফলের যাতাকলে পীষ্ট হয়ে অবশেষে পাশ্চাত্য যখন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত, ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়েছেন এবং মুক্তির দিশা হিসেবে ইসলামী জীবন পদ্ধতি বেছে নেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছেন। যৌনতার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের সমাজবিদ, দার্শনিক ও সুশীল সমাজ ও উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠছেন। পাশ্চাত্যের সুশীল সমাজ তাদেও বক্তৃতা-বিবৃতি, লেখা-লেখিতে এবং প্রবন্ধে-নিবন্ধে অবাধ যৌনতার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে তাদের চিন্তা-ভাবনা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরতে স্বচেস্ট হচ্ছেন এবং শতাধিক বছর আগে থেকে এর প্রতিকারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তখন পাশ্চাত্যের পরিত্যক্ত অবাধ নগ্ন ও যৌনাশ্রয়ী জীবন দর্শন আমদানির কাজে আমরা যে স্বচেস্ট হচ্ছি, দেশে ধর্ষণের সংখা বৃদ্ধি তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবনতার পথ রুদ্ধ করতে এবং ধর্ষণের মতো কু অভ্যাস থেকে তরুণ-তরুণীদের বাঁচাতে সকলেরই স্বক্রিয় হওয়া কর্তব্য বলে বিবেকবান মানুষ মনে করেন। নৈতিকতা ও শালীনতার দ্বারা সদভ্যাস গড়ে তুলে এ নিকৃষ্ট অপকর্ম থেকে আমাদের তরুণ-তরুণীদের বাঁচাতে নির্মল, পবিত্র, স্বচ্ছ, নির্দোষ এবং নিজস্ব আদর্শের আলোকে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলা যেমন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তেমনি নারীর লজ্জাশীলতা, সতীত্ব, পবিত্রতা ও নারীর সম্ভ্রম-সন্মান রক্ষার খাতিরে তাদের স্বভাব প্রকৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা ও দেখা দিয়েছে। তাছাড়া যুব মনের এই অবস্থার পরিবর্তনে ইসলামের আবেগ, বিবেক ও যুক্তি বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যুবকদের মানসলোকে ও চেতনা রাজ্যে ইসলামী রুচিবোধ সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জনগণের ওপর ইসলামী আদর্শের প্রভাব অপরিসীম বিধায় ইসলাম ভিত্তিক নৈতিক শিক্ষা যুবকদেরকে স্বশিক্ষিত ও মার্জিত করে তুলতে সক্ষম এবং অপরাধ বিরোধী চেতনাকে শাণিত, উজ্জীবিত ও উদ্দিপ্ত করতে পারে অনায়াসে। এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ ও অবধারিত হয়ে উঠেছে।

ইদনিং অনেকে দেশে ধর্ষণসহ ক্রমবর্ধমান বিভিন্নমূখী অপরাধ দমনে ইসলামী আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করছেন এই ভেবে যে, ইসলামী আইনের প্রতি ধর্মগত বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধের কারণে মানূষ স্বশাসিত হয়। ইসলামী আইন ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা দৃষ্টান্তমূলক, অপরাধ প্রতিরোধক, স্বল্পমেয়াদী ও খরচবিহীন। আর বৃটিশ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত আইনভিত্তিক দেশে বিরাজমান বিচার ব্যবস্থা জটিল, দীর্ঘ মেয়াদী ও ব্যয় বহুল।
তাই মানুষকে অপরাধ প্রবনতা থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ইসলামী আইনের অবদান অনস্বাীকার্য। শুধু ইসলামী আইন ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থাই পারে অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে। তাছাড়া জনগণের ওপর ইসলামী আইনের প্রভাব অপরিসীম বিধায় ইসলামী আইন জনমনে ইসলাম ভিত্তিক নৈতিক উৎকর্ষতা সৃস্টি, জনগণকে স্বশিক্ষিত ও মার্জিত করে তুলতে সক্ষম। ইসলামী আইন মানুষের অপরাধ বিরোধী চেতনাকে শাণিত, উজ্জীবিত ও উদ্দিপ্ত করতে পারে অনায়াসে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন