জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজন। অতীতে শহর না হলেও গ্রামাঞ্চলে শিশু জন্ম গ্রহণ করলে কিংবা গাভীর বাচ্চা হলে নাড়ি কাটার জন্য ব্যবহার করা হত কচি বাঁশের ধাঁরালো মাথা। মুসলমান কেউ ইন্তেÍকাল করলে কবরের ওপর বাঁশের মাচা করে কিংবা ফাঁটিয়ে বিছিয়ে দেয়া হয়। হিন্দু হলেও মৃত্যুর পর শ্মশানে নেয়া থেকে শুরু করে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাঁশের ব্যবহার করা হয়।
স্কুল জীবনে কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচীর ‘কাজলা দিদি’ কবিতার কথা নিশ্চই মনে আছে। কবিতার লাইনগুলো, ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই’। কবির লেখা ওই কবিতার কথাগুলো ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়ে এখন শুধুই স্মৃতি। বিলুপ্ত হওয়ার পথে কবির সেই বাঁশবাগান। বর্তমানে দেশের দু’একটি এলাকা ছাড়া কোথাও বাঁশবাগান দেখা যায় না।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার স্থানীয়দের মতে, পরিকল্পনা ও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এক সময়কার ঐতিহ্যবাহী বাঁশবাগান এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। উপজেলার অধিকাংশ এলাকা এক সময় বাঁশবাগানে সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু যৌথ পরিবার ক্রমান্বয়ে ভেঙে একক পরিবার হওয়াসহ মানুষের প্রয়োজনে ও কালের বিবর্তনে বাঁশবাগান নির্মূল করে কিছু জায়গা আবাদি জমি ও বাড়িঘরে পরিণত করা হয়েছে। ফলে বাঁশবাগান আছে নামেই। আর ওইসব বাগানে তেমন বাঁশ না থাকায় এর দাম বেড়েই চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছরে যে সব বাঁশবাগান নির্মূল করা হয়েছে সে অনুপাতে নতুন বাগান করা হয়নি। যে হারে বাঁশের চাহিদা বেড়েছে সে তুলনায় উৎপাদন বাড়ছে না। স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই উপজেলায় ৯০ শতাংশ ঘর বাঁশের খুঁটির উপর নির্ভরশীল ছিল। এছাড়াও ঘরের বেড়া, চালা, অবকাঠামো নির্মাণ রান্নাঘর ও কৃষি ক্ষেতসহ পরিবারের অনেক কাজেই বাঁশের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাছাড়া শহরে পাকা ঘরবাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট নির্মাণে ছাদ ঢালাইসহ অন্যান্য কাজে বাঁশের ব্যবহার অপরিহার্র্য। অপরদিকে গ্রামে কাঁচা ঘরবাড়ি ও ঘরের উপরে তীর ও খুঁটি নির্মাণ কাজেও বাঁশের প্রয়োজন।
বাঁশ ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ৭ বছর আগেও প্রতিটি বাঁশের দাম ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে এসব বাঁশের দাম বেড়ে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা হয়েছে। এমন মূল্যবৃদ্ধির ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ ঘর-বাড়ি তৈরি করতে যেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি বেকার হচ্ছেন বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। এ পেশায় নিয়োজিত একজন শ্রমিক জানান, বর্তমানে যে দামে বাঁশ কিনতে হয় তাতে কোনোকিছু তৈরির পর বাজারে নিয়ে বিক্রি করে লাভ হয় না। ফলে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা বøকের উপ-সহকারি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আমার বøকে বেশ কিছু বাঁশ ঝাড় রয়েছে। কিন্তু যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার ব্যাপকহারে গঠিত হওয়ায় বসত বাড়ীর জন্য বাঁশঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। অন্যান্য ফলের বাগানের মত বাঁশ ঝাড় সংরক্ষণের জন্য সরকারি সহযোগীতা দেয়া হলে লোকজন বাঁশের বাগান করতে আগ্রহী হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন