শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ইট ভাটায় অমানবিক ‘শিশুশ্রম’

ধ্বংস হচ্ছে কৃষিজমি ও পরিবেশ

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

সূর্যের আলো পুরোপুরি উঠার আগেই ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী সাকিব, সোহাগ, রিয়াজ, ঝুমুর, ইমন, শিপন, রাশেদসহ আরও অনেক শিশু শ্রমিক ইট টানার কাজ শুরু করে দিন শেষে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার ইট বহন করে প্রতিদিনই। বিনিময়ে টাকা দিয়ে কি করবে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে রিয়াজ জানি না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। পারিবারিক অভাব-অনটনের শিকার হয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে শিশুরা ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করছে।

ঝুমুর (৯) ও ইমন (৮) তারা দুইজনেই ভাই বোন কেবলই শুরু করেছিল স্কুলে যাওয়া কিন্তু বেশি দিন নয় অজ্ঞাত কারণে বাবার সাথে সেও ইট ভাটার শ্রমিকের কাজ করছে ছাগলনাইয়া রাধানগর ইউপিস্থ পূর্ব মধুগ্রাম (বিডিআর ক্যাম্পের দক্ষিণ পার্শ্বে) মর্ডাণ ব্রিক ফিল্ড এ। সাকিব (১১), সোহাগ (১২) নয় এমন আরও অনেক শিশুরা কাজ করছে ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নে পূর্ব মধুগ্রাম এলাকায় অবস্থিত মেসার্স এমবিএস ব্রিকস কোম্পানি নামের একটি ইট ভাটায়। শিপন (১৩), রাশেদ (১১) প্রতিদিন সকাল ৭ টায় থেকে রাত পর্যন্ত ইট টানার মত ভারি কাজ করে যাচ্ছে।

ইট ভাটার মালিক পক্ষ ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন’ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করে শিশুশ্রম করিয়ে যাচ্ছে। কতটা পালন করেছে তা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ বছরের কম বয়সী এমন অনেক শিশুরা কাজ করছে দিব্বিতে। যে হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা তার পরিবর্তে অল্প বয়সী সাকিব, সোহাগ, ঝুমুর, ইমন, শিপন, রাশেদর মত শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছে ইট তৈরির মতো কঠিন কাজ। শুধু ছেলে শ্রমিক নয় রয়েছে কিছু মেয়ে শ্রমিকও যাদের বয়স ১২ এর নিচে।

জানা যায় ইট পরিবহণের মতো এমন ভারী কাজ করতে গিয়ে অনেক শিশুকেই নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্মক আহত হতে হয়। আহত বা অসুস্থ হলে তাদের নেই কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা, খোঁজ নেয় না ভাটা মালিক পক্ষ। যদিও এমবিএস ব্রিকস মালিক (মো. জিন্নাহ), মর্ডান ব্রিকস মালিক (মোজাম্মেল হক) ও কামাল এন্ড সন্সের মালিক (কুয়েতি কামাল হোসেন) এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের ইট ভাটায় কোন শিশু শ্রমিক নেই।

অপরদিকে ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন ৬ নং পাঠাননগর ইউনিয়নে বেড়ে উঠেছে নামে বেনামে ইট ভাটা। এদের নেই কোন ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বিএসটিআই অনুমোদন ও জেলা প্রসাশকের অনুমতি। স্থানীয়রা জানান, কৃষিজমি নষ্ট ও পরিবেশের ক্ষতি করে ইট তৈরি এবং উর্বর ফসলি জমির উপরের অংশ দিয়ে ইট বানানো বন্ধ করতে হবে। ইট তৈরির নামে প্রতি বছর হাজার হাজার একর জমির উপরের উর্বর মাটি পুড়ে বিনষ্ট করছে। শুধু উর্বর জমি বিনষ্ট নয়, ইটভাটা থেকে যে দূষিত গ্যাস ও তাপ নির্গত হয় তা আশে-পাশের জীবজন্তু, গাছ-পালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটায়। ইট ভাটার জন্য অনেক সময় গাছে কোনো ফলই ধরে না, বা ধরলেও তা অকালে ঝরে পড়ে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে একসময় এই ইউনিয়নে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাবে, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ব্যাহত হবে।

এ বিষয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া তাহের বলেন, যদি কোন ইট ভাটায় এমন শিশুশ্রম দেখা যায় তবে সেই ভাটার বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনুমোদনহীন ইট ভাটার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন