শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

প্রতি বছর অনাবাদি থাকছে শত শত বিঘা কৃষিজমি

দামুড়হুদায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে জমির টপসয়েল

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : প্রতি বছরের ন্যায় এবারো শুষ্ক মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবাধে বিক্রি হচ্ছে কৃষিজমির টপসয়েল। ফলে বিপুল পরিমাণ জমি উর্বরা শক্তি হারিয়ে অনাবাদি ও খানা-খন্দে পরিণত হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গর্ত, ডোবা ভরাট, নিচুজমি উঁচু করতে ও বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক ইটভাটায় ইট তৈরিতে এসব মাটি ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য যে মাটি ব্যবহার হয় তার সিংহভাগই ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি বা টপসয়েল। কার্তিক মাস থেকে শুরু করে জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ৬-৭ মাস যাবৎ চলে এ মাটি কাটার মহৌৎসব। কৃষকের দারিদ্র্যতা, অজ্ঞতা ও অসচেনতাকে পুঁজি করে এবং জমি মালিকদেরকে নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে এক শ্রেণীর দালাল চক্র এসব জমির মাটি কেটে নিতে সহায়তা করছে। সূত্রে জানা গেছে, এলাকার অনেক ট্রাক্টর মালিক নিজেরা এবং দালালদের মাধ্যমে এসব কৃষিজমির মাটি কিনে ট্রাক্টরযোগে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠ থেকে শত শত ট্রাক্টর, ট্রাক ও পাওয়ার টিলারে মাটি বোঝাই করে কেটে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে জমির মালিক প্রতি গাড়ি মাটির মূল্য বাবদ পাচ্ছে দেড় থেকে ২শ’ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা। দালালরা পাচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। ট্রাক্টর মালিকরা মাটি কাটার স্থান থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে প্রতি ট্রলি মাটি বিক্রয় করছে সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায়। কোনো কোনো জমির মালিক নগদ টাকার লোভে আবাদি জমি থেকে ২-৩ ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। কৃষিবিদদের মতে, কৃষি জমির উপরিভাগের স্তর থেকে ৯ ইঞ্চি গভীরতার মাটিতেই নানা প্রকার পুষ্টি ও জৈব উপাদান থাকে যা গাছ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। আর এ স্তরেই বাস করে কৃষকের বন্ধু বলে পরিচিত কেঁচো। এই কেঁচোরা তাদের খাদ্য গ্রহণের জন্য নিচের মাটির ক্রমাগত উপরে তোলার ফলে কৃষি জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। মাটি কাটার ফলে এই কেঁচো ও নানারকম উপকারী কীটপতঙ্গ মাটির সাথে উঠে পড়ে। তাই কৃষি জমির এ অংশের মাটি কেটে নেয়ার ফলে জমির উর্বরা শক্তি হারিয়ে যায়, যা পূরণ হতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৮ বছর সময় লেগে যায়। আবার বেশি গভীর করে মাটি কাটার ফলে জমিতে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে ঐ জমিতে ফসল ফলানো যায় না। একটি জমি থেকে গভীর করে মাটি কাটার ফলে বিশেষ করে তার চারপাশের জমিগুলোও ভূমি ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এঁটেল মাটি দিয়ে ইট তৈরি ভালো হয় বলে ভাটা মালিকদের কাছে এই মাটির চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। অপরদিকে এঁটেল মাটিতেই সবরকম ফসল ভালো হয়। তাই এধরনের মাটি কাটার ফলে সর্বনাশ হচ্ছে আবাদি জমির। অনেক ক্ষেত্রে ভাটা মালিকরা আবাদি জমিতে পুকুর তৈরি করে দেয়ার শর্তে জমি মালিকদের সাথে চুক্তি করে। উপরের মাটি কেটে নেয়ার পর নিচের বালুর স্তর বেরিয়ে পড়লে কৌশলে সেখান থেকে সরে পড়ে। ফলে ঐ জমিতে আর পুকুর কাটা হয় না। তাতে একদিকে জমির মালিক যেমন আবাদি জমি হারায় অপরদিকে পুকুরও তৈরি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটে এবং জমি মালিকরা প্রতারিত হন। উপজেলায় বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটার সবগুলোতেই এই মাটি দিয়ে ইট তৈরি হয়। তাতে করে প্রতি বছর প্রায় দেড় শতাধিক বিঘা আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। প্রতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিপুল পরিমাণ আবাদি জমির ক্ষতি হলেও এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেই। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, আবাদি জমির উপরিভাগের স্তরের ৯ ইঞ্চি গভীরতার মাটিতেই সিংহভাগ পুষ্টি থাকে। এই মাটি কেটে নেয়ার ফলে কৃষিজমি পুষ্টিশূন্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সমস্ত কৃষি জমির উর্বরা শক্তি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে ৬/৭ বছর সময় লেগে যায়। সচেতন মহল মনে করেন, জমির উপরিভাগের মাটি বা টপসয়েল কেটে নেয়ার ফলে আবাদি জমির যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে সে ব্যাপারে জমি মালিকদেরকে সচেতন করা ও আইন প্রয়োগ করে এ মাটি কাটা বন্ধ না করা গেলে এর ফলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন