নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আস্থা নেই। থেমে নেই জেল, জুলুম, হুলিয়াও। সম্ভাব্য সব প্রার্থীর মাথায় মামলার পাহাড়। কারাবাস এড়াতে তাদের নিয়মিতই ছুটতে হচ্ছে আদালতে। এমন বৈরী পরিবেশেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
আগামী ২৯ মার্চ ভোটের দিন নির্ধারণ করে চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। তার আগেই সরকারি দল তাদের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। সিটির ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ শিবিরে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। কিছুটা পরে হলেও মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নৌকার প্রার্থী ঠিক হয়েছে। এখন নগরবাসীর কৌতুহল কে পাচ্ছেন ধানের শীষ।
বিএনপির নেতারা জানান, গতকাল সোমবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত। এরপর দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ৫৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবে হাইকমান্ড। মেয়র পদে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে সবুজ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে অনেক আগে। ধানের শীষের টিকিট পাওয়ার এই দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করও।
প্রার্থী নিয়ে কলহ বিরোধে আওয়ামী লীগ কিছুটা বেকায়দায় থাকলেও বিএনপি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ঐক্যবদ্ধ, বলছেন দলের নেতারা। প্রার্থী যেই হোক ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন সবাই। নির্বাচনকে ঘিরে ওয়ার্ড পর্যায়ে তথা তৃণমূলে বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকেরা চাঙ্গা হয়ে উঠছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের নেতারা বলছেন, চরম বৈরী পরিবেশে জেনেও আন্দোলনের অংশ হিসাবে নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত বলেও জানান তারা।
টানা প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এই দীর্ঘ সময়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। পুলিশ আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হামলায় পঙ্গু হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। হুলিয়া মাথায় ঘর-বাড়ি ছাড়া শত শত নেতাকর্মী। অনেকে এখনও কারাবন্দি। দলের মহানগর থেকে শুরু করে থানা, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট পর্যায়ের নেতাদের নামেও রয়েছে একাধিক মামলা। আর আন্দোলনের অংশ হিসাবেই স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে নামছেন তারা।
বিএনপির চরম আপত্তি আছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম নিয়েও। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) উপনির্বাচনে ইভিএম জালিয়াতির মাধ্যমে বিএনপির বিজয় কেড়ে নেয়ার অভিযোগ করেন দলের নেতারা। ঢাকার দুই সিটির মতো চট্টগ্রামেও ইভিএম এ ভোটগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে ইসি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রাম সফর করেন। দলের নেতাদের সাথে মতবিনিময়ের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেন তিনি। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার মেহেদীবাগের বাসায় মহানগর নেতাদের সাথে দফায় দফায় নির্বাচনের প্রস্তুতি আর কৌশল নিয়ে কথা বলেন। তিনিও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান দলের নেতারা।
আজ নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে নগর বিএনপির বিশেষ সভায় কাউন্সিলর পদে কারা প্রার্থী হতে চান তাদের একটি তালিকা তৈরী করা হবে। ওই তালিকা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে। জানা গেছে, মেয়র পদে নগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ আরও অনেকে দলীয় মনোনয়ন চান। পেশাজীবী নেতাদের কেউ কেউ মনোনয়ন দৌড়ে সামিল হচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আন্দেলনের অংশ হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির চসিক নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন মিলে দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে তারা আর কত নিচে নামতে পারে তা দেখার জন্য আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং নির্বাচনমুখী দল হিসাবে বিএনপি চসিক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মেয়র পদে দলের মনোনয়ন চান জানিয়ে তিনি বলেন, দল সিদ্ধান্ত দিলে নির্বাচন করবো। নিজে মনোনয়ন না পেলে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবো। সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করও মেয়র পদে মনোনয়ন চান জানিয়ে বলেন, দল সিদ্ধান্ত দিলে প্রার্থী হবো। প্রার্থী না হতে পারলে দলের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
১৯৯৪ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। ২০০০ সালে নির্বাচনে বিএনপির বর্জনের মুখে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় মেয়র হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ২০০৫ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে ফের পরাজিত হন মীর নাছির। তবে ২০১০ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে বিএনপির মেয়র হন এম মনজুর আলম। সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে মনজুর আলমকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন