বিদ্রোহীরা নাছোড়বান্দা! আওয়ামী লীগের শুধুই বিদ্রোহী প্রার্থীরাই নন। দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত বিতর্কিতরাও চান লড়াই হোক ‘ওপেন’। কেউ বাদের তালিকায় পড়তে নারাজ এবং অনড়। একক কাউন্সিলর প্রার্থিতা নির্ধারণের লক্ষ্যে সমঝোতার চেষ্টায় দলীয় নেতারা যখন-যেখানেই সভা-মিটিং করেছেন সেখানেই স্লোগান উঠেছে ‘ওপেন চাই- ওপেন করতে হবে’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের ঘোষিত তালিকা অনুসারেই মনোনয়ন প্রাপ্তরা ছাড়া বিদ্রোহীদের সরে দাঁড়ানোর জন্য কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘কড়া’ নির্দেশের কোনোই পরোয়া করছেন না দলের বিদ্রোহীরা। আবার বিতর্কিতদের ব্যাপারেও দলের সিনিয়র নেতারা বলতে গেলে নির্বিকার। যদিও তৃণমূলে এবং এলাকাবাসীর মাঝেও চলছে জোরালো আলোচনা-সমালোচনা। এলাকাওয়ারি গ্রুপিং, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং লিডার, চাঁদাবাজি, দায়িত্বপালনে ব্যর্থতা, মাদক ও জুয়াড়ি কানেকশনসহ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত হওয়া প্রার্থীর সংখ্যা এবার ডজনেরও বেশি।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছেই। বিতর্কিত এবং বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের পেছনে শক্তি ও সমর্থন যুগিয়ে দলের অভ্যন্তরে ‘যত নেতা তত গ্রুপ’ এ মুহূর্তে জোরালো তৎপর। বিদ্রোহী প্রার্থীদের থামাতে তাদেরকে নিয়ে আজ (রোববার) নির্ধারিত দলের মহানগর বর্ধিত সভাটি শুক্রবার রাতে বাতিল করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ চট্টগ্রামে দলের বর্ধিত সভা এবং মেয়র প্রার্থী রেজাউল ও সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে। গতকাল রাত অবধি এ নিয়ে বিভিন্নমুখী তৎপরতা এগিয়ে চলে দলের ভেতরে।
এদিকে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের মাঠ থেকে সরাতে রাজি করানো অথবা দলীয় মনোনয়নে পরিবর্তন আনা- এই দুইটি বিকল্প নিয়ে ‘সমঝোতা ও আপসরফা’র সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কেননা আসন্ন চসিক নির্বাচনের জন্য ঘোষিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুযায়ী আজ (রোববার) প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আর আগামীকাল ৯ মার্চ চূড়ান্ত প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মাঝে ভোটের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এরফলে চসিক কাউন্সিলর পদে একক মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র্র এবং চট্টগ্রামের সিনিয়র ও মধ্যম সারির নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরে টেনশন, আন্তঃকোন্দল-কলহ আর কৌতূহল তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
এরআগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চসিক নির্বাচন পরিচালনায় হাইকমান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ‘সমঝোতা প্রচেষ্টা’র সভাটি তুমুল হট্টগোল, বিভিন্ন নেতার নামে পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিশৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত পন্ড হয়ে যায়। মাঝ পর্যায়ে বৈঠক থেকেই বেরিয়ে যান মোশাররফ। সেই সভায় গিয়েও বিদ্রোহীরা ‘ওপেন চাই, ওপেন চাই’ স্লোগান তোলেন। এরপর থেকে দলের একক প্রার্থিতা নির্ধারণের বিষয়টি আও জটিল আকার ধারণ করেছে।
একদিকে দলের বিদ্রোহীগণ অপরদিকে বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে জটিল পরিস্থিতির মুখে নৌকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য বড়সড় বিপত্তি তৈরি হয়েছে বলে দলের কয়েকজন তৃণমূল নেতা জানান। কেননা ভোটের মাঠে এহেন দলীয় বিভক্তি ও গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমান সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবার মনোনয়ন-বঞ্চিত হয়েও তিনি মাঠে-ময়দানে, সভা-সমাবেশে ছুটছেন দলীয় মনোনীত প্রার্থী রেজাউলকে নিয়ে। হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তও মাথা পেতে নিয়েছেন।
কিন্তু মহানগর, থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ে নাছিরের সমর্থকদের মাঝে ভেতরে-বাইরে হতাশা-অসন্তোষ আর ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। তাছাড়া নাছির গ্রুপের হিসেবে পরিচিত অনেকেই কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে সেই ক্ষোভ-অসন্তোষ আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। দলের মহানগরে নাছির ছাড়াও ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী’ গ্রুপ, ছালাম গ্রুপ, বিএসসি গ্রুপ, ডা. আফছারুল আমীন গ্রুপ এবং দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে রয়েছে আরও বিভিন্ন গ্রুপ এবং উপগ্রুপ। ৪১টি ওয়ার্ড এবং ১৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরসহ ৫৫ জন কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সমর্থন বা মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। চসিকের বর্তমান ১৯ জন আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতা ও সমর্থিত কাউন্সিলর এবার দলীয় সমর্থন হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জনই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন