শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভোটারের আগ্রহ তলানিতে

টানা ছুটি আর করোনাভাইরাসের ধাক্কা প্রার্থীদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারে মাঠ গরমের চেষ্টা করলেও তাতে ভোটারদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপিডা. শাহাদাত হোসেনসহ ৬ মেয়র প্রার্থী মাঠে। দলবল নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন ৫৫টি কাউন্সিলর পদে ২১৭ জন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। তবে তাতে ভোটারদের তেমন সাড়া মিলছে না। এ মুহূর্তে নগরবাসী ব্যস্ত করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রার্থীদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ। ভোটের আগে টানা ছুটি এবং করোনা নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে ভোটাররা কেন্দ্রমুখী হন কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

এ অঞ্চলে এখনো কোন রোগী শনাক্ত না হলেও পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার শেষ নেই। অজানা আতঙ্ক ভর করেছে সব শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও করোনার ধাক্কা পড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নেমেছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কায় ব্যবসায়ী, আমদানিকারকরা। এমন পরিস্থিতিতে সিটির ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষ নির্বিকার।

বিগত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচনের পর ওই বছরের ৬ আগস্ট মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথম সাধারণ সভা হয়। সে হিসাবে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ আছে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মেয়াদের পরেও করা যায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন (ইসি) তড়িগড়ি করে ভোটের আয়োজন করেছে। ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ধার্য্য করা হয়েছে। তার আগে টানা তিনদিন সরকারি ছুটি। ভোটের দিনসহ চারদিনের টানা ছুটির মধ্যে ভোটার পাওয়া যাবে কী না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে ভোট পেছানোর দাবি উঠলেও তাতে পাত্তাই দিচ্ছেনা ইসি। তার ওপর যোগ হয়েছে করোনা আতঙ্ক।
কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোট নিয়ে তাদের আগ্রহ রীতিমত তলানিতে। তারা বলছেন, ইসি জোর করে এ ভোট চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছেন, এমনিতেই ইসির ওপর মানুষের আস্থা নেই। তার ওপর এমন সময়ে ভোটের আয়োজন মানুষের মধ্যে কোন উৎসাহ নেই। গেল ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে সারা দেশে করোনা মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি চলতে থাকে। অথচ আতঙ্কের মধ্যেই ইসি চসিক নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে। দেশে করোনা আক্রান্ত ৩ জন শনাক্ত হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। এর পরদিনই চসিকে ভোটের প্রচার শুরু হয়। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সংক্রমণ এড়াতে সতর্কতা হিসেবে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। একইসাথে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সমাবেশ, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি স্থগিত করে দেয়। অথচ চট্টগ্রামে তার উল্টোচিত্র। ভোটের প্রচারে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা সভা-সমাবেশে ব্যস্ত।

সরকার করোনা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু করা হয়েছে আক্রান্তদের জন্য আইসোলেটেড ইউনিট। সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগে খোলা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম। নগরবাসীকে সচেতন করতে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। সিটি মেয়র থেকে শুরু করে নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ১৪ জন মহিলা কাউন্সিলরও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন কমিটিতে রয়েছেন, সেখানেও তাদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। অথচ দলের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মেয়র নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। আর কাউন্সিলরদের সবাই এবারেও প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমে গেছেন। ফলে তাদের দুই দিকে সময় দিতে হচ্ছে।

নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সর্মথকরা দলবল নিয়ে ভোটারদের বাসা-বাড়ি যাচ্ছেন। এতে ভোটারদের অনেকে বিরক্ত-বিব্রত। প্রার্থীদের পেছনে দীর্ঘ মিছিলে ব্যাপক লোক সমাগম হচ্ছে। যদিও প্রচারণার শুরুতে নৌকার প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ধানের শীষের ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, প্রচারে তারা করোনার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেবেন। একজন চিকিৎসক হিসাবে শাহাদাত হোসেন ভোটের প্রচারে করোনা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজও করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, এ সময় ভোটের আয়োজন করার আগে ইসির আরো চিন্তাভাবনা করা দরকার ছিলো। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, সতর্কতা হিসাবে জনসমাগম এড়িয়ে যেতে। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটের প্রচারে বিষয়টি মাথায় রাখতে পারেন। বড় জমায়েত কিংবা পথসভার বদলে তারা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে গণসংযোগ করতে পারেন। প্রার্থীদের পেছনে বিশাল শোডাউন না করলেও চলে। ভোটাররা যাতে ত্যক্ত-বিরক্ত না হন সে বিষয়টিও প্রার্থীদের ভাবতে হবে।

ভোট নিয়ে নগরীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতেও তেমন সারা নেই। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জে কয়েক জন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, সামনে মাহে রমজান, ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তার ওপর করোনার ধাক্কা পড়েছে সার্বিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ী, আড়তদাররা। তাদের ভোট নিয়ে ভাবনার ফুরসৎ কই।
তবে চসিক নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, করোনা নিয়ে ভোট পেছানোর কোন চিন্তা-ভাবনা এখনও নেই। নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন