এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন হবে টানা ছুটির মধ্যে। এর আগে কয়েকবার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয় ঘোর বর্ষায়। তখন নগরবাসী পানিবদ্ধতা ঠেলে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েছিল। এবার ভোটের দিনসহ টানা চার দিনের ছুটিতে ২০ লাখ ভোটারের কত অংশ নগরীতে থাকবেন আর কত অংশই বা ভোটকেন্দ্রমুখী হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ছুটির ফাঁদে ভোটে শেষ পর্যন্ত ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া হয় কীনা তা নিয়েও সরব আলোচনা সবার মুখে মুখে।
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা জাতীয় দিবসের ছুটি। তারপর দুইদিন শুক্র ও শনি সরকারি ছুটি। টানা ছুটির মধ্যে ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের দিনও থাকবে সাধারণ ছুটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই ইসির কারণে নির্বাচন ব্যবস্থার উপর ভোটারদের আস্থা তলানিতে। আবার ভোটও হচ্ছে বিতর্কিত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে। তার উপর টানা ছুটিতে ভোটারের বিরাট অংশ নগরীর বাইরে থাকবেন। ফলে ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
তফসিল ঘোষণার পর মাঠের বিরোধী বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি করা হলেও তা আমলে নিচ্ছে না কমিশন। টানা ছুটির মধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরীর জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ইসির এ গোঁ ধরা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ইসি নির্বাচনের তারিখ বদল না করে যানবাহন চলাচল বাড়ানো কিংবা ভোটের দিন আধাবেলা অফিস খোলা রাখার বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। অথচ ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন সামান্য একটি দাবির মুখে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, টানা ছুটির কারণে ভোটার উপস্থিতি কমবে এমন আশঙ্কায় ভোটের তারিখ পেছানোর দাবি করা হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনার ইসির অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে ভোটের দিন ছুটির বদলে অফিস-আদালত অর্ধদিবস খোলা রাখা এবং সীমিত আকারে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। তবে ভোটের তারিখ পেছানো নিয়ে ইসি ভাবছে না বলে জানান তিনি।
ইসির এ ভ‚মিকা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, টানা ছুটির মধ্যে চসিক নির্বাচন নিয়ে ইসির জেদাজেদি প্রমাণ করে ভোটার তথা জনমতের প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা নেই। এজন্য একদিন ইসিকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার দায়িত্ব ইসির। নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের সাথে আলাপ করেই ইসির সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা। কিন্তু এখন হচ্ছে উল্টো, ইসি রেফারি হয়ে ঠিক করে দিচ্ছে খেলা কিভাবে হবে, কে কিভাবে খেলবে।
সরকার এবং ইসি মিলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস কর দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার বড় প্রমাণ হচ্ছে ইভিএম। ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া সবার আপত্তি আছে। ইসিও একসময় বলেছিল বেশিরভাগ দল ইভিএম না মানলে তা ব্যবহার করা হবে না। শেষ পর্যন্ত ইসি তার কথা রাখেননি। ঢাকা সিটিসহ যতগুলো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে তাতে কোথাও ভোটাররা সন্তুষ্ট নন। কারণ তারা নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। ভোটারদের এমন যন্ত্রণা দেয়ার অধিকার ইসিকে সংবিধান দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের দায় এ সরকারও এড়াতে পারবে না।
বিএনপির ৪ প্রস্তাব
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চার দফা দাবি দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত এসব দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবির মধ্যে আছে- প্রতি বুথে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ভোটের তারিখ পরিবর্তন, প্রিসাইডিং অফিসারদের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার এখতিয়ার এক শতাংশে কমিয়ে আনা এবং এনআইডি যাচাই করে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশ নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী নির্বাচন সুন্দর করতে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন