শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিতর্কিত ও বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে

চসিকে আ.লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিতর্কিত আর বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগ। ৫৫টি কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন পাননি এমন ১৮ জন বর্তমান কাউন্সিলর বিদ্রোহী হয়ে গেছেন। তারাসহ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে এখন মাঠে দেড় শতাধিক বিদ্রোহী। আবার দলের সমর্থন যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকে বিতর্কিত। আওয়ামী লীগের সমর্থিত আর বিদ্রোহীদের বেশিরভাগই দল এবং দলের বাইরে নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত। তাদের মধ্যে আছেন- নিজ দলের নেতা হত্যা মামলার আসামি, মাদক ব্যবসায়ী, র‌্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।

আছেন ভ‚মি-পাহাড়খেকো, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজ হিসেবে চিহ্নিতরাও। জনপ্রতিনিধি হতে লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন পুলিশের খাতায় কিশোর অপরাধীদের গডফাদার হিসেবে চিহ্নিতদের কয়েকজনও। ভোটের প্রচার শুরুর আগেই বিতর্কিত এসব প্রার্থীরা সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন। শেষপর্যন্ত এসব বিদ্রোহীরা মাঠে থাকলে ভোটের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্রোহী ও বিতর্কিতদের নিয়ে সরকারী দলেও চলছে তোলপাড়। নির্বাচনী প্রচার শুরু হলে গৃহবিবাদ সংঘাত-সহিংসতায় রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। কাউন্সিলর পদ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তথা তৃণমূলে কলহ-কোন্দলের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে মেয়র নির্বাচনে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সোমবার এক সমাবেশে দলের সমর্থন পাওয়া বিতর্কিত প্রার্থীদের বিষয়ে বলেছেন, এরা এখনই বিতর্কিত, জনপ্রতিনিধি হলে তাদের দ্বারা জনগণ এবং দলের কী কল্যাণ হবে? বিতর্কিতদের কারা মনোনয়ন দিয়েছেন তা তিনি এবং মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের জানা নেই বলেও জানান। যারা এসব বিতর্কিতদের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন তারা দলের ক্ষতি করেছেন বলেও মন্তব্য করেন মেয়র।
এদিকে বিদ্রোহীদের বাগে আনতে দলের নেতারা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চসিক নির্বাচন সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থীসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসছেন। ওই বৈঠকে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী নির্ধারণের সর্বশেষ চেষ্টা করা হবে। আগামী ৮ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনকে সামনে রেখে এই সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে দলের নেতারা জানান।

অপরদিকে বিদ্রোহীদের মান ভাঙাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও দলের সমর্থন পাওয়া বিতর্কিতদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এতে নাখোশ অনেক প্রবীণ নেতা ও কাউন্সিলর প্রার্থী। বিতর্কিতদের ওয়ার্ডে প্রবীণ এবং গ্রহণযোগ্য অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। বিদ্রোহীদের বসিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় সমর্থন পাওয়া বিতর্কিতদেরও বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছে দলের ভেতর থেকে।

চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই কেন্দ্র থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এর পরপর নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৫ জনকে কেন্দ্র থেকে সমর্থন দেয়া হয়। তাতে নানা অপকর্মের কারণে বিতর্কিত ১৭ জন বর্তমান কাউন্সিলরকে বাদ দেয়া হয়। তবে দলের হাইকমান্ড থেকে যাদের সমর্থন দেয়া হয় তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই নানা বিতর্ক রয়েছে। দলের সমর্থন পেতে সর্বোচ্চ ৪০৯ জন নেতা-নেত্রী দলীয় ফরম জমা দেন। দলের সমর্থন না পেলেও তাদের অনেকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তাদের মনোনয়নপত্র বৈধও হয়েছে। পাহাড়তলীর একটি ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ নেতা সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহমদের বদলে নুর আলমকে দলের সমর্থন দেয়া হয়। কিন্তু সাবের আহমদও সেখানে বিদ্রোহী হয়েছেন। ইতোমধ্যে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, পতেঙ্গা, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিতর্কিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে নেমে পড়ায় সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মাঠের বিরোধী দল বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমস্যা তেমন প্রকট নয়। দলের পক্ষ থেকে ৫৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মনোনয়ন দেয়া হলেও ১৫টি ওয়ার্ডে ১৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, এরা বিদ্রোহী নন, দলের বিকল্প প্রার্থী। কোন কারণে কারও মনোনয়ন বাতিল হলে যাতে ওই ওয়ার্ডটি বিএনপির প্রার্থী শূণ্য না হয়ে পড়ে সেজন্য একাধিক প্রার্থী দেয়া হয়েছে। নগরীর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল হওয়ায় ইতোমধ্যে সেখানে অন্য একজনকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। যেসব ওয়ার্ডে এখনও একাধিক প্রার্থী আছেন তারা ৮ মার্চের মধ্যে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলেও জানান দলের নেতারা। দলের সমর্থন বঞ্চিত হয়ে যুবদল ও বিএনপির একাধিক নেতা অভিমানে দল ছেড়েছেন। দলের নেতারা জানান, নির্বাচনে মান-অভিমান ভুলে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে আগামীকাল মহানগর বিএনপির বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন