শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

ইসলামের দৃষ্টিতে কতিপয় পাঠদান পদ্ধতি

মাহফুজ আল মাদানী | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০৩ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
ঘটনা বা কিসসা-কাহিনীর মাধ্যমে শিক্ষাদান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিভিন্ন নবী রাসুলগণের অথবা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাহিনী উল্লেখ করার মাধ্যমে আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ের আলোকপাত করেছেন। যেমন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং শয়তানের ঘটনা, হাবিল এবং কাবিলের কাহিনী, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং ফেরাউনের গল্প, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরগনের বর্ণনা, আসহাবে কাহফের ঘটনাসহ আমরা বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে কোরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। ঠিক তেমনিভাবে আমরা ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা প্রদান করতে পারি। যাতে করে শিক্ষার্থীরা সহজে মনে রাখতে পারে।
কথোপকতন, প্রশ্নোত্তর, আলোচনা, উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষাদান। কোরআন হাদীস অনুসন্ধান করলে আমরা এসকল পদ্ধতির অবতারণা পাই। যেমন আল্লাহর বাণী, ‘সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী’ -(সুরা আল কাহাফ্ঃ ৩৪)। অত্র আয়াতে আমরা হিওয়ার বা কথোপকথনের মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতির শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
পূণরাবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান। একটি কথা দুই তিনবার রিপিট করার মাধ্যমে বিষয়টি গুরুত্ববহ হয়ে উঠে, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য সহজে বোধগম্য হয়। আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী থেকে এরকম অনেক উদাহরণ পাই। সাহাবায়ে কেরামগণকে বিভিন্ন সময়ে তিনি কোন কোন বিষয় বারবার আলোকপাত করে পুরোপুরি মনযোগ ও গুরুত্ব প্রদান করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত মুছাদ্দাদ থেকে বর্ণিত, মুছাদ্দাদ, বিশ্রের এক সূত্রে এ রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে অধিক বর্ণনা করেছেন যে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এরপর তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, হুশিয়ার হও! আর (সবচেয়ে বড় গুনাহ) মিথ্যা কথা বলা। এ কথাটা তিনি বারবার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বললামঃ হায়! তিনি যদি থামতেন -(সহিহ বোখারীঃ ৬২৭৪)।
কোন ছক ‎‎বা কোন কিছু অংকন করে শিক্ষাদান। ‎শিক্ষার্থীদেরকে সহজ করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ঐ বিষয়ে অংকন করে তা শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। (জ্ঞাতব্য যে, ইসলাম কোন প্রাণীর ছবি অংকন করতে সমর্থন করে না)। রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামগণকে সহজ করে বুঝানোর জন্য রেখা টেনে সরল পথের বর্ণনা দিয়েছিলেন। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশে) একটি (সরল) রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহ্র পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। এসব প্রত্যেক পথের উপর শয়তান দাঁড়িয়ে থাকে। এরা (মানুষকে) তাদের পথের দিকে আহ্বান করে। অতঃপর তিনি তাঁর কথার প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন : “নিশ্চয়ই এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথের অনুসরণ করে চলো...” (সুরাহ্ আন’আমঃ ১৬৩) আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। -(আহমাদঃ ৪১৩১, নাসায়ীঃ ১১১৭৪, দারিমীঃ ২০২, মিশকাতুল মাসাবিহঃ ১৬৬)।
মনযোগ আকর্ষণ বা কোন বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার মাধ্যমে শিক্ষাদান। সেটা হতে পারে শ্রোতাকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে। যেমন, আমি কি তোমাদেরকে এই বিষয়ে বলবো না? তোমরা কি এই বিষয়ে জানো? এই রকম প্রশ্ন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পুরোপুরি মনযোগ আকর্ষণ করে শিক্ষাদান। যাতে করে শিক্ষার্থীর পুরো মনযোগ পাঠদানের উপর মনোনিবেশ থাকে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা কি জানো চোগলখোর কে? সকলে বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি লোকজনের মধ্যে বিবাদ ও হানাহানি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের একের কথা অপরের কানে লাগায় -(আদাবুল মুফরাদঃ ৪২৬)। এভাবে শিক্ষার্থীর মনযোগ আকর্ষণ করে শিক্ষাদান ফলপ্রসু হয়ে উঠে।
একজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীর সাথে যেসব আচরণ করা দরকার, তন্মধ্যে- শিখানো কার্যক্রমে শিক্ষক রুঢ় আচরণ পরিহার করে সব সময় হাসি খুশি থাকতে হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থীর অপরাগতায় শাস্তি প্রদানের মানসিকতা পরিহার করে সব সময় শিক্ষার্থীর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে হবে। সাথে সাথে শিক্ষার্থীর যোগাযোগের কোন দূর্বলতা আছে কি না সে বিষয়ে যতœশীল থাকতে হবে। শিক্ষক যথাসম্ভব আনন্দদায়ক পাঠ উপকরণ ব্যবহারে সচেষ্ঠ থাকবেন এবং শিখানো কার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করবেন। শিক্ষককে পাঠ যাচাই কালে শিক্ষার্থীর সাথে সহনশীল আচরণ করবেন, শিক্ষার্থী সঠিক বলতে না পারলেও শিক্ষার্থীর উন্নয়ন হচ্ছে এমন মনোভাব পোষণ করে প্রশংসা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কোরআনের বাণী, ‘আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো -(সুরা আলে ইমরানঃ ১৫৯)। আমরা কখনও শিক্ষার্থীর প্রতি রাগান্বিত বা কর্কশভাবে শিক্ষা দিতে যেতে পারি না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আমরা যাতে সুন্দর ও সহজভাবে শিক্ষাপ্রদান করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, প্রকৃত মানুষ করতে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
hossain ahmad ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:০৯ পিএম says : 0
ইসলামিক ডিজিটাল উপকরন দরকার
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন