গত রোববার ও সোমবার মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসায় পর্যবেক্ষক মহলে উৎসাহ দেখা দিলেও মঙ্গলবার সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি জানায়, ইতালিতে করোনভাইরাসে প্রাণহানি ফের বেড়ে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি উত্তরাঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গণনা করা হয় গত মঙ্গলবার ৭৪৩ এবং সোমবার ছিল ৬০২ জন। ইতালিতে অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছ্যে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, মাত্র এক মাসে এই সংক্রমণে ৬ হাজার ৮২০ জন মারা গেছে। মঙ্গলবার নিশ্চিত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ১৭৬ জন। তবে ইতালি কেবল গুরুতর লক্ষণযুক্ত লোকদের পরীক্ষা করেছে। নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান বলেছেন যে, সংক্রামিত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত ১০ গুণ বেশি ছিল।
অ্যাঞ্জেলো বোরেলি লা রিপাবলিকা সংবাদপত্রকে বলেন, ‘প্রতি দশজনের মধ্যে একটি ঘটনার নথিভুক্তিকরণ বিশ্বাসযোগ্য অনুপাত’। তিনি বিশ্বাস করেন যে, প্রায় ৭ লাখ লোক সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে।
সর্বশেষ তথ্যটি এমন একটি দেশের জন্য হতাশা হিসেবে আবিভর্‚ত হয়েছে যে দেশটি দুই সপ্তাহ ধরে লকডাউনে রয়েছে, স্কুল, বার এবং রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল এবং ইতালীয়রা অপরিহার্য প্রয়োজনের জন্য তাদের বাড়ি ছাড়তে নিষেধ করেছিল।
সোমবার সরকার দেশের প্রয়োজনীয় সরবরাহের সরবরাহ চেইনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে না করা সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিল এবং সর্বশেষ পরিসংখ্যানের পরে প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্প কন্টি লোকদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য পূর্বের সর্বোচ্চ সর্বাধিক থেকে ৩,০০০ ইউরো (৩,২২২ ডলার) জরিমানা করেছে।
সংক্রামন এড়ানোর জন্য প্রত্যন্ত ভিডিও লিঙ্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই আমাদের ভ‚মিকা নিতে হবে’। ‘যদি প্রত্যেকে নিয়ম মানেন তবে তারা কেবল নিজের এবং তাদের প্রিয়জনদের সুরক্ষা করবেন না, তবে তারা পুরো জাতিকে এই জরুরি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম করবে’।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সউদী সরকার এ বছরের হজ বাতিল ঘোষণা করেছে বলে যে গুজব ছড়িয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানে নিযুক্ত সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত নওয়াফ বিন সাআদ আল-মালিকি। উর্দু নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হজ বাতিল করার সিদ্ধান্ত যদি নেয়া হয়, তাহলে সময় মতো হজযাত্রীদের করণীয় কী হবে, সে সম্পর্কেও আগাম জানিয়ে দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। গত ২ ফেব্রুয়ারি সউদী সরকার করোনাভাইরাসের কারণে ওমরাহ ও পর্যটন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল। এরপর ৪ মার্চ একই কারণে ওমরার জন্য অর্থ গ্রহণও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে সউদী গেজেট কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সউদী আরব অস্থায়ীভাবে ওমরাহ পালন স্থগিত করেছে এবং সউদী নাগরিকসহ অস্থায়ী বাসিন্দাদের মসজিদে গমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। টুইটে বলা হয়েছে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সউদী সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, করোনাভাইরাস নিরীক্ষণের জন্য কমিটির সুপারিশ অনুসারে নাগরিক ও বাসিন্দাদের ওমরাহর অর্থ গ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সউদী আরবও রয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আক্রান্ত রয়েছে প্রায় ৭০০ এরও বেশি।
সউদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুল আলী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে বিদেশি রোগীর অবস্থা দ্রæত অবনতির দিকে যাচ্ছিল এবং সোমবার রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মঙ্গলবার একদিনে ২০৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৭ জনে পৌঁছেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল তালাল আল-শালাব জানিয়েছেন, কারফিউর প্রথম দিনেই সারা দেশে তার বাস্তবায়ন চলছিল। সউদী বাদশাহ সালমান করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দু’দিন আগে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে ২১ দিনের জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছেন।
দূরত্ব বজায় রেখে মন্ত্রিসভার বৈঠক করলেন মোদি
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মেনেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতজুড়ে শুরু হওয়া ২১ দিনের লকডাউনের প্রথম দিন বুধবার দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ দৃশ্য দেখা যায়। নরেন্দ্র মোদির দিল্লির বাসভবনে বৈঠকের এমন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়।
যাতে দেখা যায়, মন্ত্রিসভার সদস্যরা একে অপরের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসেছেন। মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২১ দিনের জন্য ভারতকে লকডাউন ঘোষণা করেন। মোদি বলেছিলেন, তিনি নিজেও এই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবেন। প্রায় আধাঘণ্টার ভাষণে মোদি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারটা কেবল রোগীদের জন্য। এটা ভুল। সামাজিক দূরত্ব সকলের জন্য, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর জন্যও।
করোনায় নিউজিল্যান্ডে জরুরি অবস্থা জারি
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে এক মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছে নিউজিল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন দেশজুড়ে ওই জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
নিউজিল্যান্ডে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এখন ২০৫। স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাত থেকে এক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে স্কুল এবং সব ধরনের অফিস-আদালত।
জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন পার্লামেন্টকে বলেন, ‘আজ মধ্যরাত থেকে ভাইরাসকে তার গতিপথে সামনে আগানো বন্ধ করতে আমরা চার সপ্তাহের জন্য আত্মগোপনে চলে যাব’।
তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে কেউ কোনো ভুল করবেন না, তা হলে কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে।
চীনে দ্বিতীয় দফা করোনা প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা
চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, মহামারী বাড়ার সাথে সাথে চীনে দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ‘সম্ভাবনা প্রবল’ এবং ‘অনিবার্য’ও। রাষ্ট্র পরিচালিত গ্রোবাল টাইমসের মতে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকর এবং বিদেশ থেকে আগত লোকদের জন্য পর্যাপ্ত কোয়ারানটাইন ব্যবস্থা না থাকাই নতুন সঙ্কটের মূল কারণ। পূর্বের কেন্দ্রস্থল হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান ছাড়া অন্যসব এলাকা দুই মাসের জন্য আবদ্ধ থাকার পরে গত মঙ্গলবার রাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়ার সময় এ সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচ দিনের শূন্য সংক্রমণের পরে উহানে এদিন প্রথম একজন চিকিৎসক স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে। সূত্র : এএফপি, ডেইলি মেইল, লা রিপাবলিকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন