শঙ্কা-উদ্বেগ তো আছেই। সেগুলোকে ছাপিয়ে এক রকমের উৎসবও ছিল। লম্বা বিরতির পর বুন্দেসলিগার মাঠে ফেরার উদযাপন কী দুর্দান্তভাবেই না করল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। শালকেকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে রাঙিয়ে রাখল লিগ পুনরায় শুরুর দিনটা। সিগনাল-ইদুনা পার্কে ম্যাচে দাপুটে ফুটবলে ৪-০ ব্যবধানে জিতেছে ডর্টমুন্ড।
দুই মাস আগে যেখানে শেষ করেছিলেন, গতপরশু ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন আর্লিং হলান্ড। গোল করলেন রাফায়েল গেররেইরো ও তোরগ্যান হ্যাজার্ড। এই জয়ে শিরোপাধারী বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে ব্যবধান ১ পয়েন্ট নামিয়ে আনল সবশেষ ২০১১-১২ মৌসুমে বুন্দেসলিগা জয়ী দলটি।
করোনাভাইরাস আতঙ্ক দ‚রে ঠেলে দুই মাস পাঁচ দিন পর মাঠে ফিরল জার্মানির শীর্ষ লিগ। একই সময়ে মাঠে গড়ায় মোট পাঁচটি ম্যাচ। ম‚ল আকর্ষণ যদিও ছিল ডর্টমুন্ড-শালকে ম্যাচ ঘিরে। প্রথম ১৪ রাউন্ড শেষে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য ছিল মাত্র ১ পয়েন্টে। তবে পরের ১১ ম্যাচের দুর্দান্ত পথচলায় ব্যবধান দাঁড়িয়েছিল ১৪ পয়েন্ট। এবারে পার্থক্য বেড়ে হলো ১৭।
জানুয়ারিতে দলে আসা হলান্ডের গোলে ২৯তম মিনিটে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। বিরতির ঠিক আগে প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গেররেইরো। দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিট ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে জালে বল পাঠান আজার। আর ৬৩তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে হলান্ডের দারুণ পাস পেয়ে সাইড-ফুট ফ্লিকে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোলটি করেন গেররেইরো।
দিনের অন্য ম্যাচে অগসবুর্গকে তাদেরই মাঠে ২-১ গোলে হারিয়েছে ভলফসবুর্ক, হফেনহাইমের মাঠে ৩-০ গোলে জিতেছে হের্টা বার্লিন। ফরটুনা ডুসেলডর্ফ-পাডেরবর্ন ও লাইপজিগ-ফ্রেইবুর্ক ম্যাচ ড্র হয়েছে। ২৫ ম্যাচে ১৭ জয় ও চার ড্রয়ে বায়ার্নের পয়েন্ট ৫৫। এক ম্যাচ বেশি খেলা ডর্টমুন্ডের ১৬ জয় ও ছয় ড্রয়ে পয়েন্ট ৫৪। ৩ পয়েন্ট কম নিয়ে তিনে লাপজিগ। আটে নেমে যাওয়া শালকের পয়েন্ট ৩৭।
মাঠে দুই দলের খেলোয়াড়রা বাদে সবার মুখে ছিল মাস্ক, অনেকের হাতে গøাভসও দেখা যায়। এমনকি গোল উদযাপনেও ছিল বাড়তি সতর্কতা, কনুইয়ে কনুই মিলিয়ে অভিনন্দন জানায় একে অপরকে। জার্মানির লিগ থেকে কিছুটা মিলল আভাস- লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগ ও সেরি আ ফিরলে, সেগুলোও বুঝি এমনই হবে!
দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কে লিগ’ ফিরেছে গত সপ্তাহে। তুলনাম‚লক কম পরিচিত কিছু লিগ, যেমন বেলারুশ ও নিকারাগুয়ায় কখনও বন্ধই হয়নি। কিন্তু দুই মাসের মধ্যে এই প্রথম কোনো শীর্ষ সারির লিগ মাঠে ফিরল। লম্বা এই বিরতির কারণ সবার জানা, বিশ্বব্যাপী আঘাত হানা কোভিড-১৯ মহামারী।
দর্শকশ‚ন্য গ্যালারি, নেই সেই চেনা ঝাঁঝ। সবুজ আঙিনায় পাশাপাশি চলল লড়াই আর সামাজিক দুরত্ব নীতির প্রয়োগ। এমনকি সাইড বেঞ্চেও খেলোয়াড়রা ছিলেন পরস্পরের থেকে দ‚রে। পাডেরবর্নের সঙ্গে গোলশ‚ন্য ড্রয়ের পর ফরটুনা ডুসেলডর্ফের কোচ উয়ি রোসলার বলেন, ‘দিনটা ছিল কেমন যেন অদ্ভ‚ত। আমি আবেগপ্রবণ মানুষ, খেলোয়াড়কে দুই হাতে জড়িয়ে ধরতে চাই, আজকে অবশ্যই তা করতে পারিনি।’
ডর্টমুন্ডের কোচ লুসিয়েন ফাভরে বলেন, ‘কোনো শব্দ ছিল না। সবকিছু নীরব। গোলে কেউ শট নিল, কেউ দারুণ একটা পাস দিল কিংবা গোল হলো, কিন্তু বোঝার উপায় নেই আবহ দেখে। পুরো বিষয়টা খুব, খুব অদ্ভুত।’
লাইপজিগের মাঠে ১-১ ড্রয়ের পর ফ্রেইবুর্ক কোচ ক্রিস্টিয়ান স্ট্রেইচ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দর্শকরা মাঠে বসে ম্যাচ দেখতে পারল না, অবশ্যই এটা কষ্টের... এভাবে অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। তবে এমন পরিস্থিতিতে, দর্শক না থাকার কারণে যে খেলার মান একটু কমবে, তেমনটা আমি ভাবিনি এবং আমরা তা দেখিওনি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন