অসাধারণ গুণে ভরপুর সুপরিচিতি ধনে বা ধনিয়া একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ। আমরা এ ধনে পাতাকে স্যালাড এবং রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শুধু ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজেই এর গুণাগুন শেষ হয়ে যায় না। এ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী।
অধিকাংশ মানুষ ধনে পাতার উপকারিতা না-জেনেই নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করে আসছে। এতে রয়েছে ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল, ৬ ধরনের অ্যাসিড, ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য ফাইবার, ম্যাংগানিজ আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামি ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামি ‘কে’, ফসফরাস, ক্লোরিন এবং প্রোটিন। তাই ধনে পাতাকে সাধারণ কিছু ভাবার কোনো কারণ নেই।
ধনে পাতা রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি রূপচর্চায়ও দারুণ কাজ দেয়। প্রাকৃতিক বিøচ হিসাবে ধনে পাতা দারুণ কার্যকর। যাঁদের ঠোঁটে কালো দাগ আছে তাঁরা রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধনে পাতার রসের সাথে দুধের রস মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। এভাবে এক মাস লাগালে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে আর ঠোঁটও কোমল হবে।
ধনে পাতা খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়।
হজমে উপকারী, যকৃতকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ধনে পাতা খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য ধনে পাতা বিশেষ উপকারী। এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা কমায়। ল্ফ ধনে পাতায় থাকা অ্যান্টি-সেপটিক মুখের আলসার নিরাময়েও উপকারী, চোখের জন্যও ভালো।
ঋতু¯্রাবের সময় রক্তসঞ্চালন ভালো হওয়ার জন্য ধনে পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা আয়রণ রক্তশূন্যতা সারাতেও বেশ উপকারী।
ধনে পাতার ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ‘এ’ ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে।
এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা বাতের উপশমে কাজ করে।
ধনে পাতা স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং মস্তিষ্কের নার্ভ সচল রাখতে সাহায্য করে।
ধনে পাতার ভিটামিন ‘কে’ অ্যালঝাইমার রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।
ধনে পাতার সিনিওল এসেনশিয়াল অয়েল এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যার মধ্যে অ্যান্টি-রিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি-আথ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার বা ত্বকের অসুস্থতা (একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন) সারাতে সাহায্য করে। ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে তাই ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
ক্যালশিয়াম আয়রন এবং কলিনার্জিক বা অ্যাসেটিকোলিন উপাদান মিলে আমাদের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে।
অ্যান্টি-হিস্টামিন উপাদান থাকায় অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
কারও মুখে যদি দুর্গন্ধ হয় বা অরুচি লাগে তাহলে ধনে পাতা ভাজা করে বোতলে ভরে রাখুন। মাঝে মাঝে চিবিয়ে খান মুখে দুর্গন্ধ থাকবে না।
কারও মাথা ব্যথা হলে ধনে পাতা গাছের রস কপালে লাগান। মাথাব্যথা কমে যাবে।
ধনে পাতা চিবিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি মজবুত হয় এবং দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
সতর্কতা :- কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধনে পাতা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ধনে পাতা বেশি খেলে চোখের দৃষ্টির ক্ষতি হতে পারে। শ্বাস রোগের ক্ষতি করে। অবশ্য আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ ধনে পাতা সেবন করি তা স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করে না। অতিমাত্রায় রস সেবন করলে ক্ষতির কারণ হয়।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন