যদিও নাগরিকত্ব অধিকারের আকারে মুসলমানদের প্রতিকার দেয়া হয়নি, পর্তুগালের ইসলামিক অতীতের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক পুনঃস্থাপনের পথ পরিষ্কার করছে। মোস্তফা আবদুস সত্তারের মতো পর্তুগিজ লেখক অ্যাডালবার্তো আলভেস আরবী থেকে উদ্ভ‚ত পর্তুগিজ শব্দের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। নিছক কৌত‚হল হিসাবে শুরু হলেও তা দশকের দীর্ঘ প্রকল্পে রূপান্তরিত হয়েছিল যা ১৯৩৩ সালে আরবি উৎসসহ ১৯ হাজারেরও বেশি পর্তুগিজ শব্দ এবং অভিব্যক্তি অভিধানে প্রকাশিত হয়েছিল।
আলভেস ব্যাখ্যা করেন, ‘আমি খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে বৈরাগ্য এবং আন্দালুসি সভ্যতা সম্পর্কে বিস্মৃতকরণের ‘জটিলতা’ কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিলাম’। তার লক্ষ্য ছিল সাধারণ ঐতিহ্যের ওপর জোর দেয়া এবং মুসলমানদের দীর্ঘ উপেক্ষিত উপস্থিতি এবং দেশের পরিচয় এবং ইতিহাসে তাদের অবদানকে দৃশ্যমান করা। আলভেস দেখাতে চেয়েছিলেন যে ‘অন্যরাও’ আসলে নিজেরই অংশ ছিল।
আলভেস বিশ্বাস করেন যে, ইউরোপে এখনও ইসলাম থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক উত্তরাধিকারটির স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি, যেহেতু ইউরোপীয় ইতিহাস লেখা থেকে মুসলমানদের বের করে দেয়া হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ভাঙনটিকে সংশোধন করার জন্য, আলভেস পর্তুগালের আল-আন্দালুসের প্রভাব যেমন কবিতা ও ভাষা থেকে সংগীত, গালিচা-বুনন এবং প্যাস্ট্রি, মিনার-আকৃতির চিমনি পর্যন্ত নথিভুক্ত করে গত ৩৫ বছর কাটিয়েছেন। তার প্রচেষ্টা ইউনেস্কো থেকে ২০০৮ সালে আরব সংস্কৃতির শারজাহ পুরষ্কারের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়।
পর্তুগিজ সাম্রাজ্য কীভাবে আরবদের প্রতিষ্ঠিত ন্যাভিগেশনাল সায়েন্সের উপর নির্ভরশীল তা উল্লেখ করে আলভেস ব্যাখ্যা করেন যে, মুসলমানরা যে উত্তরাধিকার সূচনা করেছেন তা কল্পনার চেয়েও বিশাল। এমনকি ভাস্কো দা গামা, যার মহাকাব্যিক ভ্রমণটি পর্তুগালে এত ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়, ভারতে পৌঁছানোর জন্য একজন মুসলিম পাইলটের উপর নির্ভর করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
তবে পর্তুগালে ইসলামিক ঐতিহ্যকে যেভাবে অনুধাবন করা হয়েছিল তার পরিবর্তন করতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিল সম্ভবত আলভেসের এই কাব্যই। আন্দালুস আমল থেকে তার আরবি কবিতা সংগ্রহ এবং পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করার সাথে সাথে সেভিলের শেষ মুসলিম শাসক এবং সর্বাধিক বিখ্যাত আন্দালুসীয় কবি আল-মুগনামিদের মতো কবিরা ‘স্থানীয়’ কবি হিসাবে পরিচিতি পেতে চলেছেন। এই বছর জাতীয় গ্রন্থাগারের লিসবনে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনী আলভেস এবং আল-মুতামিদ উভয়ের কাজের প্রশংসা করেছে।
আলভেস বলেছেন, ‘আমি আমার জীবনের একটি বড় অংশ মহান কবি ও কিং আল-মুতামিদ ইবনে আব্বাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় উৎসর্গ করেছি, কারণ সম্ভবত আমাদের উভয়ের বাড়ি বেজা শহরে’।
ইসলামের প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় এমন একটি অঞ্চল দক্ষিণের শহর বেজা’র নিকটে আরেকটি অগ্রণী প্রকল্প আরব-মুসলিম হানাদারের ভাবমর্যাদা বিলোপ করছে এবং পর্তুগিজ পরিচয় এবং ঐতিহ্যের একটি মৌলিক উপাদান হিসাবে ইসলামিক অতীতকে পুনরুদ্ধার করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন