বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘হানাদার’ পাল্টে ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হচ্ছে মুসলিমদের

ইসলামের ইতিহাসে পর্তুগাল-৪

আল-জাজিরা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

যদিও নাগরিকত্ব অধিকারের আকারে মুসলমানদের প্রতিকার দেয়া হয়নি, পর্তুগালের ইসলামিক অতীতের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক পুনঃস্থাপনের পথ পরিষ্কার করছে। মোস্তফা আবদুস সত্তারের মতো পর্তুগিজ লেখক অ্যাডালবার্তো আলভেস আরবী থেকে উদ্ভ‚ত পর্তুগিজ শব্দের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। নিছক কৌত‚হল হিসাবে শুরু হলেও তা দশকের দীর্ঘ প্রকল্পে রূপান্তরিত হয়েছিল যা ১৯৩৩ সালে আরবি উৎসসহ ১৯ হাজারেরও বেশি পর্তুগিজ শব্দ এবং অভিব্যক্তি অভিধানে প্রকাশিত হয়েছিল।

আলভেস ব্যাখ্যা করেন, ‘আমি খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে বৈরাগ্য এবং আন্দালুসি সভ্যতা সম্পর্কে বিস্মৃতকরণের ‘জটিলতা’ কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিলাম’। তার লক্ষ্য ছিল সাধারণ ঐতিহ্যের ওপর জোর দেয়া এবং মুসলমানদের দীর্ঘ উপেক্ষিত উপস্থিতি এবং দেশের পরিচয় এবং ইতিহাসে তাদের অবদানকে দৃশ্যমান করা। আলভেস দেখাতে চেয়েছিলেন যে ‘অন্যরাও’ আসলে নিজেরই অংশ ছিল।

আলভেস বিশ্বাস করেন যে, ইউরোপে এখনও ইসলাম থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক উত্তরাধিকারটির স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি, যেহেতু ইউরোপীয় ইতিহাস লেখা থেকে মুসলমানদের বের করে দেয়া হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ভাঙনটিকে সংশোধন করার জন্য, আলভেস পর্তুগালের আল-আন্দালুসের প্রভাব যেমন কবিতা ও ভাষা থেকে সংগীত, গালিচা-বুনন এবং প্যাস্ট্রি, মিনার-আকৃতির চিমনি পর্যন্ত নথিভুক্ত করে গত ৩৫ বছর কাটিয়েছেন। তার প্রচেষ্টা ইউনেস্কো থেকে ২০০৮ সালে আরব সংস্কৃতির শারজাহ পুরষ্কারের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়।

পর্তুগিজ সাম্রাজ্য কীভাবে আরবদের প্রতিষ্ঠিত ন্যাভিগেশনাল সায়েন্সের উপর নির্ভরশীল তা উল্লেখ করে আলভেস ব্যাখ্যা করেন যে, মুসলমানরা যে উত্তরাধিকার সূচনা করেছেন তা কল্পনার চেয়েও বিশাল। এমনকি ভাস্কো দা গামা, যার মহাকাব্যিক ভ্রমণটি পর্তুগালে এত ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়, ভারতে পৌঁছানোর জন্য একজন মুসলিম পাইলটের উপর নির্ভর করেছিলেন বলে মনে করা হয়।

তবে পর্তুগালে ইসলামিক ঐতিহ্যকে যেভাবে অনুধাবন করা হয়েছিল তার পরিবর্তন করতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিল সম্ভবত আলভেসের এই কাব্যই। আন্দালুস আমল থেকে তার আরবি কবিতা সংগ্রহ এবং পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করার সাথে সাথে সেভিলের শেষ মুসলিম শাসক এবং সর্বাধিক বিখ্যাত আন্দালুসীয় কবি আল-মুগনামিদের মতো কবিরা ‘স্থানীয়’ কবি হিসাবে পরিচিতি পেতে চলেছেন। এই বছর জাতীয় গ্রন্থাগারের লিসবনে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনী আলভেস এবং আল-মুতামিদ উভয়ের কাজের প্রশংসা করেছে।

আলভেস বলেছেন, ‘আমি আমার জীবনের একটি বড় অংশ মহান কবি ও কিং আল-মুতামিদ ইবনে আব্বাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় উৎসর্গ করেছি, কারণ সম্ভবত আমাদের উভয়ের বাড়ি বেজা শহরে’।

ইসলামের প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় এমন একটি অঞ্চল দক্ষিণের শহর বেজা’র নিকটে আরেকটি অগ্রণী প্রকল্প আরব-মুসলিম হানাদারের ভাবমর্যাদা বিলোপ করছে এবং পর্তুগিজ পরিচয় এবং ঐতিহ্যের একটি মৌলিক উপাদান হিসাবে ইসলামিক অতীতকে পুনরুদ্ধার করছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Shafiqul Islam ১৯ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
ইতিহাস থেকে মোরা জানলাম ,মুক্তির পথ হল ইসলাম।এই কথাগুলো আমলে পরিণত করার এখন আর সময়।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৯ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
বর্তমান পর্তুগালের বেশির ভাগ ভূমি পাঁচ শ বছরেরও বেশি সময় ইসলামী শাসনাধীন ছিল। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকান মুসলিম শাসকরা আধুনিক স্পেন ও পর্তুগালের বিরাট অংশ জয় করে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, আরবিতে যাকে ‘আল-আন্দালুস’ বলা হতো।
Total Reply(0)
Md Riyadh Hasan Jewel ১৯ জুন, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
এখন যে পর্তুগাল ও স্পেন নামের দু'টি দেশ, তার বেশিরভাগ এলাকা ৮ম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলমানরা শাসন করতো। আল-আন্দালুস নামে পরিচিত এ অঞ্চলটি ওই সময় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কেন্দ্রস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে চর্চা হতো বিজ্ঞান, স্থাপত্য ও চিত্রকলার। মুসলিম শাসনামলে এখানে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেয়া হতো। ঘারব আল-আন্দালুস নামে পরিচিত দক্ষিণ পর্তুগালে এই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা তুলনামূলক শান্তিতে বসবাস করতো।
Total Reply(0)
Jabair Ahammad ১৯ জুন, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
এখন পর্যন্ত পর্তুগাল দেশটি মুসলিম শাসনামলের স্মৃতিচিহ্নে ভরতি - স্থাপত্যকলা থেকে শুরু করে পর্তুগিজ ভাষা ও সঙ্গীতে।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ১৯ জুন, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
দক্ষিণ স্পেনে ইসলামী যুগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি রয়েছে। কর্ডোভা মসজিদ ও গ্রানাডার আল-হামরা প্রাসাদ ইসলামী স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। পর্তুগালেও ইসলামী শাসনামলের অনেক কীর্তি-স্থাপত্য টিকে আছে। পাঁচ শ বছরের দীর্ঘ ইসলামী শাসন পর্তুগিজ সমাজ ও ভাষায় গভীর ছাপ রেখে গেছে। ইনশায়াল্লাহ, সেই ভাবমর্যাদা আবার ফিরে আসবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন