মুসলমানি বা খতনা একজন পুরুষের জীবন ঘনিষ্ট স্বভাব কর্ম। পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত চামড়া পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে তা কেটে বাদ দেওয়াকেই বলা হয় খতনা বা মুসলমানি বা সারকামসিশন।
প্রয়োজনীয়তা ঃ যৌনাঙ্গের নানা রোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য মুসলমানি দেওয়া খুবই প্রয়োজন। ধর্মীয় কারণে মুসলিম জাতি, খৃস্টানরা মুসলামনি দিয়ে থাকে। তাছাড়া ফাইমোসিস বা প্যারাফাইমোসিস রোগ হলে মুসলমানি দিতে হয়।
ফাইমোসিস ঃ পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া যদি মূত্র নালেিক এমনভাবে ঢেকে রাখে যাতে প্রস্রাব ভালো মতো বের হতে পারে না। ফলে শিশুরা বা পুরুষটি জ্বালা যন্ত্রণায় ভোগতে থাকে। এতে পুরুষাঙ্গের মাথা ফুলে যায়। এভাবে বেশিদিন চললে প্রস্রাবের নালীতে ইনফেকশন দেখা দেয়। এবং বৃক্ক বা কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে বলে ফাইমোসিস। এই অবস্থা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে অবশ্যই খতনা দিতে হবে।
প্যারাফাইমোসিস ঃ পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া উল্টে শক্ত হয়ে গেলে এই চামড়াকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নড়াচড়া করানো যায় না। ফলে লিঙ্গের মাথা ফুলে যায়। জ্বালাযন্ত্রণা করে। রক্ত সঞ্চালনে বিরাট অসুবিধা হয়। এই অবস্থাকে বলা হয় প্যারাফাইমোসিস। এ অবস্থায় মুসলমানি দেওয়া খুবই দরকার হয়। তাছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য যেকোনো ধর্মের পুরুষরা মুসলমানি দিতে পারেন।
উপকারিতা ঃ পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা সাদা পদার্থ যাকে স্মেগমা বলা হয়, যা জমে লিঙ্গের মাথা অপরিস্কার ও দুর্গন্ধময় করে তোলে। এই স্মেগমাই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি করে। তাই মরণ ব্যাধি এ রোগ থেকে বাঁচতে মুসলমানি দেওয়া দরকার। তাই মুসলিম ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার নেই বললেই চলে। এর প্রধান কারণ খতনা বা মুসলমানি। অনেক দেশী-বিদেশী চিকিৎসকের জরিপের মাধ্যমে তারই সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে। মুসলমানি করালে লিঙ্গের মাথায় বিভিন্ন রকমের ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মুসলমানির প্রধান সুবিধা হলো এর ফলে লিঙ্গের মাথায় তরল রস জমে নোংরা অবস্থার সৃষ্টি করে তা থেকে লিঙ্গ রক্ষা পায়। ফলে বিভিন্ন প্রকার রোগও বাসা বাধতে পারে না। মুত্রনালীর প্রদাহ শিশুদের বেশি হয়। এতে কিডনির সমস্যা, জ্বর ও রক্তের ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। মুসলমানি দিলে এসবের ঝুঁকি কমে যায়। বিভিন্ন তথ্য মাধ্যম থেকে জানা যায় মরণ ব্যাধি এইডস এবং যৌন রোগ প্রতিরোধে মুসলমানি বিরাট একটি ভূমিকা পালন করে। তাই আমরা সবাই সতর্ক হয়ে আমাদের ছেলে শিশুদের ছোট বয়সেই মুসলমানি করিয়ে দিব।
কখন খতনা করা যাবে না ঃ পুরুষাঙ্গের জন্মগত ত্রুটির কারণে। বাচ্চা জন্মের পর লিঙ্গ দেখলে যদি বুঝা যায় যে খতনা হয়ে জন্ম হয়েছে। এ অবস্থায় খতনা বা মুসলমানি দেওয়ার দরকার হয় না। আবার কারও কারও প্রস্রাবের ছিদ্র যথাস্থানে না থাকলেও খতনা বন্ধ রেখে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খতনা করে ফেললে ছিদ্রটা যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
খতনা দেওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা ঃ আমাদের গ্রামে প্রায়ই হাজাম দ্বারা মুসলমানি বা খতনা করানো হয়। এটি একটি পুরাতন রীতি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তখনকার দিনে তত উন্নত ছিল না। ফলে হাজামরাই মুসলমানির কাজ সমাধা করতেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নতির পরে দেখা যাচ্ছে এতে শিশুদের নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বা হচ্ছে। মুসলমানি দেওয়ার পরে কোন কোন শিশুর বা খতনাকারীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। যা মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে বা মৃত্যুও ডেকে আনে। তাই মুলমানি দেওয়ার আগে জন্মগত রক্তক্ষরণ সমস্যা আছে কিনা তা জানা খুবই প্রয়োজন। এসময় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কী সমস্যা হতে পারে ঃ *চামড়া কাটার পর রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয় না। *হাজাম বা অনভিজ্ঞতার কারণে অতিরিক্ত বা কম চামড়া কেটে ফেলা। *লিঙ্গের সংবেদনশীল মাথা কেটে ফেলা। তাই অভিজ্ঞ সার্জন ডাক্তারদের নিকট মুসলমানি বা খতনা করানো উচিত।
মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন