শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বেহাল সড়ক, দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বর্ষায় বৃষ্টিপাতে রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা কোনো নতুন বিষয় নয়। এবারের বর্ষায়ও রাস্তা-ঘাটের দুর্দশার পুরনো চিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামের সড়কগুলো শোচনীয় অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বৃষ্টি যতটা না ক্ষতি করছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের খোঁড়াখুঁড়ি। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতি বছর ৩১ মে’র মধ্যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না। সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চিরাচরিত খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বর্ষা মৌসুমেও অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে অলিগলি থেকে শুরু করে অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তা-খোঁড়া মাটি পাশে রাখায় একদিকে যেমন রাস্তার বড় অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে বৃষ্টির পানিতে কর্দমাক্ত হয়ে যানবাহন ও পথচারিদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই একটু বৃষ্টিতে অনেক রাস্তা তলিয়ে যায়। এর মধ্য দিয়েই যানবাহন চলাচল করায় সড়কের বিটুমিন উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়। সড়কের এই বেহাল দশা নিয়ে শুরু হয় সিটি করপোরেশন ও সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ। যুগের পর যুগ দোষারোপের এই অপসংস্কৃতি চললেও এ থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি অমীমাসিংতই থেকে যায়।
শুধু রাজধানী বা চট্টগ্রামের সড়কগুলোই নয়, এবারের বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু করে ব্যাপক এলাকার সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনগণের শত শত কোটি টাকায় নির্মিত সড়কগুলো পানিতে ভেসে গেছে। তবে বন্যায় সড়কের ক্ষতি যতটা না হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ করার ফলে। যারা সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজে সারা বছর নিয়োজিত থাকে, তাদের জন্য এ ক্ষতি আনন্দের হতে পারে। এর কারণ, সড়কের ক্ষতি তাদের বাণিজ্যের দ্বার খুলে দেয়। জনগণ জানে, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের সাথে যারা থাকেন, এর মাধ্যমে তাদের পকেট ভারি হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকা এই শ্রেণী লুটেপুটে খেলেও তাদের কিছু করার থাকে না। সড়কে স্বচ্ছন্দে ও নির্বিঘেœ চলাচলের তাদের যে অধিকার, তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয় নির্বাচনের আগে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ব্যাপারে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা সম্পাদনের কথাও বলেছেন। তাদের এ কথার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। চিরায়ত অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় বর্ষায়ই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এক প্রতিষ্ঠান খুঁড়ে কোনোরকমে মাটি চাপা দিয়ে যেতে না যেতেই আরেক প্রতিষ্ঠান খোঁড়া শুরু করে। খোঁড়ার পর মাটি চাপা দিয়ে চলে গেলেও তা সেভাবেই পড়ে থাকে। সংস্কার আর করা হয় না। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আছে, অতিগুরুত্বপূর্ণ কোন কারণ ছাড়া বর্ষায় রাস্তা খোঁড়ার অনুমোদন দেয়া যাবে না এবং খুঁড়লেও ২৮ দিনের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ করে পুনরায় রাস্তা মেরামত করতে হবে, সেখানে মাসের পর মাস তা বেহাল অবস্থায়ই পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে বৃষ্টির পানিতে খোঁড়া রাস্তাগুলো তলিয়ে গর্ত হয়ে অনেকটা মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়। এসব গর্তে যানবাহন পড়ে বা আটকে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে। অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে। রাজধানীকে ‘ক্লিন সিটি, গ্রিণ সিটি’ করার কথা নগরবাসী অহরহ শুনছে। বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বরং বৃষ্টি ও নর্দমার পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সড়কগুলো কাটাছেঁড়া করার ফলে পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে পড়ছে। নগরীর পরিষেবা বৃদ্ধি করতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িসহ উন্নয়ন কাজ করতেই হবে, তবে এ কাজগুলো অসময়ে কেন করতে হবে? বর্ষার সময়টাকেই কেন বেছে নিতে হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর বোধকরি কারো অজানা নয়।
মানুষের যাতায়াত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। সরকারের তরফ থেকেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে সড়ক পথ নির্বিঘœ ও মসৃণ করার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সড়ক উন্নয়নের কাজ হচ্ছে ঠিকই, তবে সেগুলো টেকসই হচ্ছে না। কিছুদিন আগে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের এক অংশ কার্পেটের মতো উঠে যাচ্ছে। এত অর্থ ব্যয়ে নির্মিত চার লেনের অবস্থা যদি এমন হয়, তবে বাকিগুলোর অবস্থা কি তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নেই। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিন রাস্তা-ঘাটের পরিস্থিতি দেখতে ছুটে বেড়ান। যেখানে অনিয়ম দেখতে পান, তা নিরসনে তাৎক্ষণিক নির্দেশও দেন। তারপরও সড়কগুলোর বেহাল দশা কাটছে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারেও তার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কারণ জনগণের অর্থে নির্মিত সড়ক দিয়ে যদি জনগণই চলতে না পারে, তবে এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের জন্য। এ নির্দেশ যথাযথ। কংক্রিট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করলে তা স্থায়ী ও টেকসই হয়। প্রশ্ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ প্রতিপালিত হবে কিনা? আমরা শুধু বলতে পারি, বর্ষায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা, বিদ্যমান রাস্তা ঠিক রেখে নির্মাণ ও সংস্কারে উন্নতমানের উপকরণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা সংশ্লিষ্টদের অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। জনগণের অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন